মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কাজ করছেন অন্ধ ভিক্ষুক সুমন
রেদওয়ান আহমেদ জাকির ॥

মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা হক মানসিক, শারীরিক প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এছাড়াও তিনি দক্ষতা ও সুনামের সাথে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের ভিটিহীন অন্ধ ভিক্ষুক সুমন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় নির্মিত সেমিপাকা ঘর পেয়ে খুশি ভূমি ও গৃহহীন উপাদী উত্তর ইউনিয়নের বহরী গ্রামের অন্ধ ভিক্ষুক সুমন মৃধা।

২৮ জুলাই মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেই অন্ধ ভিক্ষুক সুমনকে দেখতে যান। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেন এবং বিভিন্ন খোঁজ-খবর নেন। সাথে করে নেয়া বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ নিজ হাতে বাড়ির চারপাশে রোপণ করেন। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেটু কুমার বড়ুয়া, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম, নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন মৃধা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চাঁন মিয়া তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অন্ধ ভিক্ষুক সুমন বলেন, আমাদের জমিজমা, ঘর নেই বলে বাবা নুরুল ইসলাম (৭০), মা নুরজাহান বেগমকে নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার পাইকগাছায় আমার নানার বাড়িতে থাকেন। ছোট ভাই সুজন ফার্নিচারের কাজ করে ঢাকায় থাকে। আমি ৪/৫ বছর ধরে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে এসেছি। বিভিন্ন সময় আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও অন্যের বাড়িতে থেকেছি। এই জীবনে নিজের একটা ঘর হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।

সুমন আরো জানান, ২০১০ সালে আমি বিয়ে করেছি। আমার ৭ বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তান আছে। সে মাদ্রাসায় সবার সহযোগিতায় পড়াশুনা করছে। আমাদের কিছু জায়গা ও ঘর ছিল। আমার চিকিৎসা ও অভাবের সংসারের চাহিদায় বাবা ও আমার জেঠা একে একে সব বিক্রি করে দেয়। পরে ভিটিহীন হয়ে ভিক্ষা করে একেকদিন একেক বাড়িতে থাকতাম।

অন্ধ হওয়ার বিষয়ে সুমন জানান, আমি কোনো জন্মান্ধ ছিলাম না। বাড়ির কাছের মোড়ে আমাদের একটি দোকান ছিলো, সেখানে আমি ব্যবসা করতাম। আমার যখন ১৫/১৬ বছর বয়স (২০০৩ সাল) তখন আমার রাতকানা রোগ হয়। বাবার চিকিৎসা করালেও টাকার অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে আমার চোখের আলো কমতে থাকে। এক সময় আমি আর কিছুই দেখতে পাই না।

স্ত্রী শেফালী আক্তার বলেন, আমার বাবার বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার খেরুদিয়া গ্রামে। আগে থাকার কোনো জায়গা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আমরা একটা স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। আর ইউএনও স্যার এ ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়ে আমাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন মৃধা বলেন, আমার ইউনিয়নের দক্ষিণ খিদিরপুর এলাকায় ২শতক জায়গার উপর প্রধানমন্ত্রীর উপহার দুই কক্ষ বিশিষ্ট দুটি ঘরের একটি অন্ধ ভিক্ষুক সুমন ও অপরটি নওমুসলিম আব্দুল্লাহকে দেয়া হয়েছে। তিনি পরিষদ থেকে তাদেরকে বিভিন্ন সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেন।

ইউএনও ফাহমিদা হক জানান, অন্ধ ভিক্ষুক সুমন মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর পেয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে পরিবারকে স্বাবলম্বী করার জন্য হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু পালন করছে। বাড়ির পেছনে রোপণ করেছে নানা রকম সব্জি। তার বৈদ্যুতিক সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্ধ ভিক্ষুক সুমনসহ উপজেলার আরো ২৪টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে পুনর্বাসিত হয়ে আজ অনেক খুশি। এছাড়াও ঘরগুলো অত্যন্ত টেকসই ও গুণগত মান বজায় রেখে করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়