বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও আমরা শত্রু নই!
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের দেশের রাজনৈতিক চরিত্র এতো কলুষিত হয়েছে যে, দুই লাঠিয়াল বাহিনীর চর দখলের ন্যায় হয়ে গেছে। কে বাঁচলো কে মরলো, কার সম্মান গেলো আর কার সম্মান থাকলো এগুলো দেখার বিবেচ্য বিষয় নেই। শুধু আমার ক্ষমতা আর পদ ঠিক থাকলেই হয়।

রাজনীতির ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি আর মতের পার্থক্য নতুন কিছু নয়। বরং রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি যত মজবুত হবে রাজনৈতিক কাঠামো ততো দৃঢ় ও স্বচ্ছ হবে।

মতের পার্থক্য কোথায় না আছে? পৃথিবীর শুরু থেকেই তা হয়ে আসছে।

ধর্মে ধর্মে মতপার্থক্য আছে, বাবা-ছেলের মতপার্থক্য আছে, স্বামী-স্ত্রীর মতপার্থক্য আছে, বন্ধু বন্ধুর মাঝে মতপার্থক্য আছে, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক।

ধর্মে ধর্মে মতপার্থক্য থাকার কারণে সভ্য সমাজে কোনো ধর্মের লোক অন্য ধর্মের উপর আঘাত করে না।

বাবা-ছেলের মতপার্থক্য থাকার কারণে বাবা-ছেলের সম্পর্ক বিনষ্ট হয় না। স্বামী-স্ত্রীর মতপার্থক্যের কারণে হুট করেই সংসার ভেঙ্গে যায় না। বন্ধু বন্ধুর মতপার্থক্যের কারণে এক বন্ধু আরেক বন্ধু থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না।

রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকার কারণে আমরা একে অপরের শত্রু বনে গেলাম কেন? মোটা দাগের প্রশ্ন রেখে গেলাম এখানে।

৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখণ্ড তো আমাদের জন্য একটি দস্তার। চতুর্দিকে ঘুরেফিরে আমরাইতো বসে আছি। কেউবা সাদা কেউবা কালো, কেউ স্বধর্মের কেউ ভিনধর্মের, কেউবা ক্ষমতায়, কেউ বা ক্ষমতার বাইরে, সব মিলিয়ে আমাদের স্বাধীনতাণ্ডসার্বভৌমত্ব, সমাজ ও সংস্কৃতি।

কারো পরাধীন দেশে জন্ম, স্বাধীন দেশে বসবাস। আবার আমরা যারা স্বাধীনতাণ্ডউত্তর জন্মগ্রহণ করেছি, তারা স্বাধীন দেশে জন্ম হয়ে স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। শুধু মতের পার্থক্যের কারণে স্বাধীন দেশে জন্ম হয়েও পরাধীনতার শিকল পরে আমাদের চলতে হয়! স্বাধীনভাবে বলা যায় না, স্বাধীনভাবে চলা যায় না!

কে কার কথা শুনবে, কে কাকে মানবে, কে কোথায় বসবে, জনপ্রতিনিধি কে হবে, প্রশাসনে কে যাবে, রাষ্ট্রের মালিক কে, রাষ্ট্রের কর্মচারী কে? কে কাকে তোয়াজ করে চলবে, কার দ্বারা কে উপকৃত হচ্ছে, কার টাকায় কে এসি গাড়িতে দৌড়াচ্ছে, ডুপ্লেক্স বাড়িতে ঘুমাচ্ছে, কার মাসিক ইনকাম কত, মাসিক ব্যয় কত, উদ্বৃত্ত সম্পদের পরিমাণ কত?

এই জায়গাগুলো যদি মেরামত করা না যায় তাহলে ট্রাফিকবিহীন রাস্তায় জ্যামে পড়ে থাকা যাত্রীদের যে অবস্থা হয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয়, মনে রাখতে হবে মৌলিক এই জায়গাগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে শুধু ঘন্টা নয় দিন নয় বছরের পর বছর যুগের পর যুগ এই জাতিকে খেসারত দিয়ে যেতেই হবে। এই জায়গাগুলোর ম্যানেজমেন্টে কে আছেন? এরা কি আখের গোছানোর জন্যই পেশাদারিত্বের চাকা ঘোরাচ্ছেন নাকি দেশপ্রেম নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র দেখাশোনা করছেন?

