বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   থানা থেকে লুট হওয়া ৫৭৬টি বুলেট উদ্ধার
  •   অদৃশ্য রহস্যজনক আগুনে পুড়ছে ঘরবাড়ি : আতঙ্কে গ্রামবাসী
  •   বাশার আল আসাদের পতন: ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান
  •   ভারতকে কাঁদিয়ে যুব এশিয়া কাপের শিরোপা বাংলাদেশের
  •   প্রাথমিকে পোষ্য কোটা বাদ, মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৫০

এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা যেনো অধ্যক্ষের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান

এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা যেনো অধ্যক্ষের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান
মো. সাজ্জাদ হোসেন রনি

হাইমচর উপজেলায় এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার ভবনেই নিজের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন স্বয়ং মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। সরকারি ভবনে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) বানিয়ে আর্থিক বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. মো. শরীফ হোসেনের বিরুদ্ধে। কাটাখালী হামিদিয়া আলিম মাদ্রাসার এ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও অভিযোগ। স্থানীয় এলাকাবাসীর তীব্র ক্ষোভে পুরো এলাকা ফুঁসে উঠেছে। মাদ্রাসার জায়গা লিজ দিয়ে নিজেকে আড়ালে রেখে নিজেই পরিচালনা করছেন প্রাইভেট মাদ্রাসাটি।

তথ্য জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার নিকটতম আত্মীয় সহকারী শিক্ষকসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরণ করেন।

মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মুসলিম মিয়া, হাসান শেখ, আমির হামজা, আলমগীর তফাদারসহ আরো অনেকেই জানান, কাটাখালী হামিদিয়া মাদ্রাসা ১৯১৫ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে অনেক সুনামের সাথেই পরিচালিত হয়ে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে উপজেলার বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তির দানের মাধ্যমে বর্তমানে তিনটি ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত হয়--(১) পশ্চিম চরকৃষ্ণপুর ক্যাম্পাস, (২) নয়ানী ক্যাম্পাস ও (৩) মহজমপুর ক্যাম্পাস। সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত ছিলেো। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক (ইবতেদায়ী, দাখিল, আলিম) পর্যায়ে ক্লাস চলমান ছিলো। তবে গোপনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. মো. শরিফ হোসেন মহজমপুর ক্যাম্পাসটিকে দারুস সুন্নাহ ও আইডিয়াল একাডেমি কাটাখালি হামিদিয়া আলিম মাদ্রাসা প্রাইভেট শাখা নামে পরিচালিত করার জন্যে ১০ বছরের চুক্তিপত্র করে লিজ দিয়েছেন। তাও আবার ফেরতযোগ্য ১ লাখ টাকার বিনিময়ে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কমিটির নিজস্ব লোকদের নিয়ে রেজুলেশন করেন এবং অনুপস্থিত সদস্যদের স্বাক্ষর নকল করে তিনি একটি রেজুলেশন করেন। মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির অসুস্থতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি এ মাদ্রাসার ভবনে আরেকটি প্রাইভেট মাদ্রাসা তৈরি করেন। এ সম্পর্কে কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই জানেন না। এছাড়া তার দেয়া চুক্তিপত্রে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মাদ্রাসার জমিন প্রাইভেট মাদ্রাসা ব্যবহার করতে পারবে চুক্তিপত্রে থাকলেও গত ৪ মাস ধরেই চলছে ঐ প্রাইভেট মাদ্রাসার কার্যক্রম।

তারা আরও জানান, পূর্বে কয়েকবার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী এই অধ্যক্ষকে অপসারণ করে মাদ্রাসার সকল ক্যাম্পাসকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জোর দাবি জানান।

স্থানীয় সংবাদকর্মীরা জানান, এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক মাস ধরেই সংবাদকর্মীরা তদন্ত শুরু করেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মহজমপুর ক্যাম্পাসটি সরকারি অনুমতি ছাড়াই ভাড়া দিয়ে কাটাখালী হামিদিয়া মাদ্রাসাটি প্রাইভেট শাখা নামে পরিচালিত করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাটাখালি মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক হারুনুর রশিদের স্ত্রী ফারজানা আক্তারসহ স্থানীয় আরও ৩ জনের নামে জায়গার চুক্তিপত্র করেন। এছাড়া আড়ালে থেকে কাটাখালি মাদ্রাসার বেশ কিছুু শিক্ষক মিলেই এই প্রাইভেট মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। চুক্তিপত্রে ফেরতযোগ্য ১ লাখ টাকা উল্লেখ করলেও সকলের আড়ালে মোটা অংকের টাকার লেনদেন করেছেন অধ্যক্ষ মাও. শরীফ হোসেন, যা তিনি এই প্রাইভেট মাদ্রাসার শেয়ার হিসেবে রেখেছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।

অধ্যক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো ধরনের সদুত্তর না দিয়ে সাংবাদিকদের সাথে তিনি খারাপ আচারণ করেন। অধ্যক্ষের সম্মুখে সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) আবুল বাসারসহ শিক্ষকরা অশোভন আচরণ করেন। ভিডিও ধারণ করতে বাধা দিয়ে আপত্তিকর ভাষায় সাংবাদিকদের হেনস্থা করেন। অধ্যক্ষ জোর গলায় গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি দিয়ে বলেন, আমার মাদ্রাসার জায়গায় আমি কী বানাবো না বানাবো একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারো বাপের ক্ষমতা নেই আমাকে কিছু করার।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাটাখালি হামিদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. শরীফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ফোন কল কেটে দেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, কাটাখালী হামিদিয়া আলিম মাদ্রাসার প্রাইভেট শাখার বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে, তাতে বলতে হয়, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রাইভেট নামে কোনো মাদ্রাসা চালানোর সুযোগ নেই। যেহেতু এটি এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠান। আমরা খবর পেয়েছি প্রাইভেট মাদ্রাসা চলছে। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। আমি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে ডেকে বলেছি এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মাদ্রাসার নামে জমি খারিজ করা। বেসরকারি এবং প্রাইভেট কাউকে দেয়ার সুযোগ নেই।

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, আমার এই বিষয়টি জানা নেই। আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই এটা করা হয়েছে, নাকি আগেই করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। কারণ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার নিয়ম নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়