প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
হাজীগঞ্জে কিশোর সাইমুন হত্যার মূল হোতা র্যাবের হাতে আটক
গেলো সপ্তাহে টক অব দ্যা ডিস্ট্রিক্টে পরিণত হয়েছিলো হাজীগঞ্জে এক বাড়ি আর গ্রামের মধ্যকার মারামারির ঘটনা। সেই মারামারির মধ্যে পড়ে মারাত্মক আহত কিশোর সাইমুন (১৩) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একদিন পর মারা যায়। সেই সাইমুন হত্যা মামলার মূল হোতা ও অন্যতম আসামী ইকবাল হোসেনকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সিইপিজেড এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম। ইকবাল বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা। তিনি হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মকিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ও জিতু মিয়ার ছেলে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে বিএনপি থেকে ইকবাল হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়।
|আরো খবর
ইকবাল আটকের বিষয়ে র্যাব-৭-এর ফেসবুক পেইজে প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায়, নিহত ভিকটিম সাইমুন (১৫) হাজীগঞ্জ থানাধীন মকিমাবাদ এলাকায় তার পরিবারের সাথে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল। গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার সময় সাইমুম এশার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে তাদের বাসা থেকে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়। মসজিদ কমপ্লেক্স সংলগ্ন কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কের রাস্তার উপর পৌঁছালে সে দেখতে পায় অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জন ব্যক্তি দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা, কিরিচ, হকিস্টিক, ইট এবং কাচের বোতল দিয়ে দুই পক্ষে দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত। তারা বাজারে দোকানপাট ভাংচুর ও মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে এবং বিভিন্ন পথচারীদের আক্রমণ করত ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করতে থাকে। এ সময় ভিকটিম সাইমুম দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় ইকবাল হোসেন এবং তার অপরাপর সহযোগীরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাইমুমকে কোপাতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হলে সাইমুম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার আর্তচিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সাইমুম শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় প্রেরণ করেন। পরে ২১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাইমুম ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ১৪, তারিখ- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং, ধারা- ১৪৩/১৪৭/ ১৪৮/১৪৯/৪২৭/৪৩৫/৩০২/৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এই হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারির এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, হত্যা মামলার মূল হোতা এবং অন্যতম আসামি মোঃ ইকবাল হোসেন (৩০) চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানাধীন সিইপিজেড মোড় এলাকায় অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ২ অক্টোবর আনুমানিক বিকেল চারটায় উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ ইকবাল হোসেন (৩২), পিতা- মৃত জিতু মিয়া, সাং- মকিমাবাদ, থানা- হাজীগঞ্জ, জেলা- চাঁদপুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে উপরোক্ত নাম ঠিকানা প্রকাশ করত বর্ণিত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এছাড়াও মামলা দায়ের হওয়ার পর হতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়াতে নিজ এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিল বলে সে জানায়।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।