শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে ৭ মাসে ৪১ অগ্নিকাণ্ড
নূরুল ইসলাম ফরহাদ ॥

অগ্নিকাণ্ড না কমলেও কমেছে আতঙ্ক। বিগত কয়েক বছর উপজেলাবাসী অগ্নিকাণ্ড নিয়ে এক প্রকার আতঙ্কের মধ্যেই থাকতো। কারণ এখানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ছিলো না। ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে ফরিদগঞ্জে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। এতোটুকু স্বস্তি নিয়ে ফরিদগঞ্জবাসী দিনযাপন করছে যে, এখন থেকে দ্রুতই সেবা পাওয়া যাবে। ফায়ার সার্ভিসের প্রথম সাতমাসের পরিসংখ্যান ভালোই। অন্তত বিগত বছরগুলোর তুলনায় এখানে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমে আসছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলাবাসী ফায়ার সার্ভিসের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমে আসলেও ঘটনা কিন্তু আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ফলে জীবনহানি, অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেঁচে থাকা ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত বছরের সব অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে। এরপরই বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গ্যাসের চুলা থেকে। বিভিন্ন পত্রিকার সূত্রমতে গত বছর উল্লেখযোগ্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো হলো : ২৭ জানুয়ারি উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগে ঘর পুুড়ে যায়। ঘুমিয়ে থাকা বেলী বেগম (৭০) আগুনে পুড়ে মারা যায়। ১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রূপসা গ্রামে গভীর রাতে দুই বসত ঘর আগুনে পুড়ে যায়। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ। ৯ মার্চ উপজেলার মানিকরাজে গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে বসতঘর। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ টাকা। ১ এপ্রিল উপজেলার লাউতলী গ্রামে গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডে ৮টি দোকান পুড়ে গেছে। ১০ জুন উপজেলার গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডে মা ছেলে দগ্ধ। ১১ জুন উপজেলার গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডে মা ছেলে দগ্ধের একদিনের মাথায় ছেলে অমর সূত্রধর (২৩) মারা গেছে। ৫ জুলাই উপজেলার ৪নং সুবিদপুর ইউনিয়নের ওয়াপদা রাস্তার পাশে অগ্নিকাণ্ডে ৪টি ঘর পুড়ে গেছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ। ১২ আগস্ট ফরিদগঞ্জ সদর বাসস্ট্যান্ডে রাত আনুমানিক ২টায় অগ্নিকাণ্ডে দুটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয় বলে দোকানীরা জানান। ২৩ অক্টোবর উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাসারা গ্রামে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে একাধিক বসত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ২২ ডিসেম্বর উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের সাইসাঙ্গায় অগ্নিকাণ্ডে তিনটি বসত ঘর পুড়ে গেছে। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই লাখ।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৭ মাসে ফরিদগঞ্জে ৪১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করতে হয়নি ১৬টি অগ্নিকাণ্ডের। অগ্নিকাণ্ডে নিহত বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে তাদের তথ্য মতে ক্ষতির পরিমাণ ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকার কারণে ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় বা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ২৫টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ১৭টি বৈদ্যুতিক গোলযোগ, ৪টি চুলা কেন্দ্রিক, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ১টি ও অন্যান্য কারণে ৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আবাসিক ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ১৬টি, রান্না ঘরে সংঘটিত হয়েছে ৪টি, দোকানে ১টি, গ্যাস সিলিন্ডারে ১টি, গোশালা এবং খড়ের গাদায় ৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

তবে বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য মতে, উপজেলায় ২০২২ সালে অগ্নিকাণ্ডে ২ জন মারা যায় এবং অগ্নিদগ্ধ হয় দুই জন। আর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ হলো প্রায় ৬৮ লাখ টাকা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা (লিডার) মোঃ বিল্লাল হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, অগ্নিকাণ্ড কখন ঘটবে সে বিষয়টি অনুমান করার উপায় নেই। তবে সচেতন হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্যে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও তার ইত্যাদি ব্যবহারের সময় পণ্যমান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। বাড়িঘর ও কলকারখানায় অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোথাও আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে জানালেও প্রাণহানি এবং ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। বৈদ্যুতিক ত্রুটির পাশাপাশি সিগারেটের আগুন, গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার, বিস্ফোরণ ও অসতর্কতাসহ নানা কারণে ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাসের চুলা থেকে অনেক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষকে আরো সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়া যে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে সেটির মান সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়