মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সবুজ বিপ্লব ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ

মোঃ নাছির উদ্দিন খান
সবুজ বিপ্লব ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ

জেন-জি’র হাতে দেশে যে পরিবর্তন এসেছে তা সমস্ত পৃথিবীর সব আন্দোলনের চেয়ে মর্মগত দিক থেকে কিছুটা হলেও ভিন্ন। এই আন্দোলনে বিপ্লবীরা সমগ্র দেশকে এটা বুঝিয়েছে যে, ‘আমরা টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউবে আচ্ছন্ন হতে পারি কিন্তু প্রয়োজনে নিজেকে উজাড় করতেও জানি, দেশের জন্যে, দশের জন্যে বিলিয়ে দিতে পারি নিজের জীবন। এর ফলাফল সবারই জানা।

সম্প্রতি বন্যায় দেশের তরুণ থেকে বুড়ো সমগ্র জাতি বুঝিয়ে দিয়েছে দেশটা আমাদের সবার, দেশের কোনো এক জেলার মানুষ বিপদে পড়লে সারা দেশের মানুষের বিপদ ভাবি আমরা। যেভাবে সমগ্র দেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে বন্যা আক্রান্ত এলাকার মানুষের বিপদে। এ থেকে বেঝা যায়, এখনই সময় ইতিহাস পাল্টে দেবার। এ ইতিহাস উৎপাদনের ইতিহাস, এ ইতিহাস সবুজায়নের ইতিহাস।

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া এই আন্দোলনের ফলে আমরা এই প্রজন্মের অগণিত বিপ্লবীর সন্ধান পেয়েছি। এমন সন্ধান, যে কোনো মুহূর্তে আগ্নেয়গিরি থেকে লাভার মতো হবে উদ্গীরণ। যে লাভা মুহূর্তেই ভস্ম করে দিতে পারে সব কিছু। আর হলোও তাই।

কিন্তু এমন একটা দেশে এত এত বিপ্লবী থাকতে সে দেশকে কেনো বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়? কেনো কোনো এক দেশ পেঁয়াজ না পাঠালে পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করতে হয়? শুধু পেঁয়াজই না, এমন অনেক ভোগ্য সামগ্রীই আমদানি করতে হচ্ছে এদেশকে। আমদানি নির্ভরতা বাড়ার কারণে ডলার সঙ্কটে তা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, খাদ্যশস্যের চাহিদা ও উৎপাদনের নানা অসংগতি এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে খাদ্যশস্যের এই আমদানি নির্ভরতা।

সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয় ১৯৪৪ সালে, মেক্সিকোয়। মূলত উচ্চ ফলনশীল গম জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ বিপ্লবের যাত্রা শুরু। এর নেতৃত্ব দেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৃষি বিজ্ঞানী ড. নরমোন ই বোরলগ। ১৯৪৩ সালে মেক্সিকো যেখানে তার প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক শস্য বিদেশ থেকে আমদানি করত, সেখানে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৫১ সালের মধ্যেই ওই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এবং ১৯৬৪ সালে মেক্সিকো প্রায় অর্ধ মিলিয়ন টন গম বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়।

২০২৪-এর এই আন্দোলনে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যেভাবে যুক্ত হয়েছে, তাতে মনে হয় এই সকল বিপ্লবীর অন্তরে যদি একবার সবুজ বিপ্লবের চিন্তার বীজ বপন করানো যায়, তবে এই দেশকে ভিন দেশ থেকে পেঁয়াজ, রসুন, সবজি সহ নিত্য পণ্য সামগ্রী কিনে এনে খেতে হবে না। এদেশের আনাচে কানাচে এক একজন হয়ে উঠুক বিপ্লবী কৃষক। এদেশের অলিতে গলিতে গড়ে উঠুক সবজি ও ফসলের খামার। গোলাপ বাগান, পাতা বাহারি ও নানান রকমের ফুলের বাগান নিয়ে পড়ে থাকা যুবক-যুবতী যদি একবার এই মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হতে পারে, তবে এই দেশকে পেছন থেকে টেনে নেওয়ার সাধ্য কারো নেই।

এদেশের হাজার হাজার দালানের ছাদ ফুলের বাগানে ছেয়ে যেতে পারে, কবুতর ও অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে সবজি বাগান, মসলা বাগানে হলে মন্দ কী? এদেশের গ্রাম গঞ্জের রাস্তার পাশ পড়ে আছে অবহেলায়। সেগুলো পরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার হলে অসুবিধা কোথায়? এদেশের অলিতে গলিতে যত অলস জমি আছে তা ব্যবহৃত জমির থেকেও কম নয়। পরিকল্পিত ভাবে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যদি দেশের সকল অলস জমি বিপ্লবীদের দেওয়া হয়, কৃষকদের যদি যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়, আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, তাহলে এদেশের মানুষের জন্যে বিদেশ থেকে টমেটোসহ অন্যান্য সবজি কিংবা গম, ভুট্টা কিনে আনতে হবে না। এদেশের প্রত্যেক ঘরেই গড়ে উঠবে ব্যক্তিগত কৃষি খামার। যদি রাষ্ট্র এসব পারিবারিক খামারকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে একদিকে যেমন গণহারে এসব খামার গড়ে উঠবে, তেমনি ভাবে পণ্য আমদানি কমে যাবে। দেশীয় সবজি, মসলা এসবের দামও কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমাদের দেশের নিত্য পণ্য সামগ্রীর যে সঙ্কট তা থেকে উত্তরণের জন্যে সবুজ বিপ্লবের বিকল্প কই? বিদেশ থেকে কিনে এনে ডলার সঙ্কট না বাড়িয়ে দেশের আনাচণ্ডকানাচে যে পরিমাণ জমি অলস পড়ে আছে, তা যদি এই বিপ্লবী জনতাকে যথাযথ ব্যবহারের উপায় ও প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে এই দেশে সবুজ বিপ্লব সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এজন্যে প্রথমেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে শিক্ষক সমাজকে। যেহেতু এবারের বিপ্লব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের হাত ধরে এসছে। তাহলে এই সবুজ বিপ্লবের কাজটুকুও তাদের দ্বারা সম্ভব। এজন্যে শিক্ষকদের রাখতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। দেশের প্রয়োজনে শিক্ষকগণ যথাযথভাবে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের ধারণার বীজ বপণ করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান এই সবুজ বিপ্লবে ভূমিকা রাখতে পারবে। তাহলে এদেশের খাদ্য সঙ্কট পালাতে বাধ্য হবে। সমৃদ্ধ হবে দেশ। শান্তিতে থাকবে আপামর জনতা।

মোঃ নাছির উদ্দিন খান : সহকারী শিক্ষক, গৃদকালিন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফরিদগঞ্জ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়