বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

মধ্যবিত্ত প্রবীণ নারীর চ্যালেঞ্জ

হাসান আলী

মধ্যবিত্ত প্রবীণ নারীর চ্যালেঞ্জ
অনলাইন ডেস্ক

মধ্যবিত্ত প্রবীণ নারী বলতে বুঝানো হয়েছে যেসব নারীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সামর্থ্য রয়েছে। প্রবীণ বয়সে নারীর চারটি পর্যায় থাকে। স্বামীসহ, তালাক প্রাপ্ত, বিধবা ও অবিবাহিত জীবন। স্বামীসহ প্রবীণ জীবনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রবীণ নারীর স্বামী তুলনামূলকভাবে অসুস্থ অবস্থায় থাকেন। তাকে স্বামীর দেখাশোনা, খাওয়া দাওয়া, চিকিৎসা সেবায় সহায়তা করতে হয়। নাতি-নাতনিদের খোঁজ খবর, দেখাশোনা, স্কুলে আনা-নেয়া, বাসায় রান্না তদারকি করতে দেখা যায়। ছেলেমেয়ের সংসারে থাকলে তাদের অবর্তমানে পারিবারিক দায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। যে সকল প্রবীণ দম্পতি নিজেদের বাড়িতে কিংবা আলাদা বাসায় থাকেন তারা মাঝে মধ্যে ছেলে-মেয়ের সাথে দেখা করতে যান। দেশে-বিদেশে ছোট নাতি-নাতনিদের দেখভাল করার জন্যে চলে যান। অসুখণ্ডবিসুখে ছেলে, মেয়ে, জামাতা, পুত্রবধূর সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। স্বামীকে বাসায় রেখে বিভিন্ন জায়গায়, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। পারিবারিক নানা জটিলতা সামনে চলে আসলে প্রবীণ নারীকে চাপ প্রয়োগ করা হয় কিংবা অভিযোগ-নালিস-দোষারোপে অশান্ত করে তোলে। এই বয়সে অনেকেই স্বাভাবিক যৌন কামনার অতৃপ্তি নিয়ে মানসিক কষ্টে ভোগেন।

তালাক প্রাপ্ত নারী বেশিরভাগই অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেন। কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তালাক এড়ানো যেতো সেই আলোচনা মাঝে উস্কে দেয় কেউ না কেউ। তালাকপ্রাপ্ত নারীর একাধিক ঘরের সন্তান থাকলে তাদের সাথে আবেগিক সম্পর্কের টানাপোড়েন মাঝে মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করে। তালাকপ্রাপ্ত প্রবীণার সাথে বন্ধুত্ব করার আগ্রহী পুরুষের দেখা মিললেও বিয়ের পাত্র মিলে না। আবার যারা পাত্র হিসেবে আগ্রহ দেখান তাদের পাতে নেয়া যায় না। মোট কথা এই বয়সে কারো সেবা কর্মী হিসেবে বিয়ের পিঁড়িতে বসা খুবই বিরক্তিকর এবং অসম্মানজনক। এই প্রবীণরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়ে কিংবা ভাই-বোনদের সাথে থাকেন। আবার কেউ কেউ একাকী থাকেন।

বিধবা প্রবীণারা তুলনামূলকভাবে ভালো থাকেন। ছেলে-মেয়ে আত্মীয়-স্বজনেরা শ্রদ্ধা-ভালোবাসার চোখে দেখেন, কিন্তু বিয়ে দেয়ার জন্যে তেমন কোনো তাগিদ অনুভব করেন না। নিজের কোনো সংসার না থাকায় ছেলে-মেয়ের সংসারে মেহমানের মতো জীবন কাটাতে হয়।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের তেমন সুযোগ পাওয়া যায় না। কারো কারো অতি প্রবীণ বাবা-মা থাকেন তাদের দেখাশোনা সেবা-যত্ন করার দায়িত্ব মাঝে মধ্যে বর্তায়।

অবিবাহিত প্রবীণ নারীরা মূলত বাবা-মার সাথে থাকেন। প্রবীণ বাবা-মায়ের সেবা-যত্নের দায়িত্বভার গ্রহণের ফলে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ সংকুচিত হয়ে উঠে। বাবা-মার মৃত্যু হলে পরিবারের নিকটতম কারো সাথে থাকেন। আবার কেউ কেউ একাকী থাকেন । ঘরের বাইরে যাবার তেমন আগ্রহ বোধ করেন না। মৃত্যুর চিন্তায় আচ্ছন্ন হতে দেখা যায়।

মধ্যবিত্ত প্রবীণ নারীকে সংসার পরিচালনা, ভরণ পোষণের জন্যে আয়-রোজগার করতে হয় না। আবেগিক সম্পর্কগুলো শুকিয়ে যাবার কারণে নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাসা ভাসা দায়সারা গোছের সম্পর্ক বজায় থাকে। বিয়ে, জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করা ছাড়া বাইরে তেমন একটা বেরুতে পছন্দ করেন না।

যে সকল প্রবীণা কম বয়সে লেখালেখি, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন তারা মোটামুটি বাইরে বেরুতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ সামাজিক সমালোচনার ভয়ে স্বাভাবিক যৌন কামনার অতৃপ্তি মনের মধ্যে জমা করে রাখেন।

অনেকেই পুরুষ অতিথিদের এড়িয়ে চলেন কিংবা বাসায় পুরুষ অতিথি আপ্যায়নে শিথিলতা দেখান। আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। একটা সময় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। বয়স যত বাড়তে থাকবে নিঃসঙ্গতা ততই বাড়তে থাকবে। যারা কানে কম শোনে, চোখে কম দেখে, মুখে দাঁত নেই তাদের সামাজিক যোগাযোগ ছোট হয়ে আসে। স্ট্রোক, আলঝাইমার্স হলে প্রবীণারা অনেক বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। বিষণ্ন ও হতাশাগ্রস্ত মানুষের পক্ষে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা খুবই কঠিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যবিত্ত প্রবীণ নারীর ছেলে মেয়েরা মোটামুটি ব্যস্ত জীবন পার করে। মায়ের সাথে তাদের সৌজন্যমূলক কথাই বেশি হয়- যেমন লাঞ্চ-ডিনার করেছো? ওষুধপত্র লাগবে? কিছু আনতে হবে?

এ ধরনের মামুলি কথাবার্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। চলাফেরায় অচল হয়ে পড়লে পেশাদার সেবা কর্মীর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, যাতে করে দৈনন্দিন কাজ কর্ম স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করতে পারে। মধ্যবিত্ত প্রবীণ নারী বুদ্ধি বৃত্তিক চর্চা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে যত বেশি সম্পৃক্ত হবে তত বেশি নারীর অনাগত দিনগুলো আনন্দময় হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে। প্রবীণারা দুর্বল, নির্ভরশীল হবার সাথে সাথে সহায়-সম্বল বেহাত হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। মধ্যবিত্ত নারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

লেখক : সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়