প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১১
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : চাঁদপুর-২
আদর্শ জনপ্রতিনিধি হবার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টিতে আত্মপ্রত্যয়ী এক প্রার্থী শুক্কুর পাটোয়ারী
মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে করতে বিভিন্ন পর্যায় পার করে সাধারণ মানুষের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা একজন রাজনীতিক হচ্ছেন মো. আবদুস শুক্কুর পাটোয়ারী (এমএ শুক্কুর পাটোয়ারী) । দলীয় আদর্শে অবিচল থেকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জনপ্রতিনিধি হওয়া এবং অখণ্ড সততায় সমাজসেবায় আত্মনিবেদন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তিনি শুধু মতলব দক্ষিণ নয়, বৃহত্তর মতলবের সাধারণ্যে অতি পরিচিত একটি নাম। তাই পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মো. আবদুস শুক্কুর পাটোয়ারী প্রার্থিতার দাবি করতে পারেন এমন একটি নাম। ব্যক্তিগত সদাচরণ, সদালাপ, জনসেবা, জনকল্যাণ, নীতি-নৈতিকতা, সততা, ত্যাগ, মেধা-মননশীলতা ও নেতৃত্বগুণের কারণে তাঁকে এই নির্বাচনে চাঁদপুর-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও অনেক বেশি জনপ্রিয় বললে অত্যুক্তি হবে না বলে সুধীজনদের অভিমত। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সব নির্বাচনেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন এম এ শুক্কুর পাটোয়ারী। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও বারবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড আছে তাঁর। এবার মতলববাসী স্বপ্ন বুনছেন তাঁকে জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধি করে পাঠানোর। তিনি নিজেও সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় তিনিও সেসব নির্বাচন বর্জন করেন। এম এ শুক্কুর পাটোয়ারী চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলাধীন ১নং নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের তুষপুর পাটোয়ারী বাড়িতে ১৯৬৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলহাজ্ব মো. আছমত আলী পাটোয়ারী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর ছোট ভাই আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত)। শুক্কুর পাটোয়ারী ১৯৭৯ সালে পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৮০-৮২ সালে কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৪-৮৬ সালে মতলব ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। একই সাথে বৃহত্তর মতলব থানা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক (নৈশ শাখা) ছিলেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর বৃহত্তর মতলব থানা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক (১৯৯১-৯৭), বৃহত্তর মতলব থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক (১৯৯২-৯৩) ও আহ্বায়ক (১৯৯৩-৯৫), মতলব দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের সভাপতি (১৯৯৫), জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি (১৯৯৬-২০০১) ও যুগ্ম আহ্বায়ক (২০০৫-২০১০), চাঁদপুর জেলা বিএনপির সদস্য (১৯৯৬-২০০৯), মতলব থানা বিএনপির সহ-সভাপতি (২০০৩-২০০৭) ছিলেন। এম এ শুক্কুর পাটওয়ারী ২০১০ সালে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই দায়িত্ব পালনের পর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত হন। এরপর ২০২২ সালে ফের চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ছাত্রজীবন থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম ও প্রতিটি নির্বাচনে তিনি দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি রাজপথে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সরাসরি অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেওয়ায় বহু রাজনৈতিক মামলা, হামলা ও কারাবরণের শিকার হন। সর্বশেষ গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। বিশেষ করে গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে শুক্কুর পাটোয়ারী তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ রাজনীতির মাঠে থেকে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন। নির্বাচনী এলাকার বাইরে চাঁদপুর জেলা, কুমিল্লায় বিভাগীয় ও ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচিতেও বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীসহ অংশগ্রহণ করেন তিনি। রোড মার্চ, বৃহৎ জনসমাবেশসহ দলীয় কর্মসূচিতে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সরব উপস্থিতি দলীয় নেতা-কর্মীদের দলের দুঃসময়ে উজ্জীবিত রেখেছে। বিগত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে যুবদলের সভাপতি থাকাকালীন বৃহত্তর মতলবের ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শুক্কুর পাটোয়ারী। সে সময় জুলুম, নির্যাতন, মামলা, জেল ইত্যাদি সহ্য করে এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হন। পরবর্তী ২০০৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনি নয়টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বার চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বাধিক ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এম এ শুক্কুর পাটোয়ারী ২০০৩-২০০৪ এবং ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়নে চাঁদপুর জেলার ৮৭টি ইউনিয়নের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদক লাভ করেন এবং সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণ করেন। সে সময় থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মাত্র ২৩ দিন পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এম এ শুক্কুর পাটোয়ারী মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যদিও ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মতলব পৌরসভা চেয়ারম্যান এনামুল হক বাদল এবং আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন পাটোয়ারীও প্রার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো মতলব দক্ষিণ উপজেলার প্রায় সকল কেন্দ্রে বিজয়ী হলেও ফলাফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকাকালে উপজেলাবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হন এই জনপ্রিয় নেতা। শুক্কুর পাটোয়ারী বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের (২০০৩-২০০৯) দায়িত্ব পালন, চাঁদপুর জেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সদস্য সচিব (২০০৩-২০০৮) ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি (২০০৩-২০০৮) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে লাক শিবপুর ফিরোজা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ সাল থেকে ঘোনা ওয়াসিম উদ্দিন রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে অদ্যাবধি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ১৯৮৪ সাল থেকে অদ্যাবধি মতলব থানার অন্যতম সামাজিক প্রতিষ্ঠান জোনাকি সমাজকল্যাণ সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৮ সাল থেকে মতলব উপজেলা সদরে স্থাপিত অনির্বাণ সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মানবসেবা ও সমাজসেবায় অবদানের জন্যে তিনি অনেক সম্মাননা/সংবর্ধনা অর্জন করেন। ১৯৯২ সালে উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক উপজেলার শ্রেষ্ঠ সমাজকর্মী নির্বাচিত হন। ২০০২ ও ২০০৫ সালে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষানুরাগী নির্বাচিত হন। তাছাড়া বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। এম এ শুক্কুর পাটোয়ারী বলেন, আমি ১৯৭৯ সাল থেকে অদ্যাবধি বিএনপি ঘোষিত সকল কর্মসূচিতে নিজের জীবন-যৌবনের সোনালী দিনগুলো বিসর্জন দিয়ে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। ১৭ বছর জনপ্রতিনিধি থাকাকালীন কোনো দুর্নীতি আমাকে প্রলুব্ধ করতে পারেনি এবং কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচনে আমি আল্লাহর রহমতে কখনো পরাজিত হইনি। বৃহত্তর পরিসরে জনসেবা ও জনকল্যাণের লক্ষ্যে আমি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ্রগ্রহণ করতে চাই। আমার এলাকার জনগণও সেই প্রত্যাশা করছে। আশা করি জাতীয় সংসদে একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে একজন আদর্শ জনপ্রতিনিধি কেমন হতে পারে আমি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।