রাজনীতির জন্মই হয়েছে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, আর এই রাজনীতির বাতাস এখন প্রশাসনকে শীতল করে! রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতাসীনদের অনুকূলে যখন ব্যবহার হয়, তখন আর সেটা রাজনীতি থাকে না, সেটা হয়ে যায় স্বৈরনীতি!

বছরের পর বছর যুগের পর যুগের হিসাব বাদই দিলাম, শুধুমাত্র নবাগত বছরের তিন মাসের রাজনৈতিক সহিংসতার হিসাবে একটু চোখ বুলিয়ে নেই :

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৈনিক ইনকিলাবে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে :

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ৪০ জন নিহত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৯৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনার খবর প্রকাশ পেয়েছে। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৭৩জন আহত হয়েছে। নিহত হয়েছে ৪০জন, নিহতের মধ্যে ১০ জন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা। বাকি ৩০ জন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে ছিল না। তিন মাসের অবস্থা এরূপ হলে বাকি সময়ের বিষয়টা আর বোঝার বাকি থাকে না। দেশের ভবিষ্যৎ কী? আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বা সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী? জাতিকে সঠিক দিশা ও আকাক্সিক্ষত মুক্তির লক্ষ্যে আমরা কি সুস্থ ধারার একটি প্লাটফর্ম তাদের হাতে তুলে দিয়ে যেতে পারবো? এই দায় কার?

এখন রাজনীতিতে সম্মান, ইজ্জত বলতে কিছুই নেই; সভা থাকলেও সেবা নেই; বরাদ্দ থাকলেও যথাযথ বন্টন নেই। তেল যেদিক থেকে আসছে প্রদীপ শুধু সেদিকেই জ্বলছে।

১লা মার্চ ২০২২-এর কথা না বললেই তো নয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর শহর শাখার সভাপতিকে গ্রেফতারের সংবাদ শুনে আমি জেলা সভাপতি হিসেবে গ্রেপ্তারের কারণ জানার জন্য দ্রুত চাঁদপুর মডেল থানায় ছুটে যাই। সেখানে শহর শাখার কয়েকজন দায়িত্বশীল ও সাথে কয়েকজন সাংবাদিককে দেখতে পাই। থানায় ওসি সাহেবকে না পেয়ে তাকে আমি ফোন দেই, ফোন বিজি থাকার কারণে কথা বলতে পারি নি। পরে ক'জন সাংবাদিক আমাকে বললেন, ভাই উপরে চলেন, যে দারোগা তাকে এরেস্ট করেছে সে উপরে আছে তার সাথে কথা বলি। ওনার রুমে ঢোকা মাত্রই উনি আমাকে দেখে বললন, আপনি কি ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি জয়নাল সাহেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি জয়নাল। তিনি বললেন, কেন আসছেন? আমি বললাম, আমার লোককে কেন এরেস্ট করলেন তা জানার জন্য আসছি। তিনি বললেন, ঠিক আছে বসেন। আমিতো আপনাকেই খোঁজ করছি। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তো আপনার সামনে হাজির। তিনি বললেন, আপনি গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিজয় র‌্যালি করেছেন, এটা কি আপনার ঠিক হয়েছে? আমি বলেছি, অবশ্যই ঠিক হয়েছে। এতো চড়া মূল্য দিয়ে যে দেশটি বিজয় অর্জন করেছে, সেই দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা বিজয়-আনন্দ করতে পারবো না এটা কেমন কথা! তিনি বললেন, কোনো দুষ্কৃতকারীরা যদি আপনাদের র‌্যালিতে নাশকতা সৃষ্টি করতো, তখন কী করতেন? আমি বললাম, আমরা যথেষ্ট সতর্ক ছিলাম এবং আমাদের পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক ছিল এবং বিগত দিনে এমন কোনো রেকর্ড নেই যে, আমাদের কোনো সভা-সমাবেশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। তিনি এক পর্যায়ে আমার সাথে তর্কে জড়িয়ে গেলেন। বললেন, ঐদিন আপনি আমাকে কোনো পাত্তাই দেননি। আমি বলেছি ওসি সাহেবের সাথে কথা বলার জন্য, আপনি বলেছেন জেলা সভাপতি হিসেবে আমি ডিসি সাহেবের সাথে কথা বলবো। তর্কের ফাঁকে বলেও ফেললেন, আমি ইচ্ছা করলে আপনাকে এরেস্ট করতে পারি। আমি হাসি দিয়ে বললাম, করেন, আমি তো আপনার সামনেই আছি। এরেস্ট শব্দটা মুহূর্তের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে দশ মিনিটের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীল সহ সাংবাদিকরা সমবেত হয়ে গেলো। কিছু কিছু সাংবাদিক ওনাকে জেরা শুরু করলেন, উনার নামে কোনো মামলা আছে? বললন, না। তাহলে ওনার সাথে কেন এরেস্ট শব্দ উচ্চারণ করলেন? এ শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন এবং সাংবাদিকরা অনেকটা হতভম্ব হয়ে গেলেন। বললেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে? এ খবর যদি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কি আপনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন? আমরা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করি ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা আছে। বিশেষ করে দেশের সংকটকালীন সময়ে মানবতার চরম দুর্দিনে করোনাকালীন লাশ দাফন কাফনে ওনাদের অবদান সম্পর্কে কি আপনার ধারণা আছে? তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? এক লাশ দাফন শেষ না হতেই আরেক লাশ বহনের প্রস্তুতিই ছিল তাদের কাজ!

