প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় প্রমীলা ক্রিকেটার নীলা ইসলাম
ক্রিকেট মৌসুমে চাঁদপুরে নিয়মিত খেলা আয়োজনের দাবি জানাচ্ছি
ছোটকাল থেকেই ক্রিকেট খেলার প্রতি রয়েছে অনেক আগ্রহ। পরিবারের সদস্যরাও তাকে খেলার জন্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। পরিবারের সদস্য কিংবা কোনো আত্মীয়-স্বজন খেলাধুলার সাথে জড়িত নেই। তবে যেই এলাকাতে বসবাস করছেন সেই এলাকার অনেক ফুটবলার ও ক্রিকেটার জেলা পর্যায়সহ জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ও খেলছেন। হাই স্কুলে ওঠার পরই ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। তার মতে ‘ইচ্ছাশক্তি, চেষ্টা ও আত্মবিশ্বাস থাকলে সফল হওয়া সম্ভব যে কোনো কাজেই'। আর এই স্বপ্নকে নিয়েই প্রমীলা ক্রিকেটার হিসেবে নিয়মিত অনুশীলন সহ নিজ জেলা ও রাজধানীতে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলছেন নাসরিন আক্তার নীলা (নীলা ইসলাম)। ছোটবেলায় ভালো লাগার অন্যতম জায়গা ছিলো ক্রিকেট। সবার খেলাই ভালো লাগে, তবে পুরুষদের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান ও নারী ক্রিকেটে নিগার সুলতানার খেলা তার বেশি ভালো লাগে।
ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। বিশ্বের মাটিতে লাল সবুজের নিশান উড়ানোর অনন্য হাতিয়ার। এমন স্বপ্নটাই দেখছেন নীলা ইসলাম। ক্রিকেটের শুরুটা নিজ ইচ্ছাতেই, আর উৎসাহ পেয়েছেন পরিবারের কাছ থেকে। নীলা ইসলামের বাবার নাম নাছির মাঝি ও মায়ের নাম পারভীন বেগম। তার বাবা কোরবানি ঈদের ক'দিন আগে মারা গেছেন। তারা ২ বোন ও ১ ভাই। তার বোন মাশরুন চাঁদপুর লেডী প্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন এবং একমাত্র ভাই ফরহাদ হোসেন সিএনজি অটোরিকশার কাজের সাথে জড়িত।
নীলা ইসলাম বসবাস করছেন চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারস্থ ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব শ্রীরামদী এলাকাতে। তিনি পুরাণবাজার ৩নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন লেডি প্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে। বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন ও খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও বোলার।
ক্রীড়াকণ্ঠের প্রতিবেদকের সাথে গত রোববার আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর মাঠে প্রমীলা ক্রিকেটার নীলা ইসলামের আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন তার ক্রিকেট খেলা শুরু থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ খেলাধুলা নিয়ে। ক্রীড়াকণ্ঠের পাঠকদের জন্যে তার তুলে ধরা কথাগুলো হুবহু পত্রস্থ করা হলো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন?
নীলা ইসলাম : জ্বি, ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনাদের সকলের ও পরিবারের সদস্যদের দোয়ায় ভালো আছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলা কিংবা ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়েন কবে থেকে?
নীলা ইসলাম : আমি ছোটকাল থেকেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী ছিলাম। আমি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে লেডী প্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন থেকে ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়ি। আমি দশম শ্রেণী পর্যন্ত আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ক্রিকেট দলের হয়ে নিয়মিত অংশ নিয়েছি এবং অনেক স্কুলের সাথে ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীতে কবে থেকে, কার মাধ্যমে আসা?
নীলা ইসলাম : আমি আজ তিন বছর ধরে ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর সাথে জড়িত রয়েছি। আমি যখন আমার বাসায় আমার মায়ের কাছে ক্রিকেট খেলা এবং ক্রিকেট শেখার জন্যে বলি, তখন আমার মা আমাকে এই একাডেমীতে এনে ভর্তি করিয়ে দেন। আমি কলেজের পড়াশোনার অবসর সময়ে নিয়মিত মাঠে চলে আসি অনুশীলন করার জন্যে। এই একাডেমীতে আসলে একটি বিষয় ভালো লাগে, সেটি হলো একাডেমীর প্রধান ও বিসিবির ক্রিকেট কোচ শামিম ফারুকী, ক্রিকেট কোচ পলাশ কুমার সোম অনেক আন্তরিকতার সাথে ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেন। এছাড়া এই একাডেমীতে চাঁদপুর জেলা সদর সহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক ক্রিকেটার নিয়মিত অনুশীলন করতে আসেন। যখন ক্রিকেট অনুশীলন করতে নামি, তখন ছোট-বড় সকল ক্রিকেটার খেলাধুলার ব্যাপারে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এখানে অনুশীলনে আসলে ভালোই লাগে। মাঝে মাঝে আমাদের অনুশীলন চলাকালে আমাদের কাছে আসেন ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর সাবেক ছাত্র ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য মাহমুদুল হাসান জয় ভাই সহ জাতীয় ও ক্লেমন একাডেমীর সাবেক ছাত্র যারা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেন।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন?
