বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:০৭

গুমের ভয়াবহ চিত্র: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রতিবেদন : মো: জাকির হোসেন
গুমের ভয়াবহ চিত্র: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ছবি : প্রতীকী

গুমের ঘটনার পেছনের নির্মম বাস্তবতা উন্মোচন করেছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন। গত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮টি পর্যালোচনার পর উঠে এসেছে ভয়াবহ নির্যাতন, হত্যা এবং লাশ গুমের বিবরণ।

গুমের সংজ্ঞা এবং বৈশিষ্ট্য

প্রতিবেদনে গুমকে চারটি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে—

১. ভুক্তভোগীর স্বাধীনতা হরণ।

২. ঘটনার সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বা কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা।

৩. বন্দীর অবস্থান সম্পর্কে পরিবারকে অজ্ঞ রাখা।

৪. ভুক্তভোগীকে আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা।

গুম ও লাশ গুমের পদ্ধতি

গুমের শিকার ব্যক্তিদের সাধারণত সাদাপোশাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। অপহরণকারীরা নিজেদের পরিচয় গোপন করতে ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার পরিচয় ব্যবহার করত। প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগীকে চোখ বাঁধা এবং হাতকড়া পরিয়ে গোপন বন্দিশালায় নিয়ে যাওয়া হতো। প্রতিবেদনে আটটি গোপন বন্দিশালার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা র‍্যাব, ডিজিএফআই ও সিটিটিসি পরিচালিত।

গুমের পর ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ মুক্তি পেলেও অনেকের হত্যার ঘটনা উঠে এসেছে। হত্যার পর লাশ গুম করতে নদীতে ফেলা, রেললাইনে ফেলে পিষে দেওয়া অথবা সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো। ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ফেলার জন্য পোস্তগোলা ও কাঞ্চন ব্রিজের ব্যবহার ছিল অন্যতম।

নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা

অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ওপর চালানো নির্যাতনের নির্মম চিত্র উঠে এসেছে। এক ঘটনায় র‍্যাব ধানমন্ডি থেকে এক যুবককে তুলে নিয়ে ঠোঁট সেলাই করে দেয়। হত্যার সময় মাথায় গুলি করে হত্যা করা এবং লাশ নদীতে ফেলার ঘটনা ছিল প্রচলিত পদ্ধতি।

এক র‍্যাব সদস্যের বক্তব্য অনুযায়ী, এক ভুক্তভোগী নদীতে ঝাঁপিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করে হত্যা করা হয়। আরেক ঘটনায় রেললাইনে লাশ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করার বর্ণনা পাওয়া গেছে।

উচ্চপর্যায়ের সম্পৃক্ততা

গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এর মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরবর্তী পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ

কমিশন জানিয়েছে, গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেক সময় জানা থাকত না তারা কাকে এবং কেন হত্যা বা নির্যাতন করছে। ভুক্তভোগীদের অবস্থান জানতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হতো। এই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

গুমের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য এক গভীর সংকটের চিত্র তুলে ধরে। এই ঘটনাগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার না হলে, এটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উদাহরণ হয়ে থেকে যাবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়