প্রতি মিনিট পার হওয়ার সাথে সাথে থানায়ও লোকসংখ্যা বাড়তেই থাকলো। সদর উপজেলা সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল বলেছেন যে, ভাই! বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং থানা থেকে গাড়ি রিজার্ভ চলছে। সাংবাদিকদের তির্যক জেরা আর দায়িত্বশীলদের উপস্থিতি টের পেয়ে তখন তার পায়জামা কিছুটা গরম হয়েছে। এখন দ্রুত ওসি সাহেবকে ফোন দেওয়া শুরু করেছেন, স্যার তাড়াতাড়ি আসেন, জয়নাল ভাই আপনার সাথে কথা বলার জন্য আসছে। ইতিমধ্যেই ওসি সাহেব থানায় প্রবেশ করলেন। আমিও উনার রুমে ঢুকলাম, সামনের চেয়ারে বসলাম। উনি বললেন, ভাই কী জন্য আসছেন? আমি বললাম, আমাদের একজন দায়িত্বশীলকে এরেস্ট করা করা হয়েছে, তার কারণ জানতে থানায় এসেছি। আপনার এক পুলিশ অফিসার আমার সাথে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করেছেন। ওসি সাহেবও অনেকটা তার পক্ষ নিয়ে কথা বলা শুরু করে দিলেন যে, আমাদের পুলিশ তো আপনাদের কোনো কাজে লাগে না, আমাদের কাছে আইসা কী হবে। আমি বললাম, ভাই আপনি এটা ভুল কথা বললেন, অত্যন্ত দুঃখজনক কথা। চাঁদপুরের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমাদের কখনো বৈরী ঘটনা ঘটেনি। বিগত দিনে এই চেয়ারে যারা ছিলেন প্রয়োজনে তাদের কাছে আপনি আমাদের সম্পর্কে জানতে পারেন।