নীলা ইসলাম : আমি ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ প্রমীলা ক্রিকেট খেলার জন্যে চট্টগ্রামে যাই। সেখানে চট্টগ্রাম শাহিনিং স্পোর্টস্ একাডেমীর কোচ ও কর্মকর্তা কুলসুমা স্যারের নজরে পড়ে যাই। তার মাধ্যমে চট্টগ্রাম শাহিনিং স্পোর্টস্ একাডেমীতে খেলার জন্যে ডাক পাই।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ঢাকাতে কোনো ক্লাবের হয়ে কি খেলেছেন?
নীলা ইসলাম : হ্যাঁ, আমি কুলছুমা স্যারের মাধ্যমে শাহিনিং স্পোর্টস্ একাডেমী ঢাকাতে খেলার সুযোগ পাই। প্রমীলা ক্রিকেট লীগের কোয়াইলিফাই দল হিসেবে ক্লাবটির হয়ে সুযোগ হয় আমার খেলার। আমি ২০২২ সালে এ ক্লাবের হয়ে পুলিশ ক্রিকেট একাডেমী ও ক্রিকেট একাডেমীর সাথে খেলি। সেই দুই ম্যাচে আমি দুটি উইকেট লাভ করি। আর চলতি বছর আমি ঢাকা শাহিনিং স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে শিশু-কিশোর একাডেমী, সুমন ক্রিকেট একাডেমী, আরবার ক্রিকেট একাডেমী, পুলিশ ক্রিকেট একাদশ ও বুড়িগঙ্গা ক্রিকেট একাডেমীর সাথে খেলার সুযোগ পাই। আমি ৫ ম্যাচের মধ্যে ৩ ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পাই। আমি ৫ ম্যাচে ৫টি উইকেট সহ ৪৮ রান করি। এছাড়া আমি ঢাকা ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টেও খেলার সুযোগ পেয়েছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমানে ঢাকায় কোন্ দলের হয়ে খেলছেন এবং কোন্ দায়িত্ব পালন করছেন?
নীলা ইসলাম : আমি বর্তমানে ঢাকা মিরপুর-১ এলাকার ভোলারটেক মাঠ সংলগ্ন আবদুল হাদি রতন স্মৃতি ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছি। আমি ওই দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছি। আমি যেই ক্লাবটিতে খেলছি সেই ক্লাবের কোচ সহ অন্যান্য স্যার অনেক আন্তরিক। তারা ক্রিকেট সহ খেলাধুলার ব্যাপারে অনেক সহযোগিতা ও উৎসাহ দেন।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরের ক্রিকেট নিয়ে?
নীলা ইসলাম : এ জেলায় এখন অনেক ক্রিকেটার রয়েছেন। প্রতিদিনই চাঁদপুরের ক্রিকেট একাডেমীগুলোতে তারা অনুশীলন করছেন। জেলা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন বয়সী ক্রিকেটারগণ রোদণ্ডবৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠে আসছেন, অনুশীলন করছেন। তারা কেবল অনুশীলনই করে যাচ্ছেন। তাদের জন্যে কোনো ক্রিকেট লীগ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে না। এ জেলাতে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এমন সময় ক্রিকেট খেলার আয়োজন করে, যেই সময় বৃষ্টি থাকে, আর নয়তো অন্য কোনো প্রোগ্রাম থাকে। ক্রীড়াসূচির কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের। যখন ক্রিকেটের মৌসুম, তখনই যেনো জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিয়মিত ক্রিকেট খেলার আয়োজন করে আমি সেই দাবি জানাই চাঁদপুর সদর-হাইমচর আসনের সংসদ সদস্য মেঘনাপাড়ের কন্যা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান সহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার যারা খেলাধুলার সাথে জড়িত রয়েছেন তাদের প্রতি। আমরা যেহেতু ক্রিকেট খেলি এবং ক্রিকেট খেলবো, সেজন্যে নিয়মিত চাঁদপুর স্টেডিয়ামে খেলাধুলা যেনো হয় সেই প্রত্যাশাই করছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেটে নারীদের কোনো বাধা আছে কি?
নীলা ইসলাম : পরিবার যদি সমর্থন করে, তাহলে মেয়েদের ক্রিকেটে আসতে সহজ হয়। তবে মেয়েদের ক্রিকেটের মূল্যটা ছেলেদের ক্রিকেটের তুলনায় কিছুটা কম। পেশা হিসেবে ছেলেদের ক্রিকেটকে যেভাবে দেখা হয়, সেভাবে দেখলে প্রমীলা ক্রিকেটের সব বাধা দূর হয়ে যাবে। ক্রিকেটের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে চিনেছে অনেক রাষ্ট্র। দেশের পরিচিতি ও দেশের সুনাম বয়ে আনতে ক্রিকেটকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। নারী খেলোয়াড়দের আগ্রহ আরও বাড়াতে হবে। তাহলে আমার মতো অনেক প্রমীলা ক্রিকেটারই মাঠে সহজে চলে আসবে। আমি ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে আমার পরিবারের সহযোগিতা পাচ্ছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেট নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
নীলা ইসলাম : ক্রিকেট নিয়ে যেহেতু পড়ে রয়েছি, সেহেতু ক্রিকেট নিয়েই আমার অনেক স্বপ্ন। আমি চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমীতে অনুশীলন করছি। একাডেমীর সকল ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি। এই একাডেমীর ছাত্রই বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল সহ বিভিন্ন স্থানে খেলছেন। আমি ক্রিকেটের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে চাই। আমার জেলা চাঁদপুরকে ক্রিকেটের মাধ্যমে পরিচিত করতে চাই। আমি সকলের সহযোগিতা ও দোয়া প্রত্যাশা করছি।