প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২২, ০০:০০
সভারম্ভ যখন পরিপাক-স্বাস্থ্য নিয়ে তখন গুরুত্ববহতার অবতারণা নিরেট বাহুল্য। সেকেলে আয়ুর্বেদ থেকে হালের চিকিৎসা-বিজ্ঞান, পাচনতন্ত্রের সক্রিয়তা নিশ্চিতকরণে যেমন চিকিৎসকবর্গের সোৎসাহ-গবেষণা তেমনই ঝাড় ফুঁকের সহস্রাব্দ লালিত এক বংশানুক্রমিক সংস্কৃতি অনুসৃত। সাকুল্যে কেবলই পরিপাক স্বাস্থ্যের কৃতকার্যতাই কাম্য। বয়স বা রুচিভেদে খাদ্য-অখাদ্য বিবেচনায় গলাধঃকরণ পরবর্তী অতিকাম্য জৈবিক প্রক্রিয়া হচ্ছে পরিপাক; যার পুরোটাই নির্ভর করে পাচনতন্ত্রের সচলতার উপর। সঙ্গত কারণেই পাচনতন্ত্রকে পরিপাকক্ষম করতে ঔষধালয়ের তাকে থরে থরে সজ্জিত রাখা হয় রুচিবর্ধক ও পরিপাক-শক্তিবর্ধক বিবিধ ওষুধ। তবে প্রকট-দুশ্চিন্তার বিষয় এই যে, চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ব্যুৎপত্তি থেকে অঙ্কুরোদ্গম, এই বিশ্বায়নের যুগে ডাল-পল্লবে এক বৃহদাকার বটবৃক্ষ হয়ে যাওয়ার পরেও পরিপাক-স্বাস্থ্যের সার্বজনীন উন্নতি সাধনে তার ব্যর্থতা আশাসংহারক বটে। কোনো সুপেয় শরাব কিংবা সুষম-খাদ্য গলাধঃকরণ পরবর্তী পরিপাকের বিশ্লেষণ এখানে হচ্ছে বরং শোণিত-মিশ্রিত এক বিবর্ণ অবস্থার কথা হচ্ছে, যা কাউকে তার পছন্দ বহির্ভূত মতামত-মন্তব্য সস্থৈর্য-শ্রবণে গলাধঃকরণ করতে বাধাগ্রস্ত করে। এ পীড়াক্রান্ত রোগীদের বিবেচনায় সবচেয়ে এ খাদ্য সেই কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ বা মতামত, যা তাদের মতপুষ্টতা বা মত-সমর্থনে অবতারিত হয়নি। তাই তা পরিপাকে তাদের স্নায়ুবিক পাচনতন্ত্র ব্যাপকভাবে অক্ষম, বিশ্রীভাবে ব্যাহত। চিকিৎসা-বিজ্ঞান উদাসীন, ভেষজ এখানে ক্রন্দসীবৎ ব্যবধানে। জীব-স্নায়ুবিক এই পীড়া বানের জলের থেকেও বিস্তৃতিক্ষম, হালের কোভিড অপেক্ষা তীব্র সংক্রামক।
প্রাথমিক শিক্ষা শ্রেণির কোনো ক্লাস-ক্যাপ্টেন বা জাতির জাতীয় কাপ্তান, নেতা নির্বাচন লগ্নেই মতদ্বৈধতার রচনা করি আমরা। কোনো অবিসংবাদিত ব্যক্তি তৈরিতে শত বছর ব্যয় করি অন্যভাবে বলা যায় শত শত বছর অবিসংবাদিত নেতার অপূর্ণতায় আমরা জীবনযাপন করি। আমাদের জাতীয় জীবনে ক্ষণজন্মা বিষয়টাই এখন বড্ড ক্ষণজন্মা। চরম অস¦চ্ছতা আর মতদ্বৈধতার মধ্য দিয়ে আমাদের জাতির পথিকৃৎবর্গ জনতার পঞ্চে পদার্পণ করেন, তারপর স্বভাবজাত রীতিতে হিতাহিতবোধ বিসর্জনপূর্বক জনতার একপক্ষ তার বেবাক-মন্তব্য উপেক্ষার ব্রত গ্রহণ করেন। আমাদের ভোজ্য খাদ্যের পরিপাক পাচনতন্ত্রের জৈবিক প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করলেও লোকহিতকর পরিকল্পনার সাদর গ্রহণ বা চিত্তোদ্রিক্ত সুকথাগুলোর হৃদিস্থ হওয়া ন্যূনতমণ্ডনির্ভরশীল নয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর। বিবেক বলতে একটা সুপাঠ্য শব্দ আছে আমাদের সাহিত্যে, তবে তার গূঢ়ার্থ উদ্ধার হয়নি আদৌ। আমরা তা-ই গ্রহণে মত্ত যার ব্যাপারে ভেতরকার সত্য নয় স্বার্থসম্মত হয়। এভাবেই স্নায়ুবিক ক্ষীণতায় পীড়াক্লিষ্ট হয়ে বিদায় নিচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ভিন্নমত সমর্থন বা হজমে আমাদের মানসিক চরম অক্ষমতাকে কখনো বাঙালি-চরিত্র কখনো স্বকীয়তা রক্ষা কিংবা চেতনার দোহাই দিয়ে এখন মরণব্যাধিতে রূপ দিয়েছি আমরা যার প্রতিষেধক কোনো ঔষধালয়ের তাকে সজ্জিত রয় না। এই পরিপাক অক্ষমতাই আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্যহীনতার মূল কারণ, সার্বজনীন সম্প্রীতির পথে প্রধান অন্তরায়। এটি এমন এক কাঁটা, যা গলাধঃকরণকালে আটকে রয় কণ্ঠনালীতে।