মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

কৃষিক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাফল্য

ড. মোহাম্মদ হাসান খান

কৃষিক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাফল্য
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষি দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। কৃষকদের উন্নয়নে সবসময় কাজ করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কারণ তিনি জানতেন বাংলাদেশকে উন্নত করতে হলে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন করতে হবেই। তিনি জানতেন, এই দেশের কৃষকরা সবচেয়ে দুঃখি ও অবহেলিত। তাই বাংলাদেশ স্বাধীনের আগে এবং পরে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতেন বঙ্গবন্ধু। আমাদের জাতির পিতা কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করার জন্য সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। কৃষকদের সকল বকেয়া খাজনা তিনি মওকুফ করে দেন ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি। এছাড়াও ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু সরকার কৃষকদের জন্য সার, বীজ, সেচ পাম্প, কৃষিক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সহজলভ্য করে দেয়। জাতির পিতা বিনা মূল্যে এবং স্বল্প মূল্যে কৃষি উপকরণ কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বন্যায় ফসলের ভয়াবহ ক্ষতি হয়, তাই বন্যা নিয়ন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষিক্ষেত্রে ব্যয় করার জন্য ৩১ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কৃষি গবেষণা কাউন্সিল গঠন, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের আইনগত কাঠামো এবং ভিত্তি বঙ্গবন্ধুর অবদান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এইসব গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের কৃষিখাত খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। বঙ্গবন্ধু কৃষকদের জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করেন। বর্তমানে পুরস্কারটি ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ নামে পরিচিত।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা, কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেয়নি ঘাতকরা। ১৯৭৫ সালের পর কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন থমকে যায় এবং বন্ধ করা হয় বঙ্গবন্ধুর নেয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যাকে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত বলা যায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে শেখ হাসিনা কৃষিক্ষেত্র সার্বিক উন্নয়নে মনোযোগী হন। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

সরকারি হিসাব মতে, ১৯৭১-৭২ সালে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ২৮ শতাংশ ছিল, যা এখন ১০ শতাংশ। কৃষি জমি কমেছে জনসংখ্যা বাড়ার কারণে, অথচ কৃষি জমি কমলেও দেশে খাদ্য উৎপাদন কমেনি। কারণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধিন সরকার কৃষিব্যবস্থার আধুনিকায়ন করেছেন। অল্প জমিতে বেশি ফলন হচ্ছে বাংলাদেশে। ফলে যেখানে খাদ্যঘাটতি থাকার কথা, সেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশ।

১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে পিতার মতো কৃষিখাতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন শেখ হাসিনা। ঐ সময়ে তার গৃহিত কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলে কৃষিখাতের উন্নয়ন আবার থমকে যায়। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সরকার পুনরায় কৃষিব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। বিশেষ করে কৃষকদের বিনা মূল্যে সার প্রদান, প্রশিক্ষণ, ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, কৃষি গবেষণা, প্রণোদনা, ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য।

কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ১৫ আগস্ট, ২০২০ তারিখে বণিকবার্তা পত্রিকায় লিখেছেন, ‘দুধ, ডিম, মাংসসহ অন্যান্য পুষ্টিজাতীয় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে আশানুরূপ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থ বছরে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদন যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫ লাখ টন, ১৯ দশমিক ৯ লাখ টন ও ৬০৭ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যথাক্রমে ১ কোটি টন, ৭২ দশমিক ৬ লাখ টন এবং ১ হাজার ৬০০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন ২৭ দশমিক ১ লাখ টন থেকে বেড়ে ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।’ প্রথম আলো পত্রিকায় ২৬ মার্চ, ২০২১ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধান উৎপাদন হয়েছে ৫ কোটি ২৬ লক্ষ টন। বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ ৪র্থ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে ৩য়। দেশে প্রতিবছর উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টন সবজি। সবজি উৎপাদনের সঙ্গে ১ কোটি ২৬ লক্ষ কৃষক পরিবার জড়িত। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৯ লক্ষ টন। গত বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ টন। আলু উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ। এছাড়াও বিশ্বে কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ ২য়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে ৩য়, আম ও পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। পাট উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ ২য় এবং রপ্তানিতে ১ম। বিশ্বের মোট পাট উৎপাদনের ৪২ শতাংশই উৎপাদন হয় বাংলাদেশে।

২৭ জুন ২০২১, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের কয়েকটি তথ্য পাঠকদেরকে জানাতে চাই। গত বছর দেশে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয়েছে ১০২ লক্ষ টন। গত এক যুগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বাংলাদেশে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৩১ শতাংশ বেড়েছে। একযুগে সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৫৩৪ শতাংশ। ডাল, পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৪৩ ও ২৪৮ শতাংশ। আলু এবং তৈলবীজের উৎপাদন ৯৬ ও ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ায় গত ১২ বছরে বিভিন্ন ফসলের উন্নত ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়। সরকার সারের মূল্য কমিয়ে কৃষিকদের হাতের নাগালে এনেছে। আগে ১ কোটি ডিএপি সার ছিল ৯০ টাকা, সরকার তা ১৬ টাকা করেছে। টিএসপি সার ছিল ৮০ টাকা, যা করা হয়েছে ২২ টাকা। এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ইউরিয়া ২০ টাকা হতে ১৬ টাকা করেছে সরকার। কেবল তাই নয়, ভাল ফলনের জন্য কৃষকদের ফসলের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে ১৪ লক্ষ ১ হাজার ৫৮২ টন। কৃষকদের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের দেওয়া হয়েছে ৭০ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি। কৃষি পুনর্বাসন/প্রণোদনা পেয়েছে ৯৩ লক্ষ ৬৫ হাজার কৃষক। সেচ সুবিধা ১১.১২ লক্ষ হেক্টর সম্প্রসারিত হয়েছে। এই সরকার ১০ হাজার ৭৩৬ কি.মি খাল পুনঃখনন করেছে এবং ২৬ হাজার ১১৪ কিলোমিটার সেচনালা স্থাপন করেছে। রাবার-ড্যাম নির্মাণ করেছে ১১টি, ৯ হাজার ১৫টি সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজার ৪৩৪টি শক্তিচালিত পাম্প স্থাপন করা হয়। গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুনর্বাসন ১৯ হাজার ১০৮টি। এ ছাড়া ৩৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণ করেছে সরকার। এই বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪ প্রদান উপলক্ষে প্রেরিত প্রধানমন্ত্রীর বাণীতে এই সকল তথ্য রয়েছে।

সার্বিক বিবেচনায় বলা যায় যে, বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আর এই সাফল্যের কারিগর আর কেউ নয়, বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষি বান্ধব নীতির কারণে কৃষিতে অর্জিত সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল-মডেলে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রের অভাবনীয় উন্নয়ন বহু আগেই বিশ্ববাসীর নজরে এসেছে। কৃষিক্ষেত্রে অবদান রাখায় জননেত্রী শেখ হাসিনা আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা থেকে ‘সেরেস পদক’ লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের মানুষের যোগ্য অভিভাবক, তার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। তার কারণেই বিশ্বের কাছে অনুসরণীয় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

ড. মোহাম্মদ হাসান খান : সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চাঁদপুর জেলা। সম্পাদক ও প্রকাশক, নাগরিক বার্তা।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়