শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

ক্ষমতা বনাম যশ
অনলাইন ডেস্ক

ক্ষমতাধারী মানুষ সর্বদাই অহংকারী। ক্রমে ক্রমে সে হয়ে যায় পায়াভারী। তখন সে হয়ে যায় বেহুঁশের মানুষ। বেশি ক্ষমতাধর ব্যক্তি যশস্বী হতে পারে না। ক্ষমতার বাহাদুরি একান্তই ক্ষমতাসীন থাকা পর্যন্ত সীমিত। যশের বাহাদুরি সমাজের সর্বস্তরে সর্বজনীন। বর্তমান যুগে ক্ষমতার উৎস হলো কর্মের পদ এবং পদবী। যাহা দ্বারা সামাজিক উচ্ছৃঙ্খলতা এবং অমানবিকতা বেড়ে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে নাভিশ্বাস উঠে যায়। ক্ষমতা লোভীদেরকে মানুষ মনে-প্রাণে ঘৃণা করে। কিন্তু যশস্বী মানুষ শ্রদ্ধা চর্চিত চিত্তে চিরঞ্জীব।

আজ মনে পড়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অসম সাহসী বাংলাদেশী ছাত্র-যুবা-যুবীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্ষমতাধরদের আত্মত্যাগী সহযোগিতার কথা। তারপর ১৯৬২ সনের হামিদুর রহমানের প্রণীত শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা। তারপর ’৬৬ সনের ছয় দফা তথা স্বায়ত্তশাসন প্রাপ্তির দাবি ঘোষণা। ১৯৬৯-এর তীব্র গণ আন্দোলন এবং একাত্তরে স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত প্রয়াত মোঃ হোসেন আলীর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্যক সমর্থন ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন সিভিল সার্ভিস পাস করা সরকারি আমলা। পাকিস্তান আমলে এই পরীক্ষা গুলো ছিল C.S.P. এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ছিল E.P.C.S. ইত্যাদি।

কালান্তরে বাংলাদেশে এই পরীক্ষার নাম হয় B.C.S.। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর স্বপ্ন হলো সরকারি আমলা হওয়া। এরা কিন্তু অমর্ত্য সেনকে ভুলে গেছে, এরা শুধুই ক্ষমতার কাঙ্গাল, যশের মাধ্যমে বেঁচে থাকার তোয়াক্কা করে না। (সূত্র : ৩-১০-২০২২ খ্রিঃ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিন)

আমলাদের বেতন এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধা বর্তমানে ঈর্ষণীয় এবং অত্যন্ত লোভনীয়। বিশেষত প্রশাসনিক ক্যাডারের আমলাদের চাকুরিতে থাকাকালীন অথবা অবসরের সময় যে সমস্ত সুযোগ ভোগ করেন, তাতে তারা বিশাল ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবে পরিগণিত হন। কিন্তু এই ক্ষমতা মরুভূমির মরীচিকা তথা আলেয়া সমতুল। বিপুল ক্ষমতাধারীরা পায় নিরর্থক অর্থের বাহাদুরি, কিন্তু তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যায় অসামান্য প্রতিভার ঝুরী।

দেশের প্রতিভাবানরা রাষ্ট্রের মোটা অংকের ভর্তুকিতে কেউবা প্রকৌশলী কেউবা দেশ এবং জনগণের সেবার নিমিত্ত উন্নতমানের চিকিৎসক ‘দেবী শেঠি’ অথবা বৈজ্ঞানিক ‘মেঘনাথ সাহা’ বা ‘এ.পি.জে. আব্দুল কালামে’র উত্তরসূরি হওয়ার কথা ভাবছে না। তাদের ভাবনা শুধু সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কীভাবে ক্ষমতাবান সরকারি আমলা হওয়া যায়। বর্তমানে তারাই আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বে। এই বাংলা এক সময় ছিল সাহিত্য এবং বিজ্ঞান গবেষণার সূতিকগার। ইংরেজদের ভ্রুকুটিতে সাহিত্যে এসেছে তাদের ‘সনেটে’র চেয়েও উন্নতমানের ‘অমিত্রাক্ষর’ ছন্দ। যা সাহিত্য জগতে অমর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। অপর একজন অমর প্রতিভাধর বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রথম মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির ওপর সফল গবেষণার ফলস্বরূপ বিজ্ঞানী মার্কুনীর রেডিও আবিষ্কার (এখানে যদিও মতান্তর রয়েছে)। নজরুল সাহিত্যের তাৎক্ষণিক আবেদন আর রবীন্দ্র সাহিত্যের চিরন্তনী আবেদন সত্যিই তাঁহারা মানব মনের মণিকোঠায় অমরত্ব লাভ করেছে। ক্ষমতাবানরা এখানে বড়ই অসহায়।

দেশটা তো নীরব, নিথর এবং নির্বাক। দেশটাকে কিছু না দিয়ে দেশ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কিছু নেয়া নিশ্চয়ই গর্হিত কাজ। এ প্রসেঙ্গ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন. এফ. কেনেডির একটা বিখ্যাত উক্তি হলো, 'Ask not what your country can do for you, ask when you can do for your country' অগ্রে দেশ মাতৃকার প্রতি উৎসর্গের প্রস্রবণ পশ্চাতে অনিবার্য বিনিময় প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা। আমেরিকানরা কমণ্ড বেশি সবাই কিন্তু এই নীতিতে বিশ্বাসী বলেই আজ ‘ডলার’ বিশ্বমুদ্রায় পরিণত হয়েছে। দেশের মান-সম্মানও একেবারে শীর্ষে। নাগরিক দায়িত্ব বোধ বর্জিত দেশের বাস্তব উন্নয়ন সুদূর পরাহত। আমলাতান্ত্রিকতার প্রাবল্যে দুর্নীতির বন্যা অবশ্যম্ভাবী এবং প্রশাসনিক Chain of command ভেঙ্গে পড়ার অশনি সংকেত বহন করে। দেশের উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দ লোপাটকারী এবং কিশোর সন্ত্রাসীদেরকে আইনের আওতায় না নিয়ে সরাসরি অজ্ঞাত বাসে সরিয়ে দেওয়া-ই দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার উৎকৃষ্ট পন্থা। কারণ এরা গণদুশমন। মেজর ডালিম এবং মেজর নূর অবৈধ ক্ষমতার যোশে বেসামাল হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যা করে জাতির কাছে ঘৃণিত এবং ধিকৃত হয়ে আজ কাপুরুষের মত পলাতক। কিন্তু বিশাল ক্ষমতাধর বাংলার সূর্য সন্তান, সূর্যসেন ব্রিটিশ সম্রাজ্যের সূর্যকে অস্তাচলে নিয়ে ইতিহাসে অনন্য যশস্বী হয়ে রয়েছেন। যশস্বীরা বিশ্ব বরেণ্য আর ক্ষমতাবানরা সম্পদের পাহাড় নিয়ে অনতিক্রান্ত বৃত্তে সীমিত।

* বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রাবন্ধিক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়