প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:০০
ক্ষমতার পালাবদল: কাঠগড়ায় দীর্ঘদিনের দুই সঙ্গী, ইনুর মন্তব্যে রহস্য!
‘"দিন আমাদেরও আসবে": কাঠগড়ায় ইনুর হাসির বার্তা মেননকে, সময়ের প্রতীকী ঘুষি

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সাথী, কখনো মন্ত্রিত্বে সহকর্মী — আজ তারা দাঁড়িয়ে আছেন কাঠগড়ায়। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালতে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন যখন রিমান্ড শুনানির জন্য কাঠগড়ায়, তখনই এক পর্যায়ে ইনু হেসে মেননকে বলেন, “দিন আমাদেরও আসবে।”
|আরো খবর
প্রবীণ নেতা মেনন মুখে হাত দিয়ে শুনানি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন, ইনুর এই মন্তব্যে তিনি হালকা করে মুচকি হাসেন। আদালতের ভেতরে তখন উপস্থিত থাকা আইনজীবী, পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের মধ্যে বিষয়টি নজর এড়ায়নি।
এই দুই হেভিওয়েট নেতা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অংশ ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চলমান শুদ্ধি অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হচ্ছেন মন্ত্রী-এমপি ও জোটসঙ্গীরা। সেই ধারাবাহিকতায় রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয় ইনু ও মেননকে।
অসুস্থতার আভাস মেননের মুখে
শুনানির এক পর্যায়ে মেনন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানভীরকে বলেন, “কালকে হয়তো আমাকে হাসপাতালে তুলতে পারে।” বিষয়টি জানার পর আইনজীবী তানভীর ‘দৈনিক স্বদেশ বাংলাদেশ’কে বলেন, “উনি (মেনন) আসলে অসুস্থ। বয়স হয়েছে ৮৩ বছর। আদালত হয়তো কাল তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের অনুমতি দেবে।”
নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো
শুনানি শেষে আদালত ইনু ও মেননের বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর কড়া নিরাপত্তায় তাদেরকে আবার আদালত হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর দেশজুড়ে চলমান ধরপাকড়ে এ পর্যন্ত সাবেক মন্ত্রিসভার অন্তত ১৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, যাদের মধ্যে ইনু ও মেননের নাম উল্লেখযোগ্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একধরনের “পাওনার হিসাব” মিলিয়ে নেওয়ার সময়।
রাজনীতির উত্থান-পতনে ইনু-মেনন
এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনায়ক ইনু ও রাজপথের বামপন্থী সংগঠক মেননের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর তারা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বিএনপির ভাষায়, তারা ছিলেন ‘গণতন্ত্র হত্যার সহযোগী’।
বর্তমানে সেই সরকারই নেই, রাষ্ট্রক্ষমতা অন্যপক্ষের হাতে। সেই বাস্তবতায় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ইনুর সেই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য — “দিন আমাদেরও আসবে” — যেন সময়ের এক প্রতীকী ঘুষি।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু ইনু-মেনন গণতন্ত্র হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। আজ ইতিহাস তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।”
ফেসবুক প্রতিক্রিয়াও তীব্র
এমনকি ইনু ও মেননের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে অনেকে লিখেছেন, ‘কাঠগড়ায় ইনু-মেনন, ইতিহাস ঘুরছে ঠিকই।’
ডিসিকে/এমজেডএইচ