প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২২, ০০:০০
এবারের বিশ্বকাপ ল্যাটিনের
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
কিছুদিন শীতনিদ্রায় থেকে আবারো ফুটবল জ্বরে কেঁপে উঠেছে বিশ্ব। এ জ্বরের কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই, নেই কোনো প্রতিষেধক। আবহমানকাল থেকেই ফুটবল জ্বর বিশ্ববাসীকে জ্বরের ঘোরে নাচিয়ে আসছে। ক্রীড়া যে শিল্পে পরিণত হয় তা ইউরোপ এবং ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবলশিল্পীদের খেলা দেখলেই বুঝা যায়। মাঠে তারা যেন ফুটবল খেলে না, ছবি আঁকে পায়ের তুলিতে। ফুটবলের কালো মানিক এডসন অঁরাতেস দো নাসিমেন্তো যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঘুমিয়ে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছেন, তখন তাঁর দেশ ব্রাজিল, পাওলো মালদিনির দেশ ইতালি, চিরনিদ্রায় শায়িত কিংবদন্তি ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা মাঠে নেমেছে শিল্পের করতালিতে বিশ্বকে মুখরিত করে তুলবে বলেই। দুহাজার একুশ সালেই ইউরোপিয়ান ফুটবল এসোসিয়েশন (উয়েফা) এবং দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন (কনমেবল) চুক্তি করেছিল দুহাজার আটাশ সাল অব্দি, যাতে দুই ফুটবল মহাযজ্ঞের দুই চ্যাম্পিয়ন নিজেদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারে। জুনের সূচনায় সে ফুটবল দ্বৈরথে বেশ ভালোভাবেই নেচে উঠেছে ফুটবল বিশ্ব। মারকানায় স্বাগতিক ব্রাজিলকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা হয়েছিল কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন আর ওয়েম্বলি মাঠে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরোপের সাত পাহাড়ের দেশ হয়ে যায় উয়েফা চ্যাম্পিয়ন। সেই ওয়েম্বলিতেই লাতিন আমেরিকাকে মোকাবেলায় নামে ইউরোপ। একদিকে আর্জেন্টিনা আর অন্যদিকে ইতালি।
|আরো খবর
ফুটবল মূলত পায়ের খেলা হলেও আজকাল তা খেলা হয় হৃদয় দিয়ে এবং মুখ দিয়ে। মুখের খেলায় এতো বাড়াবাড়ি হয়ে যায় যে, তা শেষমেষ মারামারি-হাতাহাতিতে গড়ায়। সুদূর ইংল্যান্ডের খেলায় বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাঙ্গা বাধে। ফেসবুকজুড়ে চলে চাপান-উতোর। হৃদয়ের চাপ যায় বেড়ে, কেউ প্রিয় দলের হারে নিজের জীবনদীপ নিজেই নেভায়। এবার অবশ্য সেরকম কোনো ঘটনা চোখে পড়েনি। মেসির দল ইতালিকে তিন-শূন্য গোলে প্রায় ভূপাতিত করে জিতে নিয়েছে ফিনালিসিমা কাপ। রক্ষণশীল ঘরানার পজিশনাল ফুটবল খেলুড়ে ইতালি তেমন কিছুই করতে পারেনি ল্যাটিন আমেরিকার শিল্পের বিরুদ্ধে। মেসি গোল না পেলেও দিবালা, ডি মারিয়াদের গোলে আর্জেন্টিনা উতরে যায় ভালোভাবেই। বল দখলের দ্বৈরথ কিংবা মাঠের সকল পরিসংখ্যানেও এগিয়েছিল মেসির দল। এবারের বিশ্বকাপ মেসির শেষ বিশ্বকাপ। কাজেই ফিনালিসিমার ফলাফল আর্জেন্টাইনদের আশার আলো দেখিয়ে চলেছে। কিন্তু যে দুর্নাম নিয়ে মেসি আজও আফসোসের বাঁশি বাজিয়ে চলেছে, তা দূর করতে এখনও অনেক অনেক পথ বাকি।
পক্ষান্তরে সেলেসাওরা মাঠে নেমেছিল সেদিন এশিয়াকে যাচাই করে নিতে। কিন্তু মাঠে যে খেলা হলো তাতে এশিয়ার সেরা দক্ষিণ কোরিয়া হলায় গোলের মালা নিয়ে ঘরে ফিরেছে। পেনাল্টি হতে নেইমারের দুগোলসহ মোট পাঁচ-এক গোলে হেরেছে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রমাণ হয়ে গেল, এশিয়া এখনও ফুটবলশিল্পে ল্যাটিন আমেরিকার চেয়ে ঢের বেশি দূরে। এ দূরত্ব কমাতে হলে এশিয়াকে আরো বেশি ঘাম ঝরাতে হবে, আরো বেশি মেধাবী শিল্পী ফুটবলারকে পরিচর্যা করে তুলে আনতে হবে। গত দুয়েকদিনের খেলা হতে এটা পরিষ্কার, এবারের বিশ্বকাপ বোধ হয় হতে যাচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকার। তবে তা কার গলায় ঝুলছে সেটাই দেখার বিষয়।