মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

মতলব উত্তরে অসহায় পরিবারের উপর এ কেমন জুলুম!

সমাজচ্যুত পরিবারের সাথে কথা বললেই ৫ হাজার টাকা জরিমানা

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥
মতলব উত্তরে অসহায় পরিবারের উপর এ কেমন জুলুম!

এই যুগেও পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়, একঘরে করে রাখা হয়। যেনো রাষ্ট্রে কোনো আইন নেই। সমাজপতি প্রভাবশালীরা যা ইচ্ছা তাই করবে। এমন ঘটনা মতলব উত্তরে।

মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় দিনমজুর একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। ফলে ওই পরিবারের কোনো সদস্য মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারছেন না, তাদের সন্তানরাও সকালে মক্তবে আরবি পড়তে যেতে পারছে না। এমনকি প্রতিবেশীসহ স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে কথাও বলছেন না। কেউ তাদের সঙ্গে কথা বললেই ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। গত ২২দিন ধরে অসহায় এ পরিবারটি অমানবিক জীবনযাপন করছে। সমাজের কলহ নিরসন করার অজুহাতে ওই পরিবারকে এভাবেই একঘরে করে রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।

পরিবারটির একমাত্র কর্তা অটোরিকশাচালক মইজ উদ্দিন বলেন, আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে ইস্যু করে কয়েকজন মানুষ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। আমার বাচ্চাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ করেছে। আমার রিকশায় কেউ ওঠে না। এই সমাজের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বললে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার নিয়ম করেছে। জরিমানার ভয়ে কেউ আমাদের সাথে কথা বলে না। আমার সন্তানদের মক্তবে পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ এই সমাজের কারো সাথে কথা বললে আমাদেরকেও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী মইজ উদ্দিন বলেন, আমার অভাব-অনটনের সংসার। প্রায় সময়ই আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়ে থাকে। পারিবারিক সমস্যা প্রায় প্রতিটি ঘরে। এর চেয়ে জঘন্য নানান ঘটনা সমাজে ঘটে। তাই বলে কাউকে একঘরে করে রাখার আইন আছে শুনিনি। আমরা গরিব ও অসহায় বলে এই জুলুম চালানো হচ্ছে। আমি খেটে খাওয়া মানুষ। একটি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই।

সমাজের কারা আপনার ওপর এই জুলুমের নিয়ম করছে জানতে চাইলে মইজ উদ্দিন বলেন, এই সমাজ যারা চালায়, যারা বিত্তশালী, ক্ষমতাবান তারা সবাই। না হয় আমাদের অপরাধ থাকলে তারা বিচার করবে কিন্তু একঘরে করার এই জুলুম তারা করতে পারতো না।

তিনি জানান, গত ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে এ নিয়ম করে তার পরিবারকে একঘরে করে দেয়া হয়। যে কারণে ঈদের সময় সমাজের কেউ তাদের কোনো মাংস দেয়নি।

মইজ উদ্দিন বলেন, গরিব বলে সমাজ থেকে যে একটা ভাগ পাই তা থেকেও তারা আমাদের বঞ্চিত করেছে। কলিজা ফেটে যায় এই ঈদে আমি আমার সন্তানদের ১ টুকরা মাংস কিনে খাওয়াতে পারিনি। আমার বাবা-মা ঢাকায় থাকেন। শুনেছি তাদের ডেকে এনে স্বাক্ষর রেখেছে। সমাজের সবাই নাকি আমাদের একঘরে করার বিষয়ে স্বাক্ষর দিয়েছে। মিজানুর রহমান মিজান নামের একজন লোকের প্ররোচনায় আমার পরিবারকে তারা এক ঘরে রেখেছে। আমাকে তারা বলেছে সমাজের সবার স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বললে তারা নাকি আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে। এই ভয়ে এতদিন আমি কাউকে কিছু বলিনি। আমি এই জুলুমের বিচার চাই। আমি এই অত্যাচারের শাস্তি চাই। কিন্তু কে করবে তাদের বিচার? কে দেবে তাদের শাস্তি? তারাই তো এই সমাজের জমিদার।

পরিবারটিকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে স্বীকার করেন ছেংগারচর পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর বোরহান উদ্দিন।

তিনি বলেন, তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। আমি বলেছি তাদের অন্যায় থাকলে বিচার করা হবে। সমাজ থেকে বিতাড়িত করার কোনো আইন নেই। আমি তাদের ১ মাসের সময় দিয়ে এসেছি। কিন্তু ওই সমাজের লোকজন আমার কথা অমান্য করে এ কাজ করেছে।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বলেন, এটা অমানবিক ঘটনা। তারা অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিবারটি এখন কী করবে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা বলেন, কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে একঘরে করে রাখা আইন বহির্ভূত কাজ। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়