প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:২৯
হাজীগঞ্জে সাড়ে ৬ কিলোমিটার পাকা সড়কে ৫২ বাঁক
ঘটছে দুর্ঘটনা।। বিকল্প সড়কে আগ্রহী হয়ে উঠছে যাত্রীরা।। সংস্কারের উদ্যোগ নেই
সড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র সাড়ে ৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাঁক রয়েছে ৫২টি। আবার এই ৫২টি বাঁকের মধ্যে অতিবাঁক রয়েছে প্রায় ৩০টি। এই সকল অতি বাঁকের কারণে প্রায় দিন ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে সড়কটি যেনো মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। একই কারণে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বিকল্প সড়ক ব্যবহারে ঝুঁকছে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও সম্পত্তিগত বিবাদ মিটিয়ে বাঁক সরলীকরণে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মোঃ আজিজুল হক। এলজিইডি নির্মিত সড়কের সব বাঁক সোজা করা সম্ভব না হলেও অন্তত অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করে দিলে দুর্ঘটনা এড়ানোসহ সড়কে যান ও যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সরজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জের দেবপুর-রাজারগাঁও-চেঙ্গাতলী-নারায়ণপুর-মতলব-গৌরিপুর সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ অংশের দেবপুর হতে রাজারগাঁও বাজার পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাঁক রয়েছে ৫২টি। ৫২টি বাঁকের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বা অতি বাঁক রয়েছে কমপক্ষে ৩০টি। প্রায় শত বছর পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে স্থানীয়দের চলাচলের জন্যে এলাকাভিত্তিক মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়। সেই মাটির রাস্তাটি ধীরে ধীরে প্রশস্তকরণের মধ্য দিয়ে তিন উপজেলার হাজীগঞ্জ-মতলব-কুমিল্লার গৌরিপুর সংযোগ সড়কে রূপ নেয়। এক সময় মানুষের চলাচল বেড়ে গেলে বেবিট্যাক্সি চলাচল শুরু করে সড়কটিতে। স্বাধীনতার পর হতে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত যাত্রী চলাচলের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সরকারিভাবে এটি আরো প্রশস্তকরণসহ পাকা করণের কাজ চলতে থাকে, যা কালক্রমে একটি পরিপূর্ণ সড়কের রূপ পায়। সড়ক সৃষ্টির শুরুর দিকে যে বাঁকগুলো ছিলো, সেই বাঁকগুলো যথাস্থানে রেখে যুগ যুগ ধরে সড়কটি সংস্কার, প্রশস্ত আর পাকাকরণ হতে থাকে। এক সময় এলজিইডি সড়কটির মালিকানা লাভ করে। বর্তমানে সড়কটির দুপাশে এলজিইডির বনায়ন রয়েছে। এই সড়ক ধরে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লোকজন চলাচলসহ প্রায় সহস্রাধিক যাত্রীবাহী সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করে থাকে। স্কুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থীর চলাচল ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকার হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল আনা নেওয়া হয় সড়ক ধরে। উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, বতর্মানে ১২ ফুট চওড়া পাকা আর শোল্ডার (কাঁধ) মিলিয়ে সড়কটির ১৮ ফুটের পাশ রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ করে সড়কটি পাশে পাকা ১৮ ফুট আর শোল্ডার (কাঁধ)সহ ২৪ ফুট চওড়া করে ৭টি নতুন বক্স ব্রিজ তৈরি করার জন্যে চলিত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রস্তাবনা পাঠানোর পরে তা অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু বাঁক সরলীকরণের জন্যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। দেবপুর সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের কয়েক চালক জানান, সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণে কতো মানুষ যে পঙ্গু হয়েছে তার কোনো হিসেব নেই। আমরা চাই সড়কটির বেশি (অতি) বাঁকগুলো সোজা করা হোক। গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবো এমন ভাবনা করি না। রিজিকের কারণে এই সড়কে গাড়ি চালাই। কিছু কিছু দুর্ঘটনা দেখলে মনে চায় এই সড়ক থেকে চলে যাই। রাস্তায় বেশি বাঁকের কারণে প্রায় দিন ঘটে দুর্ঘটনা। এই সকল দুর্ঘটনার শিকার নারী ও শিশুদেরকে দেখলে খারাপ লাগে। বাঁকগুলো সোজা না করলে প্রতিদিনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়। উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মোঃ আজিজুল হক জানান, সড়কটি প্রশস্তকরণ ও অতি বাঁকগুলো সরলীকরণের জন্যে আমরা একটি প্রাক্কলন করে প্রস্তাবনা পাঠাবো। স্থানীয়দের সহযোগিতা ছাড়া জমি অধিগ্রহণ মোটেই সম্ভব নয়। জমি অধিগ্রহণে জটিলতা না থাকলে আমরা সরলীকরণ ও সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ করতে পারবো।