প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
ধর্ম হলো বিশ্বাস নির্ভর আর বিজ্ঞান হলো যুক্তি ও প্রমাণ নির্ভর। বিজ্ঞান বলে এই বিশ্ব ব্রহ্মা-ের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। পৃথিবীর বয়স ৪৫০ কোটি বছর। পৃথিবীতে পূর্ণাঙ্গ অবয়বের মানুষের আবির্ভাবের বয়স দুই লক্ষ বছর। তাহলে বিশ্বাস ভিত্তিক ধর্মীয় উপাচারগুলো যুগ-যুগান্তরব্যাপী চলমান আছে। আর বিজ্ঞান যুক্তি-প্রমাণ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত আছে, যা প্রত্যক্ষ করা যায়।
এক সময় চীন ছিল অতি দুর্গম স্থান। ধর্মীয় নির্দেশ ছিল, প্রয়োজনে জ্ঞানার্জনের জন্য দুর্গম চীনে যেতে হলেও যেতে হবে। তবু জ্ঞান অর্জন করে জ্ঞানী হতে হবে। কারণ দার্শনিকের উক্তি হলো “Every evil comes out of ignorance” অর্থাৎ সকল অপকর্ম অজ্ঞতা থেকে উদ্ভব। আবার এও কথিত আছে Little learning is a dangerous thing. অর্থাৎ অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী। অধীত বিদ্যার যথাযথ বিশ্লেষণ নিজে না বুঝে যখন অন্যকে বুঝাতে যায় তখনই সে মন-গড়া ব্যাখ্যা প্রদান করে, যা প্রকৃত অর্থের প্রতিপাদ বিন্দু। অধীত কোনো প্রসঙ্গের সঠিক তত্ত্বই হলো বিদ্যা। যথাযথভাবে আত্মস্থ বিদ্যাই হলো জ্ঞান। আর জ্ঞান, গবেষণায় বিশেষায়িত হয়ে বি-উপসর্গ যোগে হয়ে যায় বিজ্ঞান। ধর্মের গবেষণাগার হলো উপাসনালয়, যেখান থেকে সৃষ্টির কল্যাণকর তথ্য বেরিয়ে আসে, যা মানুষকে ধর্মচর্চায় উৎসাহিত করে। আর বিজ্ঞানের গবেষণাগার হলো ল্যাবরেটরী। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে যত মিরাকেল অব মডার্ন এডভেনচার, যা সততই নির্বিশেষে মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব উদ্ঘাটন না করেই কেউ ধর্ম অবমাননার উছিলাটা স্বকপোলকল্পিতভাবে পেয়ে যায়। যা অনাকাক্সিক্ষত দাঙ্গা সৃষ্টি করে। এটি সকল স্তরেই বিদিত আছে যে, স্রষ্টা মহান, সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং শেষ বিচারের দিনের বিচারক।
এই মর্ত্যলোকের সকলেরই বিশ্বাস যে, ধর্ম এতোই পবিত্র যে, কোনো ধর্মেরই অবমাননা করা নরলোকে কারো দ্বারাই সম্ভব নয়। শেষ বিচারের আসরে কোনো অপরাধই বিচার বহির্ভূত থাকবে না। এটুকু বিশ্বাস সকল ধর্মীর থাকা উচিত।
মানব দেহের একাদশ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে তিনটি অদৃশ্য হলো মন, বুদ্ধি এবং অহঙ্কার। তন্মধ্যে মন একটি চঞ্চল ইন্দ্রিয়। এখানেই ধর্ম বিশ্বাসের অবস্থান। মনের প্রতিবেশী হলো বুদ্ধি, যা ধর্ম বিশ্বাসকে অটুট রাখে। মনের চঞ্চলতার কারণে ধর্ম বিশ্বাসে ফাটল ধরে অনাহুত ধর্মের অবমাননা বোধ করে। অহঙ্কার ধর্ম বিশ্বাসকে অটুট রেখে ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি গর্ববোধ জন্মায়।
স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে যিনি ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন তিনি ধর্মী, আবার যিনি ল্যাবরেটরীতে গবেষণা করেন তিনি বিজ্ঞানী। ধরা যাক একটি ফুলের বিশ্লেষণ : -
ধর্মী একটি ফুল হাতে পেলে তিনি দেখবেন আল্লাহর দানীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নয়নাভিরাম ফুলটি। এর সার্বিক সৌন্দর্যে তিনি মোহিত হবেন। আর একজন বিজ্ঞানী ফুলটি গবেষণাগারে দেখবেন, এর ক’টি পাপড়ি আছে, এর ফলন কিভাবে বাড়ায়ে মানুষের মনস্তুষ্টি বাড়ানো যায় ইত্যাদি।
এখানে দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে বিবর্তনবাদের ওপর, আর ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে সৃষ্টি তত্ত্বের বিশ্বাসের উপর। বিবর্তনবাদ প্রমাণিত আর সৃষ্টিতত্ত্ব মননশীলতার সাথে বিশ্বাস করতে হয়। এ দুইয়ের পার্থক্য পাঠকের বিবেচ্য। একজন ধর্মান্ধের অভিমত আর একজন বিজ্ঞান মনস্কের অভিমত অত সহজে অনুমেয় হতেও পারে, আবার না ও হতে পারে।
প্রসঙ্গান্তরে উল্লেখ্য যে, এখানে অনেকের কণ্ঠে একটি অনর্থক শব্দ উচ্চারিত হয় ‘বি-ধর্মী’। ‘বি’ উপসর্গটি যে যে অর্থে শব্দের পূর্বে ব্যবহৃত হয় তন্মধ্যে বিশেষায়িত অথবা নাই অর্থে দ্যোতক। অর্থগুলো হলো একটা বিশেষ ধর্মের ধর্মী অথবা অধর্মী। এই শব্দটির প্রযোজ্যতা কতটুকু অর্থবহ তা পাঠকের বিবেচ্য।
কোনো মানব সন্তান কখনো প্রত্যক্ষ করতে পারে না জন্মদাতাকে। স্রষ্টার অপার ক্যারিশমায় শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই তার পিতাণ্ডমাতাকে চিনে ফেলে। কিন্তু বিজ্ঞান তার গবেষণায় ‘জিন’ আবিষ্কার করে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, শিশুর ধারণাটা ‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’। ধর্ম যে অয়োময় সদৃশ্য দৃঢ় বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত তাকে যুক্তি এবং প্রমাণ দ্বারা বিজ্ঞান তার বাস্তবতা প্রমাণ করে দিয়েছে এবং দিবে। কাজেই ধর্ম এবং বিজ্ঞান সংশপ্তক।
বিমল কান্তি দাশ : কবি ও লেখক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।