মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে জাটকা নিধন, সাথে পাঙ্গাশের পোনাও
মিজানুর রহমান ॥

চাঁদপুর থেকে সড়ক ও নৌ রুটে ট্রলার, পিকআপ এবং কভার্ড ভ্যানে করে শত শত মণ জাটকা ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে পাচার হয়েছে। মার্চণ্ডএপ্রিল দুমাস নদীতে জাটকা রক্ষায় মাছ না ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কিন্তু এক শ্রেণীর জেলে আইন না মেনে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই নিয়মিত নদীতে যায় এবং জাটকাসহ অন্য মাছও তারা ধরছে। জাটকার সাথে এখন পাঙ্গাশ পোনাও নিধন এবং প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এমনকি জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মধ্যেও জাটকা নিধন বন্ধ হয়নি।

চাঁদপুর শহরসহ উপজেলা সমূহের গ্রামে-গঞ্জে হকারি করে বিভিন্ন বাজারে জাটকা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এবার নদীপথে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এবং সড়কপথে কোস্টগার্ড ও চাঁদপুর সদর থানা পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাটকা পাচার করার সময় জব্দ করা হয়। এতেই প্রমাণ হয়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন শত শত নৌকা ও ট্রলার নদীতে নামছে। তাদের নিধনকৃত জাটকা প্রচুর ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে ও হচ্ছে। এর জন্যে কর্তৃপক্ষের তদারকি ও পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবকে দায়ী করছেন মৎস্য পেশাজীবী, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জাটকা অধ্যুষিত হাইমচরের মেঘনা নদীতে অবাধে জাটকা ধরছেন জেলেরা। জেল-জরিমানার তোয়াক্কা না করেই তারা জাটকা শিকার করছেন। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা কৌশলে বিভিন্ন বাজারে এসব জাটকা বিক্রি করছেন। এখন আবার চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের আশপাশের মেঘনা নদীতে কিছু জেলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে। তাদের বড়শিতে ছোট ছোট পাঙ্গাশ পোনা ধরা পড়ায় সেই মাছ শহর এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রি করতেও দেখা গেছে।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, জাটকা বড় হলে পূর্ণাঙ্গ ইলিশে এবং পাঙ্গাসের পোনাগুলো বড় হবার সুযোগ পেলে বড় আকৃতির পাঙ্গাসে পরিণত হতো। মৎস্য বিভাগের নজর নেই সেই দিকে।

জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার একলাশপুর থেকে শুরু করে বোরোচর, আমিরাবাদ, চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, তরপুরচন্ডী, কল্যাণপুর, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের নদী এলাকা, শহরের যমুনা রোড, টিলাবাড়ি, পুরাণবাজার হরিসভা রনাগোয়াল, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দোকান ঘর, রামদাসদী খাল, বহরিয়া লক্ষ্মীপুর, হরিণা ফেরি ঘাট সংলগ্ন খাল, আখনের হাট, মেঘনার পশ্চিমে ইব্রাহিমপুর চর এলাকা এবং হাইমচর উপজেলার বিস্তীর্ণ নদী জুড়ে অগণিত জেলে নদীতে গেছে এবং জাটকাসহ অন্য মাছ নিধন করেছে।

সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মৎস্য বিভাগ তথা টাস্কফোর্সের অভিযানের ফাঁক-ফোকরে যারাই নির্বিচারে জাটকা নিধন করে চলেছে, তারা ইলিশের উৎপাদন হ্রসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে শঙ্কা মৎস্য বিশেষজ্ঞদের। সাধারণভাবে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের অপরিণত ইলিশ জাটকা নামে পরিচিত।

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নভেম্বর থেকে আট মাস নদীতে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে। ওই সময়ের মধ্যে জাটকা ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় বা মজুদ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এসবের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে জেলেদের দিয়ে নদীতে জাটকা নিধন অব্যাহত রেখেছে। রাতভর জাটকা ধরার পর চিহ্নিত কিছু লোক রাত দশটার পর এবং ভোর বেলায় জাটকা ক্রয়-বিক্রয়ে মেতে রয়েছে। জাটকার পরিমাণ বেশি হলে ট্রলারে নদী পথে ও গাড়ি দিয়ে সড়ক পথে জাটকা মাছ পাচার করছে। এই জাটকা মাছ ক্রয়-বিক্রয় করে কিছু লোক ইতঃমধ্যে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের এক প্রেসনোটে জানানো হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরার অপরাধে এবার রেকর্ড পরিমাণে জেলে আটক হয়ে কারাগারে গেছেন। বিপুল পরিমাণ জাল নৌকা ও জাটকা মাছ জব্দ হয়েছে। আরো জানানো হয়, জাটকা নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রমের শুরু থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে জেলা ও উপজেলার টাস্কফোর্স। কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে তৎপর রাখা হয়েছে। নিয়মিত অভিযান এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে ও হচ্ছে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে মেঘনা নদীতে নৌ র‌্যালি ও মাইকিং করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারিং করাসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি আদেশ পালন করা হচ্ছে কিনা তা তদারকিও করা হয়। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে কেউ জাটকা ইলিশ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, জাটকা নিধনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নানাভাবে অভিযান চলছে। মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার বড় কারণ হবে জাটকা নিধন। নিষেধাজ্ঞার দুই মাস জাটকা ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ বা বহন করলে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়