প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩, ০০:০০
![লিবিয়া থেকে মুক্তিপণ দিয়ে দেশে ফিরলো তিন বাংলাদেশী](/assets/news_photos/2023/05/01/image-32424.jpg)
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান দিনমজুর জাকির দেশে রাজের জুগালি (সহকারী) কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্বপ্ন ছিলো পরিবারের দরিদ্রতা কাটিয়ে স্ত্রী সন্তানকে ভালো রাখার জন্যে বিদেশ গিয়ে চাকুরি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর সফল হলো না তার। দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমিয়ে দুই মাস বন্দি খাঁচায় আটকে থাকার পর মুক্তিপণ দিয়ে অবশেষে সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন। জাকিরের মতো আরো অনেক বাংলাদেশী লিবিয়ায় মানব পাচারকারীর হাতে পড়ে সেখানে বন্দি খাঁচায় থেকে মানবতার জীবন কাটাচ্ছে।
এক দালালের কাছ থেকে অন্য দালাল কেনার পর লিবিয়া থেকে চোরাই পথে সাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের রাজ্য ইতালি পাচার করছে মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে। গভীর সাগরে ট্রলার ডুবে গিয়ে এই যাবৎকালে অনেক বাংলাদেশীর করুণ মৃত্যু হয়েছে, খোঁজ মিলেনি আজও তাদের।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ৯নং ওয়ার্ডের গুলিশা গ্রামের ছাত্তার মিজির ছেলে ভয়ংকর মানব পাচারকারী শরিফ মিজি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লিবিয়া নেয়ার কথা বলে এই শরিফ অসংখ্য লোককে বিদেশে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করেছে।
শরিফের নির্যাতনের শিকার হয়ে মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় অনেক বাংলাদেশীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এই ভয়ংকর মানব পাচারকারী শরিফ লিবিয়ায় যুদ্ধকালীন সেখানে গিয়ে অবস্থান করে দালালদের সাথে পরিচয় হয়। বাংলাদেশ থেকে চাকুরি দেয়ার কথা বলে মানুষ নিয়ে এক দালালের হাত থেকে অন্য দালালের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। লিবিয়া নেয়ার পর সেখানে একটি ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে ইতালি নেয়ার কথা বলে আবারও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় এই দালাল চক্র।
এই দালাল শরিফের খপ্পরে পড়ে বালিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কুমুরুয়া গ্রামের অসহায় দিনমজুর জাকির তপাদার লিবিয়া পাড়ি দেন। সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ দেয়ার কথা বলে জাকিরকে নিয়ে একটি ঘরে বন্দি করে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এই মানব পাচারকারী শরিফ মিজি। জাকিরকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে মোবাইল ও পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে জাকির দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করে। অবশেষে তার পরিবারের কাছ থেকে সেই মানব পাচারকারী শরিফ দালালের মাধ্যমে আরো এক লাখ দশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। অবশেষে জাকিরসহ তিনজন এই মানব পাচারকারী শরিফের হাত থেকে রেহাই পেয়ে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন। তারপর লোমহর্ষক ঘটনাটির বর্ণনা দেন। এই ঘটনায় মানব পাচারকারী শরিফসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করতে যাচ্ছে ভুক্তভোগীরা।