তখন ওসি সাহেব বললেন, ভাই, যাক যা হওয়ার হয়েছে, এখন বলেন আপনার কী উপকার করতে পারি । আমি বললাম, আমার যে লোককে এরেস্ট করা হয়েছে, কী কারণে করা হয়েছে তা জানি না, তবে আপনার এ টেবিল থেকে ন্যায়সঙ্গত ইনসাফভিত্তিক সমাধান করে দিবেন। তখন ওসি সাহেব বললেন, জি¦ ভাই, ঠিক আছে। এ কথা বলে ওসি সাহেবের রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ঐ দারোগা সাহেব আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ভাই, আমাকে মাফ করে দিবেন। আমার ভুল হয়েছে হয়তো, ঐ দিন আমাকে তোয়াক্কা না করে র‌্যালি করার কারণে ওসি সাহেব আমাকে অনেক বকাঝকা দিয়েছিলেন, তাই আমার মনে অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন ভাই। আমি বললাম, আপনি এ কথা এখন বলেন কেন? যদি আপনার সাথে ওসি সাহেব খারাপ আচরণ করে থাকেন, ঐদিন আমাকে ফোন দিতেন, আমি আসতাম, তিন মাস পরে এসে আপনি সেই ক্ষোভ ঝাড়লেন কেন?

যাক ঐদিন সকল দায়িত্বশীলকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। তাদেরকে শান্ত করে বিদায় দিলাম।

ঘটনা বলার মূল মাকসাদ হলো, একজন এমপি ক্যান্ডিডেট বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দেশের ভিআইপি পার্সন, আর যদি হয় সেটা নিবন্ধিত নির্ভেজাল একটি ইসলামী সংগঠনের নিরপরাধ ব্যক্তি? একজন পুলিশ অফিসারের কী এতটুকু পেশাগত জ্ঞান নেই যে, কোন্ ব্যক্তিদের সাথে কী ধরনের আচরণ করতে হবে?

এ কারণে পারিবারিক শিক্ষা, একাডেমিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষার সাথে পেশাগত শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।

অপরদিকে আবার ওই থানার ওসি সাহেবের একদিনের ব্যবহারে আমি এতোটাই মুগ্ধ হয়েছি যে, কখনো তা ভুলতে পারবো না। তবে এই শ্রেণীর লোকের সংখ্যা এই পেশায় অনেকটা নগণ্য বললেই চলে।

ক’দিন পূর্বে বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাইকে কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে গ্রেফতার করা হয়। যেটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছোবল বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। কারণ পবিত্র মাহে রমজান ছবরের মাস, সংযমের মাস, ধৈর্যের মাস, অহংকার পতনের মাস, সহনশীলতার মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। যে কোনো মানুষ বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী হতেই পারে। কিন্তু রমজানতো রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের বার্তা নিয়ে এসেছে, এর প্রতি লক্ষ্য করেও কি এতোটুকু ছাড় দেওয়া গেল না!! অথচ দেশ দুর্নীতির সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, এর চেয়ে মহাঅপরাধীরা সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কিন্তু তাদেরকে পাকড়াও করবে কে? শুধু মাত্র মতপার্থক্যের কারণে তীরটা বিপরীত দিকে।

একজন জেলা সভাপতিতো এমনিতেই হয়ে যায় না। তৃণমূলের দলীয় নেতাদের সমর্থনে তৈরি সামষ্টিক শক্তি বলা যায় জেলা সভাপতিকে। পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের এই দিনে বিএনপির সভাপতিকে গ্রেফতার করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করায় আমি তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি।

যেদিন থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের চাকা রাজনীতির ফুয়েল দ্বারা ঘোরা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই দেশবাসী এই কুৎসিত আচরণের শিকার হচ্ছে। তবে এটাও সত্য যে, রাজনীতির এ দুরবস্থায় বিএনপি বর্তমানে ইসলামী আন্দোলনকে তাদের পথের কাঁটা মনে করছে। আমি মনে করি, এটা তাদের রাজনৈতিক অজ্ঞতা অথবা তাদের ২০ দলীয় যৌথ সংসারের কোনো সদস্যের কু পরামর্শের প্রতিধ্বনিও হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকটি দল তাদের দলীয় আদর্শ, নীতি নির্ধারকদের পরামর্শ, গণমানুষের আকাক্সক্ষা সব মিলিয়ে রাজনীতির পথ চলে। যে আদর্শ মানুষকে কাক্সিক্ষত মুক্তি দিতে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, সে আদর্শের সহযোগী হওয়াকে ইসলামী আন্দোলন অযথা সময় নষ্ট করার শামিল মনে করে । রাজনীতির খেলা রাজপথেই হয়। ঘরে বসে অভিমানী কায়দায় রাজনীতিতে সফল হওয়া যায় না।

