বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

মুক্তি সড়ক
অনলাইন ডেস্ক

যুগের প্রয়োজনে মহান সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক জাতি/গোষ্ঠির মধ্যে একজন করে দিক-নির্দেশক প্রেরণ করেন। এটা অনিবার্য বটে। বিশ্বে যতগুলো ধর্ম বিশ্বাস বিরাজমান তার কোনোটাই সাধারণ মানব সৃষ্ট নয়। বরং প্রেরিত অতি মহামানব কর্তৃক উদ্ভাবিত। যুগে যুগে মহামানবগণের আগমনে মানবকূল সাধারণভাবে অন্তত একটি বাণী পেয়েছেন যে, সৃষ্টিকর্তা মহান এবং সবকিছুর একক নিয়ন্তা। এ ধর্মটুকুই মানুষের যর্থাথ গন্তব্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে দুটো অনভিপ্রেত কার্যক্রম জন্ম নিয়েছে-(১) ধার্মিক হওয়া (২) ধার্মিক সাজা। ধর্ম প্রবর্তকগণের পবিত্র বাণীগুলোকে আশ্রিতদের মনে যথাযথভাবে প্রতিপালনের উদ্যোগ জাগিয়ে তোলার উপদেশই হলো ধার্মিকের লক্ষণ। নবীজির বিদায় হজে¦র ঐশী বাণীগুলোর যথাযথ আমলে ধর্ম বিশ্বাসীদেরকে অনুপ্রাণিত করার জন্য যিনি সর্বদা চেষ্টিত থাকেন তিনি ধার্মিক। বিদায় হজে¦র বাণীগুলোই হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।

আজ মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহকর্মীরা এবং আমাদের দেশের মেয়ে শিক্ষার্থীরা পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছ থেকে যে পাশবিক অত্যাচারের নির্মম শিকার হচ্ছে, তা অতি কুৎসিত অমানবিকতার পরিচায়ক। যারা লোক দেখানো ধার্মিক সাজে তারাই এসব কাজের কাজী এবং স্ব-কপোলকল্পিত তত্ত্বের প্রবর্তক। এদের-ই কুণ্ডপ্রবৃত্তির নিবৃত্তি হওয়া সমাজের জন্যে মঙ্গলকর। মহাজ্ঞানী আর মহান ব্যক্তিতে¦র অধিকারী যাঁরা তাঁদের প্রদর্শিত পথের অনুসারী হওয়াই মানব ধর্ম। মানবতা বিবর্জিত ব্যক্তির ইহকাল-পরকাল দুটোই নিবিড় তিমিরাচ্ছন্ন। জন্মের পর একটি শিশু মানব সন্তান হিসেবে চিহ্নিত। কোনো একটা সংস্কার হলেই সে হয়ে যায় ধর্মীয়ভাবে চিহ্নিত ধর্মীয় এবং বিদ্যার আবেশ তাকে মানুষ হতে সাহায্য করে। সঠিক ধর্মচর্চায় তার মধ্যে পশুত্ব বিলুপ্ত হয়। এর পরের ধর্ম চর্চায় সে হয়ে যায় অতি মানুষ। অতি মানুষ যখন গভীরভাবে ধর্মচর্চা করে তখন সে রূপান্তরিত হয় মহামানবে। ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষ কিন্তু ধর্মের জন্য। প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি নৈতিকতার বাহক, সত্যাশ্রয়ী, অহিংস, নির্লোভ এবং পরশ্রীকাতরতা মুক্ত। ধর্ম কিন্তু আপেক্ষিক তত্ত্ব ভিত্তিক নহে। প্রত্যেক ধর্মের অটুট বিশ্বাস, একজন মাত্র স্রষ্টাই এর নিয়ন্ত্রক। ধর্মের আপেক্ষিক বিশ্লেষণে উদ্ভব ঘটে বিভিন্ন স্ব-কপোলকল্পিত তত্ত্ব। যাহা বিভিন্ন অসামাজিক হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্ম দেয়। বাংলাদেশে এই প্রবণতা অনেক বেশি। পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিক ব্রার্ট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন, Religion is not Theology but Practice (আমল)। অর্থাৎ ধর্ম যুক্তি-তর্ক বা ব্যাখ্যায় সীমাবদ্ধ রাখার জিনিস নয়, শুধুমাত্র আমলের মধ্যে পরিব্যাপ্ত। ধর্ম শাশ্বত শৈবালিনী, অনির্বচনীয় আপেক্ষিক এবং স্বয়ং স্রষ্টা কতৃক সৃষ্ট বলেই ধর্মের অবমাননাকর কোনো কিছু উক্তি কাল্পনিক মাত্র। ধর্ম স্ব-মহিমায় মহিমান্বিত। ধর্মের অবমাননার প্রয়াস অবান্তর। এটি পুঁজি করে একটি স্বার্থবাজ দল বার বার এই শান্তিপূর্ণ দেশে অশান্তির আগুন প্রজ্জ্বলিত করেছিলো।

মহান স্রষ্টার সৃষ্টি-ক্যারিশমা আমাদের জ্ঞানাতীত। আলো-আঁধার, কালো-ধলো, ধনাত্মক-ঋণাত্মক, ভালো-মন্দ, আগুন-পানি, সুখণ্ডঅসুখ এগুলোর মধ্যেই একটা অদৃশ্য সমন্বয় ঘটিয়ে তাঁর সৃষ্টি রহস্যকে আমাদের কাছে চির রহস্যময়ই রেখেছেন।

জীবশ্রেষ্ঠ মানুষ হলো সর্বদিক থেকেই কালের নিয়মে সসীম, অপর দিকে স্রষ্টা অনন্ত, অসীম, প্রেমময়। সসীম হয়ে অসীম সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা অর্জনের চিন্তা যেমন : বামুন হয়ে চাঁদ ধরার চিন্তাও তেমন। কালের নিয়ম অতিক্রম করার সাধ্য কারো নাই। অর্থাৎ মানুষের সাধ্যাতীত।

বিশ্ব আজ সামগ্রিকভাবে অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কোথাও জাতিগত দাঙ্গার অস্থিরতা, কোথাও ক্ষমতা নিয়ে দাঙ্গা। আবার কোথাও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িজনিত দাঙ্গা। সকল ধরনের দাঙ্গার-ই নিরসন করতে পারে পারস্পরিক সহিষ্ণুতা, অহিংসা এবং কোনো রূপ ধর্মীয় আপেক্ষিতামুক্ত থাকা। আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রভাবে ধর্ম জয়ী হলে মানবতা বিপন্ন হয়, আবার মানবতা বিজয়ী হলে ধর্ম পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়।

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও লেখক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়