বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২২, ০০:০০

তীব্র গরমেও কাবা শরীফ শীতল থাকে কেনো?
অনলাইন ডেস্ক

মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর চত্বর বিশেষভাবে নির্মিত। এখানকার মেঝে সব সময় শীতল ও ঠান্ডা থাকে। উত্তপ্ত রোদ ও তীব্র গরম পড়লেও মেঝে তেঁতে উঠে না। কারণ, এমন মার্বেল দিয়ে এই দুই চত্বর আচ্ছাদিত করে দেওয়া হয়েছে যে, যার বিশেষ তাপ-শোষণ ক্ষমতা রয়েছে।

এই বিশেষ ধরনের মার্বেল সহজলভ্য ছিল না। এই ধরনের মার্বেল ছিল পুরো পৃথিবীতে কেবলমাত্র গ্রিসের ছোট্ট একটি পাহাড়ে। কিন্তু সেগুলো সংগ্রহ করা ও কাবা শরিফের প্রাঙ্গণ ও মসজিদে নববীর আঙিনায় স্থাপনের ক্ষেত্রে চমৎকার ও হৃদয়ানুভূতি জাগানো এক ঘটনা রয়েছে। আজ পাঠকদের জন্য আমরা তা উল্লেখ করব।

ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল (১৯০৮-২০০৮)। একজন মিশরীয় প্রকৌশলী ও স্থপতি। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। মিশরের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষার্থী, যিনি হাইস্কুল শেষে ‘রয়েল স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ ভর্তি হয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ইউরোপে পাঠানো ছাত্রদের ভেতরেও তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ, ইসলামিক আর্কিটেকচার-এর ওপর তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রথম মিশরীয় প্রকৌশলী।

ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল প্রথম প্রকৌশলী, যিনি হারামাইন (মক্কা-মদিনা) সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞ তত্ত্বাবধান করার জন্য সৌদি বাদশাহ ফাহাদ এবং বিন লাদেন গ্রুপের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করেননি; মোটা অংকের চেক তিনি ফিরিয়ে দেন! তাঁর সততা ও কাজের প্রতি আন্তরিকতা তাকে বাদশাহ ফাহাদ ও বাদশাহ আব্দুল্লাহসহ সকলের প্রিয়পাত্র ও বিশেষ আস্থাভাজন করে তোলে।

তিনি বাকার বিন লাদেনকে বলেছিলেন, এই দুটি পবিত্র মসজিদের কাজের জন্য পারিশ্রমিক নিলে শেষ বিচারের দিনে আমি কোন্ মুখে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াব?

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৪৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যান। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি। মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর পুরোটা জীবন আল্লাহর ঘর রক্ষণাবেক্ষণে উৎসর্গ করেন। অর্থ-বিত্ত, খ্যাতি-যশ, মিডিয়ার লাইম লাইট থেকে দূরে সরে থেকে তিনি তাঁর ১০০ বছরের জীবনের পুরোটা সময় মক্কা ও মদীনার দুই মসজিদের সেবায় বিনিয়োগ করে গেছেন।

মক্কা-মদিনার হারাম শরীফের মার্বেলের কাজের সঙ্গে তাঁর জীবনের একটি বিস্ময়কর ঘটনা রয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন, মসজিদুল হারামের মেঝে তাওয়াফকারীদের জন্য এমন মার্বেল দিয়ে আচ্ছাদিত করে দিতে, যার বিশেষ তাপ শোষণ ক্ষমতা রয়েছে। এই বিশেষ ধরনের মার্বেল সহজলভ্য ছিল না। এই ধরনের মার্বেল ছিল পুরো পৃথিবীতে কেবলমাত্র গ্রিসের ছোট্ট একটি পাহাড়ে।

ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল গ্রিসে গিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে মার্বেল কেনার চুক্তিস্বাক্ষর করে মক্কায় ফিরে এলেন এবং সাদা মার্বেলের মজুদও চলে এলো। যথাসময়ে বিশেষ নকশায় মাসজিদুল হারামের মেঝের সাদা মার্বেলের কাজ সম্পন্ন হলো।

এর ঠিক ১৫ বছর পরে সৌদি সরকার তাঁকে মাসজিদুন নববীর চারদিকের চত্বরও একইভাবে সাদা মার্বেল দিয়ে ঢেকে দিতে বললেন। কিন্তু ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল দিশেহারা বোধ করলেন! কেননা ওই বিশেষ ধরনের মার্বেল কেবলমাত্র গ্রিসের ওই ছোট্ট জায়গা বাদে গোটা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না এবং সেখানে যতটুকু ছিল, তার অর্ধেক ইতোমধ্যেই কিনে মক্কার হারাম শরীফে কাজে লাগানো হয়ে গেছে। যেটুকু মার্বেল অবশিষ্ট ছিল- সেটা মাসজিদুন নববীর প্রশস্ত চত্বরের তুলনায় খুবই সামান্য!

ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল আবার গ্রিসে গেলেন। সেই কোম্পানির সি.ই.ও-র সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইলেন, ওই পাহাড় আর কতটুকু অবশিষ্ট আছে? সি.ই.ও জানালেন, ১৫ বছর আগে উনি কেনার পরপরই পাহাড়ের বাকি অংশটুকুও বিক্রি হয়ে যায়! এই কথা শুনে তিনি এতোটাই বিমর্ষ হলেন যে, তাঁর কফি পর্যন্ত শেষ করতে পারলেন না! সিদ্ধান্ত নিলেন- পরের ফ্লাইটেই মক্কায় ফিরে যাবেন। অফিস ছেড়ে বেরিয়ে আসার আগে কী মনে করে যেন অফিস সেক্রেটারির কাছে গিয়ে সেই ক্রেতার নামণ্ডঠিকানা জানতে চাইলেন, যিনি বাকি মার্বেল কিনেছিলেন।

যদিও এটা অনেক দুরূহ কাজ, তবু কামালের বারবার অনুরোধে সে পুরানো রেকর্ড চেক করে জানাবে বলে কথা দিলেন। নিজের নাম এবং ফোন নম্বর রেখে বেরিয়ে আসার সময় কামাল মনে মনে ভাবলেন, কে কিনেছে, ১৫ বছর পরে তা জেনেই বা আর লাভ কী?

পরদিন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে অফিস সেক্রেটারি ফোনে জানালেন, সেই ক্রেতার নামণ্ডঠিকানা খুঁজে পাওয়া গেছে! কামাল ধীর গতিতে অফিসের দিকে যেতে যেতে ভাবলেন, ঠিকানা পেয়েই বা লাভ কী? মাঝে তো অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে...।

অফিসে পৌঁছালে সেক্রেটারি তাকে ওই ক্রেতার নামণ্ডঠিকানা দিলেন। ঠিকানা হাতে নিয়ে ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইলের হৃদ্স্পন্দন বেড়ে গেল, যখন তিনি দেখলেন বাকি মার্বেলের ক্রেতা একটি সৌদি কোম্পানি!

কামাল সেদিনই সৌদি আরব ফিরে গেলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি কোম্পানির ডিরেক্টর অ্যাডমিনের সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইলেন মার্বেলগুলো দিয়ে তারা কী করেছেন, যা অনেক বছর আগে গ্রিস থেকে কিনেছিলেন?

ডিরেক্টর অ্যাডমিন প্রথমে কিছুই মনে করতে পারলেন না। কোম্পানির স্টক রুমে যোগাযোগ করে জানতে চাইলেন, ১৫ বছর আগে গ্রিস থেকে আনা সাদা মার্বেলগুলো দিয়ে কী করা হয়েছিল? তারা খোঁজ করে জানালো, সেই সাদা মার্বেল পুরোটাই স্টকে পড়ে আছে, কোথাও ব্যবহার করা হয়নি!

এই কথা শুনে কামাল শিশুর মতো ফোঁপাতে শুরু করলেন। কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি পুরো ঘটনা কোম্পানির মালিককে খুলে বললেন। ড. কামাল ওই কোম্পানিকে সৌদি সরকারের পক্ষে একটি ব্ল্যাংক চেক দিয়ে ইচ্ছেমতো অংক বসিয়ে নিতে বললেন। কিন্তু কোম্পানির মালিক যখন জানতে পারলেন, এই সাদা মার্বেলে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মসজিদ চত্বর বাঁধানোর জন্য ব্যবহৃত হবে, তৎক্ষণাৎ তিনি এর বিনিময় মূল্য নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললেন, আল্লাহ্ সুবহানুতায়ালা আমাকে দিয়ে এটা কিনিয়েছিলেন আবার তিনিই আমাকে এর কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন; কেননা এই মার্বেল রাসুল (সা.)-এর মসজিদের উদ্দেশ্যেই এসেছে। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়