রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

পদ্মা-মেঘনায় দু মাসের অভয়াশ্রম শিথিলভাবে শেষ হচ্ছে
মির্জা জাকির ॥

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে দু মাসের অভয়াশ্রমের কার্যক্রম শিথিলভাবে শেষ হতে চলছে। এ সুযোগে অসাধু জেলেরা অনেকটা অবাধে জাটকা নিধন করছে। জানা যায়, দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাটকা রক্ষায় চাঁদপুরের মেঘনাসহ দেশের ৫টি অঞ্চলে মার্চ-এপ্রিল দু মাস সকল ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অভয়াশ্রম কার্যক্রম আগামী পরশু অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। আর মাত্র দুদিন বাকি আছে অভয়াশ্রমের সময়সীমা।

অভয়াশ্রম কার্যক্রম শুরুর পূর্বে জাটকা রক্ষা জেলা টাস্কফোর্সের সভা গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাটকা নিধন প্রতিরোধে চাঁদপুর শহরের মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ যৌথভাবে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেখা যায়, অভিযান শুরুর কিছুদিন যৌথ অভিযান কার্যক্রম ভালোভাবে চললেও পরে তা শিথিল হয়ে পড়ে। মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রতিদিন বিকেলে যৌথ বাহিনী অবস্থান না নেয়ায় মতলব উত্তর, শরীয়তপুরের কাচিকাটা, মুন্সীগঞ্জের কালিরচর এলাকার জেলেরা একত্রিত হয়ে বহর বেঁধে জাটকার খনি নামে পরিচিত হাইমচর উপজেলার চরমণিপুর এলাকায় যায়। সেখানে গিয়ে জাটকা নিধন করে ভোরবেলা আবার বহর বেঁধে ফিরে যায়। জাটকা নিধনের মদদদাতা আন্তঃজেলা জাটকা আড়তদার চক্র বহরে চলার পথের কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িকে ম্যানেজ করে জাটকা নিধনে অসাধু জেলেদের সহায়তা করে আসছে।

বহর বেঁধে জাটকা নিধন করতে দেখে স্থানীয় জেলেরাও অবাধে জাটকা নিধনে নেমে পড়ে। মেঘনার পশ্চিমে রাজরাজেশ্বর ও শরিয়তপুর এলাকার পদ্মা নদীতে, জেলার মতলব উত্তর, সদর ও হাইমচর উপজেলায় দিবারাত্রি জেলেদের শত শত নৌকার জাটকা নিধন দেখে মনে হয়, পদ্মা-মেঘনা নদীতে বুঝি অভয়াশ্রম নেই। চাঁদপুর নৌ থানার নিকটবর্তী টিলাবাড়ি এলাকার জেলেরা প্রকাশ্যে মেঘনা নদী থেকে জাটকা নিধন করে এসে লঞ্চঘাটের পাশে নৌকায় রেখে প্রকাশ্যে তা বিক্রি করতে দেখা যায়। চাঁদপুর লঞ্চঘাট হয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা তা দেখে মন্তব্য করে, নৌ থানার মাত্র ৫শ’ গজের মধ্যে যদি এভাবে জাটকা নিধন করা হয়, তাহলে জাটকা রক্ষা হবে কীভাবে? জেলার বিভিন্ন স্থানে ধৃত জাটকা স্পীড বোটে নৌ পথে, সড়কপথে পিকআপ, ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। এসব জাটকা দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চেও পরিবহন করা হয়।

এদিকে চাঁদপুর নৌ থানার ভাড়ায় চালিত স্পীডবোট চালক কুদ্দুছের বিরুদ্ধে নৌ থানাসহ প্রতিটি ফাঁড়ির জন্যে জাটকা নিধনকারী জেলে ও আড়তদারদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এক সময় অভিযানকালে নৌ পুলিশের জাল টানার শ্রমিক বর্তমানে কয়েকটি স্পীড বোটসহ বিপুল অর্থের মালিক এই কুদ্দুছ।

চাঁদপুরের কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর অভিযানে আটক বেশ ক’জন জেলে নৌ পুলিশকে টাকা দিয়ে জাটকা নিধনের বিষয়টি স্বীকার করে। যদিও এপ্রিলের শুরুতে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির মধ্যবর্তী মূল্যায়ন সভায় জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আঃ মালেক দেওয়ান স্পীডবোট চালক কুদ্দুছ টাকা নিয়ে নৌ পুলিশকে দিয়ে অসাধু জেলেদের সুযোগ করে দেয় বলে অভিযোগ করেন। সভায় উপস্থিত নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে সভায় জানান। এর আগেও একাধিকবার জেলা টাস্কফোর্সের সভায় মৎস্যজীবী নেতৃবৃন্দ কুদ্দুছের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সে দিনদিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে জানান। কুদ্দুছকে এখন জাটকা নিধনকারী জেলে ও আড়তদাররা নৌ থানার ক্যাশিয়ার হিসেবে চিনে বলে জানা যায়।

একটি সূত্র জানায়, এই কুদ্দুছকে কেন্দ্র করে নৌ পুলিশের সাথে কোস্টগার্ড ও সদর উপজেলা মৎস্য অফিসের বিরোধ চরমে পৌঁছে।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলামের সাথে। তিনি এবার সফলভাবে অভিযান করেছেন বলে জানান। সমন্বয়হীনতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, অভিযান করতে গিয়ে যখনই যে বিভাগকে চেয়েছি তখনই তাদের পেয়েছি।

নৌ পুলিশ সুপার কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য বাহিনীর সাথে আমাদের সমন্বয়হীনতার কথা মোটেও সঠিক নয়। তিনি বলেন, এবার অভিযানে সর্বোচ্চ সহ¯্রাধিক জেলে আটক হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচশত জেলেকে নিয়মিত মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। অথচ গেলো বছরে ১১১ জন জেলের সাজা হয়। এবার অভিযান অনেক বেশি হওয়ায় জাটকা রক্ষা সফল হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। নৌ পুলিশের সাথে অসাধু জেলেদের যোগসাজশের বিষযটি তিনি অস্বীকার করে বলেন, জেলা টাস্কফোর্সের সাথে সমন্বয় করে অভিযান চালানো হয়েছে। নিজেদের স্বার্থে যখন আঘাত আসে, তখন অসাধু জেলেরা এমনই ব্লেম দেয় বলে মনে করেন তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, দুই মাসে সর্বোচ্চ ৩শ’ ৭০ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে, যা অতীতের চেয়ে বেশি। এবার অভয়াশ্রম সফল হয়েছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়