প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কখনোই কমেনি। বরং প্রতিটি নির্বাচনকে ঘিরে এই কোন্দল বেড়েছে। সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভোটযুদ্ধে পার পেয়ে গেলেও দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নির্বাচনে মাত্র ৩টিতে নৌকার বিজয় হয়েছে। বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রের আড়ালে বিএনপি জয়ী হয়েছে।
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বিএনপি প্রার্থীর কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। অন্যগুলোর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যের নিজ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তৃতীয়, পাশের দুটি ইউনিয়নের একটিতে চতুর্থ ও অপরটিতে তৃতীয় হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। সাবেক মন্ত্রী মাওলানা এমএম মান্নানের ‘দ্বিতীয় ভারত’ উপাধি পাওয়া আওয়ামী লীগের দুর্গ খ্যাত গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নেও এবার নৌকার প্রার্থী হেরেছে বিদ্রোহীর কাছে।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ৪টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হওয়া ছাড়াও আরো ৭টিতে তারা দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৩টিতে বিজয়ী হয়েছেন, ৩টিতে দ্বিতীয় হয়েছেন। এদিকে স্বতন্ত্রের আড়ালে বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচন করায় গোপনীয়ভাবে দলীয় কর্মীদের নিয়ে ৬টি ইউনিয়নে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন তারা। ফলে আওয়ামী লীগের কোন্দলের সুযোগটিকে তারা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন।
নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি এবং ৩টিতে মাত্র জয়ী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল দুজন নেতা বলেন, যে ৩টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের বিজয় হয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পারিবারিক ঐতিহ্য, আঞ্চলিকতার টান, দলের নেতা-কর্মীদের মন জয় ও আত্মীয়তার সূত্র ধরে দলের বাইরের লোকজনকে তাদেরকে ভোট দিতে উৎসাহী করার কারণে নৌকার বিজয় অর্জন হয়েছে। বাকিরা এসবে ব্যর্থ হওয়ার সাথে সাথে দলীয় কর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি প্রার্থীদের সমর্থকরা।
নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার বলেন, দলীয় মনোনয়নে ছিলো ভুল। আর এই ভুলের কারণে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলো শক্তিশালী অবস্থানে। ফলে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। এছাড়া আড়ালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে অনেক হেভিওয়েট নেতাদের অতীতে দেখেছি, সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দেখেছি। সকলে এক ছাতার নীচে না আসলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।