প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ অনেক দূর এগিয়ে এনেছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি বাংলার কা-ারী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বিজয়ের ৫০ তম বছর পেরিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দরবারে। আমাদের অর্থনৈতিক অর্জন সমূহকে জনগণের সেবার দ্বার গোড়ায় পৌঁছাতে হবে, তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র্য হ্রাস করণের ক্ষেত্রে আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছি।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। যুদ্ধ বিধ¦স্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস। সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে এটি একটি বড় অর্জন। আমাদের এটি সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে, যেটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ পূর্বক সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
বিজয়ের গত ৫০ বছরে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সফলতা সমূহ হচ্ছে : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ ও ২য় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বিবেচনাধীন, পদ্মা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু-১ বাস্তবায়ন ও দ্বিতীয় সেতু পরিকল্পনাধীন, ঢাকা মেট্রোরেল বাস্তবায়ন ও পাতাল রেল পরিকল্পনাধীন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর সহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার মতো হাজারো প্রকল্প চলমান আছে। শিক্ষাখাতে শতভাগ ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ, নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান বর্তমান সরকারের অগ্রগতির অন্যতম নিয়ামক। এছাড়াও ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও শিশু শিক্ষার্থীর হার ৯৭.৭ ভাগে ঊন্নীতকরণ। এছাড়াও শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১২ প্রণয়ন ও গঠন করা হয়েছে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।
স্বাস্থ্য খাতের অর্জন সমূহ : আমাদের স¦াস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় অর্জন টিকা খাতে। চলমান করোনার মধ্যেও শিশুদের টিকা দান কর্মসূচীতে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম আদর্শ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল ও জেলা পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধন করেছে। স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ১২ মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও নিয়োগে দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারেরও বেশি দক্ষ জনবল অর্থাৎ নার্স ও ডাক্তার।
তথ্য প্রযুক্তিতে অর্জন সমূহ : ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে আনা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টারের আওতায়। টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৩৭ লাখ, ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখের মত, সরকারের সমুদয় মন্ত্রণালয়কে আনা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির আওতায়। বর্তমানে আমরা ৪এ প্রযুক্তি থেকে ৫এ প্রযুক্তিতে প্রবেশ করেছি। অতি সম্প্রতি পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন করেছে রাষ্ট্রীয় টেলিটক কোম্পানী।
বিদ্যুৎ খাতে অর্জন সমূহ : বর্তমান সরকারের দূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে এ খাতে অভূতপূর্ব সফলতা এসেছে। বিরামহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ২৫২৩৫ (মেঃ ওঃ) বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছে, যা বর্তমান চাহিদার বেশি।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় অর্জন সমূহ : ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫ জেলায় বিদ্যমান ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১ জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত হয়েছে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন ২০১২-এর খসড়া।
শিল্প ও বাণিজ্য খাতে অর্জন সমূহ : বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে হাউজিং, জাহাজ ভাঙ্গা ও নির্মাণ শিল্প, ঔষধ শিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, সফটওয়ার শিল্প, আউটসোর্সিং শিল্প, যা বর্তমানে বিশ্ব বাজারে আমাদের বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্জন সমূহ : সমাজের অবহেলিত দুঃস্থ, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী সহ অন্যান্য খাতে সরকার ব্যাপকভাবে ভাতা প্রদান করছে। এছাড়াও গৃহহীনদের মাঝে ভূমি ও গৃহ প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধিসহ আরও অনেক আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তামূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অর্জন সমূহ : বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ যাবৎকালে শান্তি মিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অন্যতম।
যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন সমূহ : উন্নত রাষ্ট্র গঠনে যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা সর্বাগ্রে। তাই আমাদের সরকারও এই খাতের প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়ন করছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু, এমআরপিটি, কর্ণফুলি টানেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল লাইন প্রকল্প সমূহ।
৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের বাংলার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা বর্তমান প্র্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে র্দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যা এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমুখী শিল্পায়ন, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধি, সামরিক খাতের উন্নয়ন সহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে আমাদের অগ্রগতি।
সবশেষে আমরা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহবানে সাড়া দিয়ে আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করি।
লেখক ও কলামিস্ট : মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার, হেড অব অপারেশন, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম।
ই-মেইল : সংযধযহবধিুসধুঁসফবৎ@মসধরষ.পড়স