প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
হাইমচরে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ)-এর উদ্যোগে দুদিনব্যাপী বিজ্ঞান ক্যাম্প এবং বিজ্ঞানবিষয়ক আলোচনার আজ সমাপনী। উপজেলার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী বাজাপ্তি রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয় গতকাল ১৫ ও আজ ১৬ মার্চ এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উক্ত কর্মশালায় উপজেলার ৬টি বিদ্যালয়ের মোট ৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। বিজ্ঞানবিষয়ক এ আলোচনায় শিক্ষার্থীরা চাঁদপুরের কৃতী সন্তান বিখ্যাত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহার সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় বিজ্ঞানবিষয়ক জিজ্ঞাসা ও বিজ্ঞানের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে।
চরভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৃজন দাস বলেন, এতো দিন শুধু পাঠ্যবইয়ে পড়তাম, আজ বাস্তবে দেখলাম। এ কর্মশালা থেকে বিজ্ঞানবিষয়ক অনেক কিছু শিখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। স্বপ্ন দেখছি, আমিও একদিন বিজ্ঞানী হবো। জানি পথটা সহজ হবে না, তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
‘গড়বো বিজ্ঞানী সাজাবো বাংলাদেশ’ স্লোগানে দুদিনব্যাপী এ বিজ্ঞান ক্যাম্প এবং বিজ্ঞান আলোচনার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান মনষ্ক হতে উৎসাহিত করাই এ অনুষ্ঠানের লক্ষ্য। ‘এক মুঠো বিজ্ঞান’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে তরুণ শিক্ষার্থীদের দেখানো হয় বিজ্ঞানীরা তাদেরই মতো দেখতে এবং এর মাধ্যমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতের (ঝঞঊগ) প্রতি কমতে থাকা আগ্রহকে রোধ করা। শিক্ষার্থীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক মজাদার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাতে-কলমে করার মাধ্যমে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনী দিকটি বোঝার সুযোগ পায়। এ বিজ্ঞান ক্যাম্প শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের উদ্ভাবনী এবং সহযোগিতামূলক প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করে।
চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, সিএইচআরএফ-এর লক্ষ্য হলো গবেষণা ও অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে যথাযথ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতি করা এবং পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানী গড়ে তোলা। জীবন বাঁচাতে সিএইচআরএফ যে প্রভাব রেখে যাচ্ছে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশংসা পেয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডব্লিউএইচও, ইউনেস্কো, বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, আমেরিকান সোসাইটি অফ মাইক্রোবায়োলজি এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক অর্জন।
এই বিজ্ঞান ক্যাম্পের আয়োজনে সার্বিকভাবে সহযোগিতায় ছিলো ব্যাকবোন লিমিটেড। ব্যাকবোনের সিইও মতিন মাহীন সিএইচআরএফের সাহায্যে তার নিজ এলাকার মানুষের কাছে বিজ্ঞানকে নিয়ে আসতে পেরে খুবই আনন্দ প্রকাশ করেন।
সিএইচআরএফ থেকে এই কর্মসূচিতে অংশরত কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞানী ড. ইয়োগেশ হুদা, অফিস এক্সিকিউটিভ মনিমুল হাসান খান, রিসার্চ ম্যানেজার সাকিউল কবির, মাইক্রোবায়োলজিস্ট এন্ড সায়েন্স কমিউনিকেটর নাজিফা তাবাসসুম, সিনিয়র ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্ট দিপু চন্দ্র দাস, সিনিয়র ট্রেনিং অফিসার আদিত্য আরেফিন, মলিকুলার বায়োলজিস্ট এন্ড সায়েন্স কমিউনিকেটর জাসিয়া মুমতাহিনা হাফছা, অ্যাসিস্ট্যান্ট মলিকুলার বায়োলজিস্ট এষা কাজী, জুনিয়র ট্রেনিং অফিসার মুহাম্মাদ সাফিউল আলম মণ্ডল এবং ভলান্টিয়ার প্রত্যয় রায়।
অনুষ্ঠানে বাজাপ্তী রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মান্নানসহ শিক্ষকবৃন্দ সার্বিক তদারকি করেন।
উল্লেখ্য, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ২০০৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠালাভ করেন। এর উদ্দেশ্যে, বিভিন্ন উপায়ে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে মানুষের জীবন রক্ষা করা। এর পরিচালক ড. সেঁজুতি সাহা চাঁদপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক চন্দ্রকান্ত সাহার বড় ছেলে ড. সমীর কুমার সাহার মেয়ে। সেঁজুতি সাহা বলেন, তাঁর শৈশব চাঁদপুরে কেটেছে। তাই বিজ্ঞানী ড. ইয়োগেশ হুদা, যিনি কিনা ড. সেঁজুতির জীবনসঙ্গী তাঁকে নিজের এলাকায় আনতে পেরে তিনি আনন্দিত।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটের সমীক্ষায় বিশ্বসেরা ১০ জন অণুজীব বিজ্ঞানীর মধ্যে একজন বাংলাদেশের তরুণী ড. সেঁজুতি সাহা। তিনি শুধু নিজের জীবনেই বিজ্ঞানের চর্চা করেন না, শিশুদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা বাড়াতেও কাজ করছেন। তার পরিচালিত চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন থেকে পরিচালিত বিজ্ঞান বিষয়ক এই কর্মসূচির নাম : ‘গড়বো বিজ্ঞানী সাজাবো বাংলাদেশ’। বিজ্ঞান ও মানুষের মধ্যেকার ব্যবধান কমিয়ে আনাই যার লক্ষ্য। এর আগে কোভিড-১৯ মহামারির সময় ড. সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে বাংলাদেশের একদল তরুণ বিজ্ঞানী বাংলাদেশে প্রাপ্ত করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করেন। এছাড়াও তিনি শিশুদের মেনিনজাইটিস, টাইফয়েড ও অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে কাজ করছেন।