প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
পুলিশ প্রশাসন ঘটনার কিছুই জানে না!
মতলবে মেঘনায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ১
মতলব উত্তর উপজেলার দক্ষিণ বোরোচর এলাকায় মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হলেও আরিফ উল্লাহ সরকার (৪৫) নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন।
গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দুর্বৃত্তরা বালু উত্তোলন করতে গেলে স্থানীয় লোকজন বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয় এবং আরিফ উল্লাহসহ অন্তত ৫জন আহত হয়।
আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ আরিফ উল্লাহকে ঘটনার পরপরই চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গতকাল ২ অক্টোবর বুধবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আরিফ উল্লাহকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। গুলিবিদ্ধ আরিফ উল্লাহ সরকার দক্ষিণ বোরোচর এলাকার ইদ্রিস আলী সরকারের ছেলে। তিনি পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রফিক হাসান ফয়সালের সাথে গুলিবিদ্ধ আহতের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আরিফ উল্লার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছররা গুলি রয়েছে। এই ছররা গুলিতে সম্ভবত তাকে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী আহতের খাদ্যনালিতে ছিদ্র পাওয়া গেছে।
গুলিবিদ্ধ আরিফের মেয়ে তানজিলা আক্তার বলেন, বাবার পেটে অনেক গুলি লেগেছে। এখন কীভাবে চিকিৎসা করাবো তা জানি না। কারণ আমার বাবা একজন দিনমজুর। আমাদের দিনাতিপাত করতে কষ্ট হয়। সেখানে এতো বড় সমস্যা কীভাবে মোকাবেলা করবো আল্লাহ ভালো জানেন। আমার বাবা এলাকার সবার সাথে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
স্থানীয়রা জানান, মেঘনা নদীর বোরোচর এলাকায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম মুন্না ঢালী ও এখলাছপুর ইউনিয়ন মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি সিদ্দিকের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত রাতের আঁধারে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গেলে সিদ্দিকুর রহমান বকাউল, নাহিদ, রনি, আশরাফুল ও মাসুদের নেতৃত্বে হামলার শিকার হয়। স্থানীয় মজিব বকাউলের ছেলে নাহিদ নিজে এই হামলার সময় গুলি চালায়। এরপর থেকে সে পলাতক রয়েছে।
এখলাছপুর ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম মুন্না ঢালীর সাথে ঘটনার বিষয় কথা হলে তিনি বলেন, আমি জেনেছি আরিফ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কীভাবে তাকে চিকিৎসা করা যায় সেই বিষয়ে আমি চেষ্টা করছি। তার পরিবারের পাশে আছি। আগে আহতের চিকিৎসা করাই, তারপর বাকি বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবো। এরপর তিনি মোবাইলে আর কোনো কথা বলতে চাননি।
মতলব উত্তরের মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, সংঘর্ষের বিষয়টি আমি জানি না। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
ঘটনার বিষয়ে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যেহেতু ঘটনাটি নদী এলাকায় ঘটেছে, তাই এখন পর্যন্ত আমি বিষয়টির সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে এ বিষয়ে কেউ আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করতে চাইলে আমরা অবশ্যই পদক্ষেপ নেবো।
উল্লেখ্য, এর আগে মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের যৌথ অভিযানে গত ১০ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে বাল্কহেড ও ড্রেজারসহ ৩৫ জন এবং ২৫ সেপ্টেম্বর অপর অভিযানে ২৮ জন আটক হয়। এদের বিরুদ্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে নৌ-পুলিশ পৃথক দুটি মামলা করে।