বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
  •   নির্মাণের এক বছর না যেতেই ফরিদগঞ্জ কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদের বেহাল দশা
  •   শেষ হলো পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা
  •   ফরিদগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  •   মোবাইল ব্যবহারে নিষেধ করায় শিশু শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৩:৫৮

ফরিদগঞ্জে খেলায় হেরে শিক্ষার্থীদের মারধর

এমরান হোসেন লিটন
ফরিদগঞ্জে খেলায় হেরে শিক্ষার্থীদের মারধর

ফরিদগঞ্জে ফুটবল খেলায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের বেদম মারধর করেছে বিজিতরা। এতে ২১ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ১০ জনকে চাঁদপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মারধরের শিকার হয়েছে উপজেলার ৪নং সুবিদপুর ইউনিয়নের শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। মারধরের সঙ্গে উপজেলা সদরের ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল বলে শোল্লা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার বেলা আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটেছে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।

অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ৪৯তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্ণামেন্টের প্রথম খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় বনাম শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করে। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে খেলা শেষ হয়। পরে, টাইব্রেকারে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ৩-১ গোলে বিজয়ী হয়। এতে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীরা মাঠে দৌড়ে আনন্দ উল্লাস করছিল। ওই সময়ে, আনন্দ উল্লাস বন্ধ করে দ্রুত গাড়িতে উঠে মাঠ ত্যাগ করার জন্য কয়েকজন কিশোর ও তরুণ বিজয়ীদের নির্দেশ দেয় ও বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে বেশ কিছু সংখ্যক ছেলে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে বেদম মারধর করে। এতে, অন্তত ২১ জন আহত হয়। কারও শরীর কেটে যায় ও নির্যাতনের চিহ্ন ফুটে ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলাকারীদের হাত থেকে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে। পরে, চিকিৎসার জন্য তাদের চাঁদপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তিকৃত আহতরা হলেন, আরাফাত (১০ম শ্রেণি), নুরুন্নবী (৯ম শ্রেণি), হোসেন (১০ম শ্রেণি), সিফাত (১০ম শ্রেণি), মারুফ (১০ম শ্রেণি), হৃদয় (১০ম শ্রেণি), জিহাদ (১০ম শ্রেণি) ও নাঈম (৯ম শ্রেণি), রাজন +১০ম শ্রেণী) অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্রীড়া শিক্ষক সুলতানা রাজিয়াকে দায়ী করেছেন। ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা হকিস্টিক, রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় ও বেদম মারধর করে। তিনি এ ঘটনায় হতবাক হয়েছেন এবং মন্তব্য করে বলেন, ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে সুপারিশ করেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ আর হাই স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া মারপিটের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি কোন ভূমিকা নেননি। উলটো, আমাদের ছেলেরা যখন মারধরের ভিডিও করছিল তখন সুলতানা রাজিয়া তাদের হাত থেকে দুটি ফোন কেড়ে নেয়।

শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য আবুল হাসনাত নয়ন পাটোয়ারী বলেন, খেলাটি জাতীয়ভাবে নির্দেশিত একটি খেলা। সেখানে আমাদের বিদ্যালয় খেলতে গিয়েছে, কিন্তু আমরা কেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উস্কানিতে এবং তাদের ছাত্রদের মাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলাম। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

এ ব্যপারে মুঠোফোনে কল দিলে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শোল্লা স্কুলের অধ্যক্ষ তো আর মাঠে উপস্থিত ছিলেন না। মারধরের সঙ্গে আমার স্কুলের ছেলেরা জড়িত নয়। এটা প্রাক্তন ছাত্ররা করেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, খেলার শেষ পর্যায়ে আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। মারধরের খবর শুনে আমি দৌড়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে যাওয়ার ব্যবস্থা করি। অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ক্রীড়া শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া মোবাইল ফোন কেন নিয়েছে- এটা তিনিই বলতে পারবেন। তবে, মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দিতে আমি তাকে বলেছি এবং ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ প্রাপ্তি বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেছেন, শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত করার জন্য আমার একজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি। তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমুন নেছা বলেছেন, খবর শুনেই আমি দ্রুত স্কুলে উপস্থিত হয়েছি। তখন আমাকে বলা হয়েছে বহিরাগতরা মারধর করেছে। সেখানে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও একাডেমিক সুপারভাইজার উপস্থিত ছিলেন। আমি তাদের বলেছি, আপনারা যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখেননি কেনো। অপরদিকে, “এ আর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মারধর করেছে” দাবী করায় শোল্লা স্কুলের অধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। ওই অভিযোগ ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে পাঠিয়ে দিয়েছি, যাতে এ্যাকশন নেয় ও সত্যটা বের হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘সুলতানা রাজিয়া মোবাইল ফোন কেন নিয়েছে, ফেরতও দিয়েছে’ এ বিষয়ে আমি দেখবো।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায় হাসপাতালে অসুস্থ ছাত্ররা চিকিৎসা নিয়ে প্রত্যেকের পরিবারের দায়িত্বে বাড়িতে ফিরেছেন। এবং বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তদন্তে নেমেছেন

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়