প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
অবশেষে ভোট দিয়ে সংখ্যার সেঞ্চুরি পূরণ করলো ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা। যদিও এ সংখ্যা মোট নারী ভোটারের মাত্র ১ শতাংশ। তবে আলেম-ওলামাদের দিয়ে প্রয়োজনীয় মোটিভেশন করতে পারলে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা একজোট হয়ে নারীদের ভোট প্রদানে উদ্বুব্ধ করতে সক্ষম হলে এর হার ৫০-এর ঘরে পৌঁছবে বলে বিশ^াস সচেতন মহলের।
গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদের ৫ম ধাপের নির্বাচনে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নসহ ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে অন্য সকল ইউনিয়নে নারী ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় হলেও গত ৫০ বছর ধরে একজন পীরের উপদেশের কারণে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে নারীরা ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসতো না। অথচ শুধু ভোট ছাড়া প্রবাসী অধ্যুষিত এ ইউনিয়নের নারীরা বাজার মার্কেটে সংসার রক্ষায় কেনাকাটাসহ সকল কাজই করেন।
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট নারী ভোটার ৯ হাজার ৪০ জন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিন ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে শতাধিক নারী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে ৩ জন, ২নং ওয়ার্ডে ৩ জন, ৩নং ওয়ার্ডে সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার স্ত্রী ডাঃ আনোয়ারা হকসহ ৪ জন, ৪নং ওয়ার্ডে একজন এজেন্টসহ ২ জন, ৫নং ওয়ার্ডে ৩ জন, ৬নং ওয়ার্ডে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শরীফ খানের স্ত্রীসহ ৭০ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ১২ জন ও ৯নং ওয়ার্ডে ১১ জন ভোট দিয়েছে। ৮নং ওয়ার্ডে ১ জন নারীও ভোট দেননি। অথচ এ ওয়ার্ডে খ্রিস্টান পল্লীও রয়েছে। এ ইউনিয়নে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক ছাড়াও হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের বসতিও রয়েছে।
নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা একজন প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, নারী ভোটারদের কেন্দ্রে এসে পর্দার সাথে ভোট দিতে আমি সকল আয়োজন সম্পন্ন করি। কিন্তু তারা বা প্রার্থীরা আগ্রহী হয়ে তাদের কেন্দ্রে না আসলে আমাদের কিছুই করার নেই।
মনোয়ারা বেগম নামে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের এক প্রার্থী নির্বাচনের দিন নিজের ভোট দিয়েছেন কি না তা বলতে দ্বিধাবোধ করেন। যদিও নবনির্বাচিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শরীফ খান নির্বাচনী ফলাফল সংগ্রহ করতে এসে প্রশ্নের জবাবে জানান, তার স্ত্রীসহ তার পরিবারের অনেক নারী সদস্য ভোট দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, নারী ভোটারদের ভোট দিতে আগ্রহী করতে নির্বাচনের ক’দিন পূর্বে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে গৃদকালিন্দিয়া কলেজে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীর উপস্থিতিতে উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া বাজার এলাকায় বসবাস করা মাওলানা মোহাম্মদ হাছান মওদুদ নামে জৈনপুরের এক পীর নারীদের ভোট না দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। কথিত রয়েছে, প্রায় ৫০ বছর আগে ওই এলাকায় কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়। এরপর ওই এলাকায় তৎকালীন জৈনপুরের পীর সাহেব নারীদের ভোট দিতে নাকি নিষেধ করেন। পীরের এমন কথার কোনো তথ্য গ্রহণযোগ্য যুক্তি কিংবা প্রমাণ কেউ না দেখাতে পারলেও সে থেকেই এ ইউনিয়নের কোনো নারী আর ভোট দেন না।