সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

বিম্বিত বীক্ষণ
অনলাইন ডেস্ক

পর্ব-২৩

অনেকেই শিক্ষক রাজনীতিকে নিরুৎসাহিত করেন। এ বিষয়ে আমার একটু মতামত আছে। শিক্ষক রাজনীতি করা আর শিক্ষক রাজনীতি সচেতন দুটো ভিন্ন জিনিস। অবশ্যই শিক্ষকদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে। বাঙালি জাতির যতগুলো অর্জন আছে সবগুলোতেই শিক্ষকদের অবদান রয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কতজন শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে তার হিসেব যদি নেয়া যায় তবেই বোঝা যাবে মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষকদের কী পরিমাণ সম্পৃক্ততা রয়েছে। দেশের স্বার্থে, জনগণের অধিকার আদায়ের স্বার্থে অবশ্যই শিক্ষকরা রাজনীতি সচেতন হবেন। শিক্ষকরা রজনীতি সচেতন ছিলেন বলেই ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকবাহিনী প্রথমেই শিক্ষকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

অবশ্যই শিক্ষকরা তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে তাদেরকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে যা প্রয়োজন সে পথের নিশানা দেবেন। যেমন জাতির সংকটের সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে নিশানা দিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব সামছুজ্জোহা স্যার আত্মত্যাগ করেছেন ছাত্রদেরকে রক্ষা করতে গিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ছিলেন যাঁরা বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে নিজেরা সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, শিক্ষকরা রাজনীতি সচেতন হবেন কিন্তু কোনো কলুষিত রাজনীতির সাথে জড়াবেন না। রাজনীতিকে পুঁজি করে নিজে লাভবান হবেন না। এ প্রসঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। উক্তিটি হলো, ‘ধন চাহত তাহা হইলে এই পথে আসিও না। মান চাহত তাহা হইলে এই পথে আসিও। তিন্তিড়ি বৃক্ষের পত্র ভক্ষণ করত জীবনধারণ করিতে চাহো তাহা হইলে এই পথে আসিও।’ বিদ্যাসাগর মহাশয় শিক্ষকতা ব্রতের জন্যে যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে আহ্বান জানিয়েছেন সেটাই শিক্ষকতার ব্রত হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের ভোগবাদী সমাজ শিক্ষকদেরকে সে পথ থেকে অনেক দূরে নিয়ে এসেছে।

শিক্ষকদের মধ্যে যদি কিছুটা হলেও ত্যাগের মনোভাব বজায় থাকে তাহলে একজন শিক্ষক নিছক শিক্ষকই থাকবেন না, তিনি হবেন একজন সাধক, একজন দিশারী। যুগ পাল্টেছে বলে আজকের ভোগবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শিক্ষকরাও দিশা হারাচ্ছে। তবে দলীয় কার্যক্রম প্রদর্শনের চেয়ে দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকরা দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে রাজনৈতিক ভূমিকাও পালন করবেন। দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলে তাতেও তেমন দোষের কিছু দেখি না। তবে সরাসরি রাজনৈতিক দলে যুক্ত না হওয়াই ভাল। পার্টির কার্ডহোল্ডারদের মতো কাজ করলে তা এ পেশার সঙ্গে খাপ খায় না।

শিক্ষকদের একটি রাজনৈতিক মতামত থাকতে পারে। কিন্তু শিক্ষকতা করার ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব যেন না পড়ে তার দিকে নজর রাখতে হবে অর্থাৎ আপনার রাজনৈতিক আদর্শের কোনো কিছুই শিক্ষকতার ওপর প্রভাব ফেলবে না। শিক্ষকদের নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে ছাত্রদের পাঠদান করাতে হবে। প্রশাসন চালাতে হবে। রাজনৈতিক ভাল-মন্দ বিশ্লেষণ করে ছাত্রদের জাগিয়ে তুলবেন। রাজনৈতিক বিশ্বাসকে বিশ্বাসের জায়গায় রেখে শ্রেয় বোধের চর্চা করতে পারলে এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা অনেকেই নীতি-নৈতিকতা ও শ্রেয়বোধ হারিয়ে ফেলছি।

