শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০০:৩৪

ফরিদগঞ্জ বালিকা উত্তর সপ্রাবি ও পাইলট বালিকা উবির মাঠের চিত্র

মাঠজুড়ে পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা অ্যাসেম্বলি ও ক্রীড়া থেকে বঞ্চিত

জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা, পোকামাকড়।। ভয়ে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা

প্রবীর চক্রবর্তী
মাঠজুড়ে  পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা অ্যাসেম্বলি ও ক্রীড়া থেকে বঞ্চিত

এক মাঠের মধ্যেই খেলাধুলা করে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী। এ মাঠেই অনুষ্ঠিত হয় প্রতিদিন বিদ্যালয়ের শুরুতে অ্যাসেম্বলি। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে গত কয়েক মাস ধরেই বন্ধ রয়েছে অ্যাসেম্বলি। শিশুরাও বঞ্চিত হচ্ছে মাঠের খেলাধুলা থেকে। বিদ্যালয়ে গেলেও ঘরের মতো অনেকটা বন্দী জীবনের মতো কাটছে তাদের। এর সাথে যোগ হয়েছে জলাবদ্ধতার কারণে মশার লার্ভা, পোকামাকড় এবং সাপের উপদ্রব। এতে ভয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় থাকে শিক্ষার্থীরা। মাঠের পানি সরতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ ফরিদগঞ্জ বালিকা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সপ্রাবি) ও ফরিদগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (উবি) মাঠের।

জানা গেছে, উপজেলা সদরস্থ ফরিদগঞ্জ বালিকা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩৮জন ও ফরিদগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫৪৫জন শিক্ষার্থীর জন্যে একটিই মাঠ। এই মাঠেই উভয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন অ্যাসেম্বলি ছাড়াও সকল প্রকার খেলাধুলা হয়ে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদর ক্লাস্টারের খেলাধুলাসহ সকল অনুষ্ঠানমালার জন্যেও এই মাঠই ভরসা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই এর ব্যত্যয় ঘটছে। বিগত বছর অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এমনটি ভেবেছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ বছর তাদের ভুল ভাঙ্গে। দেখা গেছে যে, গত ৩/৪ মাস ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় মাঠে। পানি সরে যাওয়ার আগের স্থানগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুরো মাঠটিই পানিতে নিমজ্জিত।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জলাবদ্ধতার কারণে মাঠের পানিতে পোকামাকড়ের বসতি বেড়েছে। মশার লার্ভাও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, কয়েকদিন আগে তারা সাপের বাচ্চা দেখেছে এই পানিতে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী গোধূলী দাস, আছিয়া, শুভ, তানীমসহ কয়েকজন জানায়, বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে আছে। এখানে আমরা সাপের বাচ্চা দেখেছি। অনেক পোকা মাকড় রয়েছে। পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। লেইজারে বা ছুটির পরে আমরা আগে খেলাধুলা করতাম। কিন্তু এখন পারছি না। স্কুলের মেইন গেইট দিয়েও আসতে পারছি না। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরূপ, ফাহিমসহ অন্যরা জানায়, এই পানির কারণে অনেকের জ্বর হয়েছে। অনেক বন্ধু স্কুলে আসতে ভয় পায়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে অ্যাসেম্বলি হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা আগে মাঠে ছোটাছুটি করতো, খেলতো। এখন সবই বন্ধ। তাছাড়া অনেক অভিভাবক সাপের ভয়সহ নানা কারণে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, মাঠে ইতঃপূর্বে বালু ফেলা হলেও তা কাজে আসেনি। কারণ পানি সরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্ষার আগ থেকেই আমরা মাঠটি ব্যবহার করতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পৌরসভাকেও আমরা জানিয়েছি।

ফরিদগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম কবির জানান, জলাবদ্ধতার কারণে বছরের ৪ মাস আমাদের অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকে। আমাদের শিক্ষার্থীরা মসজিদে নামাজে যেতে পারে না বলে আমরা বালুর বস্তা দিয়ে বিকল্প পথ তৈরি করেছি। এভাবে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই একটি মাঠ জলাবদ্ধ হয়ে থাকলে কীভাবে চলবে! আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিবেন এবং একই সাথে মাঠটি ভরাটের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলেয়া খাতুন বলেন, আমাদের এ বিদ্যালয়টিতে এ বছর ৫৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে পাঠদান অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কারের জন্যে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার আবেদন করেও আশার আলো দেখছি না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অ. দা.) মো. গাউছুল আজম পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিরিন সুলতানা বলেন, বিষয়টি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলে মাঠ সংস্কার বা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক সুলতানা রাজিয়া বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়