বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শহীদ আল্লামা ফারুকী (রহঃ) সুন্নিয়তের সুবাস ছড়িয়েছেন
মোঃ আবদুর রহমান গাজী

শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ছিলেন সৎ-সাহসী, ন্যায়পরায়ণ, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্বশীল এবং রাসূলপ্রেমে সিক্ত এক বিদগ্ধ আলেমে দীন। তিনি ছিলেন নবী কারীম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর একজন প্রকৃত আশেক। অপরদিকে তিনি ছিলেন দুশমনে রাসূলদের জন্যে চরম বিভীষিকা। সুন্নীয়তের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে তিনি তাঁর অবস্থান মজবুত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সুন্নীয়তের পক্ষে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ন্যায় এবং সত্য কথা বলতে কখনো তিনি ভয় পেতেন না। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিলো অপরিসীম। প্রতি বছর ১২ রবিউল আওয়াল মাসে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তাঁর উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে নাত মাহফিল, আলোচনা ছিল লক্ষ্যণীয়।

মিডিয়া জগতে যখন বাতেল ফের্কা

মিডিয়া জগতে যখন বাতেল ফের্কার ঘোমটা মৌ-লোভীগুলো সাধারণ মুসলমানকে গোমরাহির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন তিনি ইসলামের সঠিক ইতিহাস এবং কুরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরে তাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। সমগ্র পৃথিবী পরিভ্রমণ করে ইসলামের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস এবং নবী-রাসূল ও সাহাবাগণের মাজার এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ইতিহাস কুরআন-হাদিসের আলোকে তাঁর কাফেলা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরতেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শহীদ আল্লামা ফারুকী (রহঃ ) সুন্নিয়তের সুবাস ছড়িয়েছেন।

জন্ম

শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী ২৪ নভেম্বর ১৯৫৯ সালে পঞ্চগড় জেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জামসেদ আলী ছিলেন একজন গুণী আলেম। তিনি এমন একজন সুন্নিয়তের বীর সৈনিক ছিলেন, যিনি লাখো কোটি সুন্নি মুসলমানের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। তিনি সারাদেশে ওয়াজ-মাহফিল করতেন, সুন্নিয়াতের খেদমত করতেন। সুন্নিয়াতের পক্ষে যুক্তিযুক্ত প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করতেন, তাঁর মতো সাহসী কথা বলার মতো আলেম সুন্নিদের মধ্যে খুবই কম।

শিক্ষা জীবন

শহীদ আল্লামা শায়খ নুরুল ইসলাম ফারুকী তাঁর নিজ গ্রামে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে নীলফামারী জেলার ডোমার থানার অন্তর্গত চিলাহাটি জামিউল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং একই মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। ১৯৭৯ সালে প্রাচীনতম ঐতিহাসিক ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাযিল ও কামিল (হাদিস বিভাগ) ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৮১ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জগন্নাথ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে স্নাতক করেন। তাঁর জ্ঞান ও মেধার প্রখরতা এমন ছিলো যে তিনি ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখি, বক্তৃতা এবং কোরআন তেলাওয়াতে প্রথম স্থান অধিকার করতেন।

দায়িত্ব পালন

তিনি ছারছীনা শরীফের মুবাল্লেগ ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রথমে পুরাণ ঢাকার রায়সাহেবের বাজার জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কিছুদিন পর ঢাকা কেরানীগঞ্জের নূরানীয়া চিশতীয়া আলীয়া মাদ্রাসার প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া তিনি ১৯৮৯ সালে প্রথম হজ গমনের উদ্দেশে মক্কায় যান। সে বছর জেদ্দা বিমানবন্দর মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান।

শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী মক্কা মোয়াজ্জামায় আল্লামা সায়েদ মোহাম্মদ মালিকি আলাদি (রাঃ) রওজায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে দায়িত্ব পালনের পর আবার তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। এ সময় ঢাকাসহ বিভিন্ন মসজিদে ৩৩ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। আবার ছারছীনার পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রঃ) মাজারে খেদমত করেন।

সর্বশেষ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত হযরত খাজা শরফুদ্দিন চিশতি (রঃ)-এর মাজারে খাদেম ও সুপ্রিমকোর্ট জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জানা যায়, মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী ইসলামী মিডিয়া জনকল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। পূর্ব রাজাবাজার জামে মসজিদের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন এবং মেঘনা ট্রাভেলস্ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন।

সফর

নুরুল ইসলাম ফারুকী কাফেলা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহু দেশ ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, ভারত, শ্রীলঙ্কা, জর্ডান, তুরস্ক, ইতালি, ইরান, মিশর ইত্যাদি দেশে বহুবার ভ্রমণ করেছেন।

প্রকাশনা

আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী কয়েকটি বই লিখেছেন। তাঁর বইগুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বায়েদে সুফিবাদভিত্তিক। সর্বশেষে ‘মারেফুল হারামাইন’ বইটি লিখেছেন। বইগুলোতে ইসলামের স্থাপত্য বা অবিকৃত রূপগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

ওফাত

২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর ১৭৪, পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় দুর্বৃত্ত পরিচয়ে ইসলামী চরমপন্থিরা তাঁকে গলা কেটে হত্যা করে। তাঁর ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী বলেন, রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর বড়ভাই ফয়সাল দরজা খোলা পেয়ে বাসায় ঢুকে প্রথমে বসার ঘরে থাকা তাঁর ভাই মারুফের বাঁধন খুলে দেন। পরে খাবার ঘরে গিয়ে বাবাকে গলা কাটা ও নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খুবই নৃশংসভাবে তাঁকে হত্যা করে ঘাতকেরা, যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। আল্লাহ্ তাঁর শাহাদাতকে কবুল করুন, আমিন। তাঁর নামাজে জানাজায় লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। পরে তাঁকে তাঁর নিজে গ্রামে (পঞ্চগড়) বাবা ও মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়। প্রতিদিন তাঁর মাজার জিয়ারত করার জন্যে অনেক মানুষ তাঁর সমাধিস্থলে উপস্থিত হয়। প্রতি বছর তাঁর ওফাতবার্ষিকী সারাদেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন পালন করে থাকে।

আজ সারাদেশে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী রাহমাতুল্লাহ আলাইহির মাগফেরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা করবেন এবং সকল স্তরের মানুষ এ হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়