বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২১, ০০:০০

বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রয়েছে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি ॥

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুরের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা কর্তৃপক্ষের সাথে ‘করোনাকালীন সংকট মোকাবেলায় প্রাথমিক শিক্ষা খাতে কার্যক্রম : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা গতকাল ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। সনাক সভাপতি শাহানারা বেগমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহাব উদ্দিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, করোনাকালীন সময় প্রাথমিকসহ সকল ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে করোনাকালীন সময় বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ সরকারি যে নির্দেশনা তা হলো শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওয়ার্কশীট দিয়ে আসা এবং সেগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা। কিন্তু সেখানেও শিক্ষকরা অনেক অবহেলা করছেন। ওয়ার্কশীট বিতরণ নিয়েও অনেক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করেছি। তিনি আরও বলেন, সরাসরি পাঠদান প্রক্রিয়ার বিকল্প কিছুই নেই। তারপরও করোনা পরিস্থিতিতে সরকার শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সেক্ষেত্রে গুগল মীট ও ওয়ার্কশীট পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, এই করোনাকালীন সময়েও কোনো শিশু যাতে শিক্ষা থেকে বিচ্যুত না হয় সেটা নিশ্চিত করবো। ইতিমধ্যে প্রায় ৪২০০ জন শিক্ষক ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। আশা করছি বাকিরা ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে। তিনি জানান, চাঁদপুর জেলার ১১৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরাম রয়েছে। প্রতিটি উপজেলার অন্তত মডেল স্কুলগুলোতে অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরামকে আরও কার্যকর করার জন্য সনাক-টিআইবির সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোল্লা বখতিয়ার বলেন, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাখাতে সরাসরি পাঠদান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর জন্য। তিনি আরও বলেন, সরকার ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওয়ার্কশীট বিতরণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এবং শিক্ষকরাও সে মোতাবেক কাজ করছে। ওয়ার্কশীটগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে এবং রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যদি কোনো কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে যেন শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশীটের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করা সম্ভব হয়। তিনি করোনাকালীন এই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও কিভাবে বেগবান করা যায় সেজন্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

স্বাগত বক্তব্যে সনাকের সাবেক সভাপতি ও সদস্য কাজী শাহাদাত বলেন, করোনা পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে, বলা চলে একটা মহা দুর্যোগ চলছে। করোনায় ভারতের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলেও বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ। করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে সচেতনতা নেই। মঙ্গলবার চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্তের হার ছিলো ৫১%। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা নিবেদিত প্রাণ এই দুর্যোগকালীন সময়েও তারা বহু চ্যালেঞ্জের মুখে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা সনাক-টিআইবি মূলত পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করে থাকি। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক অর্জন রয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়েও কাজ করবো।

সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের কো-অর্ডিনেটর কাজী শফিকুর রহমান বলেন, আমরা একটি ঝড়ের সাথে লড়াই করছি। এটি একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলেও সবচেয়ে বড় সমস্যায় রয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এটা একটা মানবিক সমস্যাও তৈরি করছে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই মৃত্যুর মিছিল তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি শিক্ষাখাতেও বেশ কিছু ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিক্ষা বিভাগ শিক্ষাখাতে অনলাইনে বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো অনুরোধ করেছে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য। তিনি বলেন, সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের হতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করা একটা দুরূহ কাজ। শিক্ষা বিভাগের কাছে আমাদের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা ও সুশাসন নিশ্চিত করা। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমান ওয়ার্কশীট বিতরণ পদ্ধতি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য তিনি প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। করোনাকালীন সময়ে চাঁদপুরে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম যেন সারা বাংলাদেশের মধ্যে মডেল হয় এবং তা যেন সারা বাংলাদেশের সনাক এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া যায় সেজন্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

সনাকের সাবেক সভাপতি ও সদস্য অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেনের সঞ্চালনায় করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কচুয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার এইচএম শাহরিয়ার, ফরিদগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগম, ফরিদগঞ্জ উপজেলার সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ বেলায়েত হোসেন, উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান সিদ্দিকী, একই বিদ্যালয়ের অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরামের সহ-সমন্বয়কারী সুমি আক্তার প্রমুখ।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী, দৈনিক মেঘনা বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক গিয়াসউদ্দিন মিলন, কালের কণ্ঠ ও সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহমেদ, সনাক সদস্য মোঃ আব্দুল মালেক ও জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন রাসেল। তাঁরা বলেন, ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষা কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই করোনাকালীন সময়ে কিছু শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষাও শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রয়োজন। আমরা দেখছি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসএমসি ও পিটিএ কমিটির কোনো ক্ষমতা নেই। কোনো কোনো স্কুলে শিক্ষকরা তাদেরকে তেমন গুরুত্বও দেননা। সরকার এই করোনাকালীন সংকটেও প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে রাখার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশীট শিক্ষকরা মুদি দোকানে রেখে যান বা তারা বাড়ি বাড়ি না গিয়ে দপ্তরীর মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সভাপতির বক্তব্যে সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম বলেন, এই করোনাকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে শিক্ষাখাত। তিনি বলেন, আমাদেরকে হয়তো আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। আমাদেরকে আরও ধৈর্য ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমাদেরকে নিরাপদে থেকে স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রেখে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, সনাক-টিআইবির মূল উদ্দেশ্যই হলো এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যাতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বজায় রেখে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আরো বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরামকে আরও বেশি কার্যকর দেখতে চাই। আশা করছি কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনা করবে। তিনি ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকবৃন্দ, বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসারবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরামের সদস্যবৃন্দ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি, জেলা প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং-এর নেতৃবৃন্দ, জলবায়ু বিষয়ক অংশগ্রহণ কামিটির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, সনাক-স্বজন-ইয়েস-ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ ও টিআইবি কর্মীবৃন্দ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়