শিক্ষকরা কতটুকু রাজনীতি করবেন বা করবেন না সেটা তাদেরই নির্ধারণ করতে হবে। শিক্ষকদের বড় দায়িত্ব হবে, তাদের শিক্ষক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রী এবং সমাজে বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা।

আশির দশকে এসে শিক্ষকতা পেশার চরিত্রগত কিছু পরিবর্তন এসেছে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। শিক্ষকদের একটি মহৎ কাজ হলো জ্ঞান বিতরণ করা। তাই আমাদের সমাজে শিক্ষকরা শ্রদ্ধার, অনুকরণীয় এবং পূজনীয়, কিন্তু কিছু শিক্ষকের অপকর্ম এবং অতিরিক্ত অর্থলোভ এ পেশার মানুষকে হতাশ করেছে। তারা এটা ভুলে যায় অর্থের চেয়ে সম্মান বড়। শিক্ষকতায় অযোগ্য লোকের প্রবেশই এ পেশাকে কলুষিত করছে। অসৎ ব্যক্তি সব পেশায় আছে কিন্তু শিক্ষকতা পেশায় অসৎ লোক থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। অপ্রিয় হলেও সত্য, এ পেশার মানুষ এখন কোচিং বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস, জমির ব্যবসা, নানা রকম মুনাফা জাতীয় ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। কিছু লোভাতুর শিক্ষকের অর্থলিপ্সা পুরো পেশাটাকে কলঙ্কিত করছে।

সবচেয়ে লজ্জার হলো কোচিং সেন্টারের সাইনবোর্ডে যখন শিক্ষকদের নাম লেখা থাকে। শিক্ষকদের একাংশ শিক্ষকতা পেশাটাকে বাণিজ্যিকরণ করে ফেলেছে। নিজের পরিচালিত কোচিং সেন্টার আর প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট ভালো করার জন্য প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘৃণ্য কাজে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। অতি লোভ শিক্ষকতা পেশার চরিত্র পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এক সময় শিক্ষকতা ছিল সমাজের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা। সে মর্যাদায় এখন যেন পচন ধরেছে এবং তা শুধু কতিপয় শিক্ষকের জন্যে। আমাদের সমাজে এখনও অনেক সৎ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক রয়েছেন। কতিপয় শিক্ষকের কুকর্মে তারা প্রতিনিয়ত অপমানবোধ করেন, বিব্রতবোধ করেন।

আমি অনেক শিক্ষককে দেখেছি তারা শিক্ষকতার পাশাপাশি নানা রকম ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েছে। এটি কোনো অবস্থাতেই শিক্ষকতা পেশার সাথে যায় না। যা শুধু শিক্ষকতা পেশার মর্যাদাহানি করে। কোম্পানির ব্যবসা, জমির ব্যবসা, কোচিং সেন্টার থেকে শুরু করে এমন কোনো ব্যবসা নেই যে শিক্ষকদের একাংশ জড়িত নয়। এটি সমাজে খুব প্রভাব ফেলেছে। সমাজ এক সময় শিক্ষকদের যত মর্যাদার চোখে দেখতো সেটা দিন দিন ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। অন্য পেশার সাথে পাল্লা দিয়ে শিক্ষকদের অনেকে যখন রাতারাতি বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে চান তখনই যত রকম অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষকরা গবেষণা কাজ করবেন, যা তার শিক্ষকতাকে সমৃদ্ধ করবে। কিন্তু সেটা না করে শিক্ষকদের একাংশ গাইড বই রচনায় জড়িয়ে পড়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক। এভাবে শিক্ষকরা দিন দিন তাদের শ্রদ্ধার জায়গাটি হারিয়ে ফেলছেন। সাধারণ মানুষ শিক্ষকতা পেশাটাকে এখন আর মর্যাদার আসনে রাখতে নারাজ। বিভিন্ন জনের কাছে শিক্ষকদের এখন কটুবাক্য শুনতে হয়। অসৎ শিক্ষকদের ভীড়ে ব্যক্তিত্ববানরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। এই জায়গাগুলো থেকে আমাদের শিক্ষক সমাজকে বের হয়ে আসতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়