বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

প্রবীণ উৎসব : জীবনের জয়গান

হাসান আলী
প্রবীণ উৎসব : জীবনের জয়গান

প্রবীণের আলাদা কোনো উৎসব নেই। সবার সাথে উৎসবে যোগ দেয়ার সুযোগ পেলে খানিকটা আনন্দ-ফূর্তি, হৈচৈ করে নিজেদের চাঙ্গা করতে পারে। প্রবীণরা উৎসবে অংশ নিতে চায়। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো প্রাণে শক্তি জোগায়। নিঃসঙ্গ প্রবীণের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক সময় কষ্ট ও ব্যথা-বেদনার। বেশির ভাগ প্রবীণ ধর্ম পালনে অধিক মনোযোগী হয়ে নিঃসঙ্গতা কাটাতে চায়। পরকালের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমাদের প্রতিটি উৎসবই তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে উদযাপিত হয়। উৎসব সাজানোর সময় প্রবীণদের কথা তেমন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় না।

উৎসবে সব বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ সহজ করা খুবই জরুরি বিষয়। প্রতিবন্ধী মানুষ আনন্দ-উৎসবে সামিল হলে উৎসব বৈচিত্র্যপূর্ণ হবে। আমাদের দেশে সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসব হলো পিকনিক বা বনভোজন। বিশেষ করে শীতের সময় এই আয়োজনটা সবচেয়ে বেশি করা হয়। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন দলবেঁধে দর্শনীয় স্থান বা রিসোর্টে সারাদিন মুখরোচক খাবার, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যাফেল ড্র ইত্যাদি আয়োজন করে। এসব আয়োজনে প্রবীণের দুর্বল অংশগ্রহণ থাকে কিংবা মোটেও থাকে না। পিকনিকে প্রবীণদের জন্যে আলাদা করে কোনো আয়োজন তেমন একটা চোখে পড়ে না। আয়োজকেরা ভুলে যান যে পিকনিকে প্রবীণরাও আসেন। কেউ কিছু মনে করতে পারে এই ভাবনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা প্রবীণদের মধ্যে আছে। পিকনিকে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে যানবাহনে প্রায় ৭/৮ ঘণ্টা লাগে। দীর্ঘসময় ধারে যানবাহনে প্রবীণদের বসে থাকা কষ্টের ও বিরক্তিকর।

গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, পুনর্মিলনীতে আমাদের প্রবীণরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। এ উৎসবগুলোতে যেসব আয়োজন থাকে তাতে অংশগ্রহণ করতে টাকা-পয়সা খরচ হয়। অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্কটের কারণে প্রবীণরা উৎসবে যোগ দিতে আগ্রহী হন না। সাহিত্য সম্মেলন, কবিতা উৎসব, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, নাটক, সিনেমায় প্রবীণদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রবীণরা প্রভূত আনন্দ লাভ করে। উৎসবে অংশগ্রহণ সহজ-স্বাভাবিক আনন্দদায়ক করতে আয়োজকরা সবসময়ই সচেতন থাকেন। এখন সময় এসেছে প্রবীণদের উৎসবে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে তোলা। সকল উৎসবকে প্রবীণবান্ধব করে আয়োজন করা। প্রবীণদের জন্যে আলাদা অথবা প্রবীণদের মুখ্য ভূমিকায় রেখে প্রবীণ উৎসবের আয়োজন করা। খাওয়া-দাওয়া উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফলে খাবার প্রবীণবান্ধব হওয়া দরকার। খাবার মুখরোচক, সুস্বাদু, নিরাপদ হলে উৎসব জমজমাট হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রবীণরা হাসি-খুশি, আনন্দে থাকলে তাঁদের অসুখ-বিসুখ তুলনামূলকভাবে কম হবে। আমাদের দায়িত্ব হবে প্রবীণদের সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং উৎসবে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করা।

সামাজিক পরিবর্তনের ফলে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে স্বামী-স্ত্রীকেন্দ্রিক একক পরিবারের উৎপত্তি হয়েছিলো। সেই একক পরিবারও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। নারীরা ব্যাপকভাবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের কারণে স্বামী-স্ত্রীর কর্মস্থল আলাদা হয়ে গেছে। প্রায় এক কোটি কর্মজীবী মানুষ বিদেশে অবস্থান করায় স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে প্রবীণদের পরিবারে দেখা-শোনা, সেবা-যত্ন পাওয়া চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। বিপুল সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে হলে উৎসবের বিকল্প নাই।

মানুষ সমাজে বাঁচতে চায়, সামাজিক জীবনই কাম্য। অস্তগামী সূর্য ডোবার সময় পুরো আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে। সূর্য ডোবার দৃশ্য উপভোগ করার জন্যে হাজার হাজার মানুষ উদ্গ্রীব হয়ে অপেক্ষা করে। তেমনি মানুষের জীবনের শেষের দিনগুলো রঙিন করে সাজিয়ে নিতে হবে, যা দেখে অন্যরা আনন্দ লাভ করবে। ব্যক্তি নিজেও জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে, আনন্দিত হবে। জীবনকে উদযাপিত করতে হবে। জীবন শুধু অনুশোচনা, নালিশ, দুঃখ-দুর্দশা কষ্ট ভোগের জন্যে নয়। প্রবীণ জীবনে বেশির ভাগ মানুষ পরিপূর্ণতায় থাকে। স্বাধীন জীবন-যাপন করার সুযোগ আসে। দায়-দায়িত্ব তুলনামূলকভাবে কমে আসে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা কম-বেশি রয়েছে। সেই দুঃখ-কষ্ট প্রবীণ বয়সে বারবার মনে করে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয় না। দুঃখের কাহিনি বারবার মনে করে ভারাক্রান্ত হয়ে লাভ নাই। দুঃখ-কষ্ট মোকাবিলা করতে হবে আনন্দ লাভ করে। আনন্দ পেতে এবং আনন্দ দিতে ব্যক্তির বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। প্রবীণকেই আনন্দ লাভের জন্যে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা উপর্যুক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণদের জন্যে প্রবীণ উৎসবের আয়োজন করেছি। রেজিস্ট্রেশন করা দেড়শ’ প্রবীণ ঢাকার ধানমন্ডি সোবহানবাগের গ্রিন গার্ডেন রেস্টুরেন্টে আজ মিলিত হবো। আমরা চাই গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে বিবেচনাসম্পন্ন মানুষরা প্রবীণবান্ধব নানা রকমের উৎসবের আয়োজন করুক। যাতে করে প্রবীণরা সহজে এই ধরনের উৎসবে যোগ দিয়ে পরিচিত, জানাশোনা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। প্রবীণ উৎসব হোক জীবনের জয়গান।

হাসান আলী : প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়