প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
‘ঋণ’ কখনো শোধ হবার নয়, সে গল্পটি আমরা আবারও জেনেছি বিল গেটস আর পেপার বিক্রেতার মাধ্যমে। এটি গল্প নয়, এটিই বাস্তবতা। বলা হয়নি, এ কথা বা বলা হয়ে উঠেনি। পাছে লোকে কিছু বলে সে ভয়তো আছেই।
২০১৮ তে আমার ছোট ছেলেটি ভর্তি হয় ঢাকা সিটি কলেজে। যদিও আমি চেয়েছি ও আরো দুটো বছর আমার কাছে অর্থাৎ চাঁদপুরে থাকুক। আমি চাঁদপুর কলেজে আছি। আমাদের সুবিধা হবে। ওর কথার যুক্তি ছিলো, বলতো দু বছর পরে ঢাকায় গেলে আরো দু বছর পরে আমি ঢাকা ছাড়ার চিন্তা করবো। আমি চার বছর পিছিয়ে যাবো। আমি এখনই যাই। আমি তখন চেন্নাই চিকিৎসার জন্যে। ও সিটি কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে। বড়টি আদিত্য আগে থেকেই ঢাকাতে। চাঁদপুরে আমি একদম একা। ভাই-বোন-মা সবাই ঢাকায়।
ছোটটি কলেজের পাশে একটি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা শুরু করে। হাঁটা পথ। বিড়ম্বনা ঢাকা কলেজ। প্রায়শ দু কলেজের ছাত্রদের মারামারি। কিচ্ছু না রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, কিছু একটা প্রসঙ্গ এনেই হেনস্তা করে, মোবাইল টাকাণ্ডপয়সা ছিনিয়ে নেয়, বেদম মারধর করে। ঢাকা কলেজের ছাত্ররা যেহেতু সরকারি সুতরাং তাদের দাপট অনেক বেশি। মায়ের মন আমার। কী দুশ্চিন্তা আমার! সীমিত আয়ের সংসার। তিনজন তিন জায়গায়। কে কাকে দেখে। চাকুরি করি বিধায় ওকে সবসময় দেখতেও যেতে পারি না।
আমার ছেলে স্বাভাবিকভাবেই ছোটখাট। এর মধ্যে আবার হোস্টেলে তার রুমমেট ইয়াবাসেবী। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। ঢাকায় আসার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠলাম। ২০১৫ সালেও আসার চেষ্টা করেছি কিছুদিন। ও তখন বেঙ্গল পরম্পরাতে চান্স পেয়েছে। ওর বাবা ঢাকাতে চিকিৎসা নিচ্ছে। মন্ত্রী মহোদয় তখনও জানতেন আমার বিষয়গুলো। চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু হয়নি।
আমার কলেজের ছাত্র আনোয়ার হোসেন জীবন, আমার ছেলেসম (প্রত্যেক ছেলে-মেয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা তোমরা আমাকে যে পরিমাণ ভালোবাসা দিয়েছো) ও আমাকে ২০১৫ সালে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসে। কৃতজ্ঞতা তার কাছেও।
ঈশ্বরের উপহার সাথে নিজের অপরিসীম দৃঢ় মনোবল, কর্মপরিধি, সক্ষমতা, পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়েই চাঁদপুরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় এমপি নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালে শিক্ষামন্ত্রী মনোনীত হলেন।
দেরি হলো না। শপথ নেয়ার ৭ দিনের মাথায় আমাকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা নিলেন। আমি ছেলেদের নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা করানোর সুযোগ পেলাম। মা হিসেবে এ ঋণ শোধ হবার নয়। আমার জন্মদাতা আমার চাঁদপুরের মন্ত্রী মহোদয়। ১ম জন্মদাতা মা-বাবা, দ্বিতীয় জন্মদাতা আমার সন্তানরা, ৩য় জন্মদাতা শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া সোনার বাংলায় সোনার মানুষ। মানবিক মানুষ। এসব ঋণ শোধ হবার নয়। শুধু অনুভবে থাকবে একজন ডাঃ দীপু মনি আছে বিধায় একজন মা তার সন্তানদের নিজের কাছে রাখতে পেরেছে, এবং পেশার জন্যে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। কোনোভাবেই এ ঋণ শোধ হবার নয়। অপরিসীম শ্রদ্ধা।
তৃপ্তি সাহা : একজন মা, লাইব্রেরি উন্নয়ন কর্মকর্তা, মাউশি।