প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
সড়কের প্রতি নির্মম আচরণ!
গাছের প্রাণ থাকা সত্ত্বেও সে নিরীহ ও নির্বাক। পেরেক ঠুকে এই গাছে নানান ধরনের বিজ্ঞাপন সাঁটানো এক শ্রেণীর অপরিণামদর্শী মানুষের কাজ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থাগ্রহণ করে কিংবা সরকারি কোনো উদ্যোগ দ্বারা গাছের প্রতি এমন আচরণ সাধারণত প্রতিরোধ করা হয় না। তবে বৃক্ষপ্রেমী বিরল প্রজাতির কোনো কোনো মানুষ কোথাও কোথাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পেরেক তুলে বিজ্ঞাপন সরিয়ে গাছকে স্বস্তি দেয়।
|আরো খবর
আমাদের সড়কগুলোও গাছের মতো নিরীহ, নির্বাক ও প্রাণহীন। সেজন্যে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে এসব সড়কের প্রতি মানুষের আচরণ থাকে নির্মম। যখন তখন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি ও গর্ত করতে অনেকেই ভাবে না। গাছে পেরেক ঠুকতে বিবেকের সম্মতি লাগে, যে সম্মতির তোয়াক্কা কেউ করে না। আর যে কোনো সড়কে গর্ত সহ অন্য কিছু করতে হলে অনুমতি লাগে, কিন্তু শতকরা প্রায় ৯০ জন সে অনুমতির প্রয়োজন অনুভব করে না। যখন তথন সড়কে যা ইচ্ছা তা-ই করার চেষ্টা করে। আমাদের সড়কগুলোর নগণ্য অংশই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। সড়কে নেই কোনো পাহারাদার। সেজন্যে সড়কগুলো থাকে অরক্ষিত। তবে সড়কগুলোর মালিকানা আছে, সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে। যেমন-সড়ক ও জনপথ (সওজ), রেলওয়ে, এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর), সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি। সড়কগুলোর মধ্যে যেগুলো হাইওয়ে হিসেবে পরিচিত, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশে থাকে হাইওয়ে পুলিশ। সেজন্যে ওই অংশে সড়কের নিরাপত্তা, যান ও জনের নিরাপত্তা হয় অনেকটাই নিশ্চিত। এছাড়া সড়কগুলোর ৯৯ শতাংশই থাকে নিরাপত্তাহীন।
সড়কগুলো নিরাপত্তাহীন বলেই নির্মম আচরণ করতে মানুষের বিবেকে বাধে না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণের জন্যে প্রয়োজন অনুভূত হয় না। সড়কের মধ্যে রেল সড়ক ও সওজ-এর সড়কগুলো গুরুত্বের দিক থেকে বেশি অগ্রগণ্য। তারপরও দুঃসাহসী (!) মানুষ এসব সড়কের প্রতি নির্মম আচরণ তথা যা ইচ্ছে তাই করতে পরিণাম ভাবতে চায় না। সড়কের পাশ দখল, স্থাপনা নির্মাণ, সড়কের ওপর ও নিচ দিয়ে পাইপ স্থাপন তো হরহামেশাই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এ অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা ও বিলম্বের কারণে অপরাধীদের অনেক উদ্দেশ্যই সাধন হয়ে যায়।
বোরিংয়ের মাধ্যমে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ ছিদ্র করে পাইপ ঢুকিয়ে বালু/ভূমি দস্যুরা তাদের অনেক উদ্দেশ্য সাধনের পর রেল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তারা পাইপ অপসারণ করলেও অপরাধীদের ধরতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে সংক্ষিপ্তভাবে চাঁদপুর থেকে ঢাকা যাতায়াতের অন্যতম পথ বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়কে এক শ্রেণীর মানুষের কুনজর পড়েছে। তারা বাবুরহাট থেকে মুন্সিরহাট পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত পাইপ বোরিং করে সড়কের নিচ দিয়ে স্থাপন করেছে। এতে সড়কটি দেবে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সওজ (সড়ক ও জনপথ) কে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।