ইসলামী আন্দোলনের আবেদন কে বুঝবে? পীর সাহেব চরমোনাইর আহ্বান কে শুনবে? ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়া মানে ইসলাম ক্ষমতায় যাওয়া, ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে থাকা মানে ইসলামের পক্ষে থাকা।

ইসলামী আন্দোলনের নামে বদনাম ছড়ানো মানে ইসলামের নামে বদনাম ছড়ানো।

অনেকের ধারণা, ইসলাম ক্ষমতায় গেলে সব ওলট-পালট হয়ে যাবে। নারীরা গৃহবন্দি হবে! না এ ধারণা ভুল! বরং প্রত্যেকে তাদের স্ব স্ব কর্মস্থলে আরো অধিক নিরাপত্তার সাথে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে ।

তবে কাজ একটা করা হবে, সুদ ঘুষ দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা হবে!

যা দেশের শতকরা ৯৯% ভাগ মানুষের চাহিদা।

ইসলামী আন্দোলন শুধু নিছক ক্ষমতার রাজনীতি করলে, বড় যে কোনো দলের সাথে ভাগবাঁটোয়ারার হিসাব মিলিয়ে যে কোনো সময় মন্ত্রী এমপি হওয়া বহু আগেই সময়ের ব্যাপার ছিল !

* কিন্তু ইসলামী আন্দোলন যে ইসলামকে ক্ষমতায় নিতে চায়;

* ইসলামী আন্দোলন যে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়;

* ইসলামী আন্দোলন যে সুদ, ঘুষ, সন্ত্রাস-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে চায়;

* ইসলামী আন্দোলন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাণ্ডসার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে চায়;

* ইসলামী আন্দোলন যে দেশের লাখো মানুষের বোবা কান্নার মুখে হাসি ফোটাতে চায়;

* ইসলামী আন্দোলন যে দেশের নারী সমাজের ইজ্জত আব্রু রক্ষা করতে চায়;

* ইসলামী আন্দোলন যে এদেশের সকল ধর্মের ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়;

* ইসলামী আন্দোলন যে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চায়;

কে বুঝবে তাদের এ আবেদন?

ইসলামী আন্দোলন তো কোনো রাজনৈতিক দলের মৃত্যু কামনা করে না!

আওয়ামী লীগ যেমন বিএনপি'র মৃত্যু কামনা করে, একইভাবে বিএনপিও আওয়ামীলীগের মৃত্যু কামনা করে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ উভয়ের মঙ্গল কামনা করে। কারণ তারাও এদেশের নাগরিক, তাদের টেক্স-ভ্যাটের টাকায় দেশের রাজ কোষাগারে অংশীদারিত্ব রয়েছে। উন্নয়নে অবদান রয়েছে। তাই ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ রাজনীতির ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও কারো শত্রু নয়।।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দেশের সবাইকে নিয়ে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে থাকবে না হিংসা-বিদ্বেষ, থাকবে না মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড। যেখানে থাকবে শুধুই শান্তি, নিরাপত্তা মানবতা ও মানবসেবা। আর মানবসেবা এমন একটি কাজ, যেটি দলমত, ধর্ম, বর্ণ সবাইকে একাকার করে দেয়। যা করোনাকালীন দেশের জাতীয় সংকটে কিছুটা হলেও দেখাতে সক্ষম হয়েছে।

হে আল্লাহ, দেশের এই দুর্দিনে, রাজনীতির এই দুঃসময়ে ইসলামণ্ডদেশ-মানবতাকে তুমি রক্ষা করো। ধ্বংসাত্মক ও হানাহানির রাজনীতি থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করো। এ ভূখণ্ডের জন্য একজন যোগ্য অভিভাবক হাদিয়া স্বরূপ আমাদেরকে দান করো। আমিন।।

শেখ মুহাঃ জয়নাল আবদিন : সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চাঁদপুর জেলা শাখা।

[email protected]

০১৮১৯-০৭৪২৭৫

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়