প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০
এমনিভাবেই বিশেষ দিবস উদ্যাপন করা দরকার
আমরা সব সময় দেখে থাকি, যে কোনো বিশেষ দিবস উদ্যাপনে আমরা সাধারণত আনন্দে অবগাহন করি, এমনকি আনন্দের আতিশয্যে সীমা লঙ্ঘন করি। পবিত্র ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে যাদের সামর্থ্য আছে তারা নূতন পোশাক কিনে, সুস্বাদু খাবার খায়, ঘুরতে যায়, সংগীতের মূর্ছনায় হারিয়ে যায়, এমনকি উন্মত্ততা প্রদর্শন করে, উৎকট আনন্দে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, ছায়াছবি দেখে সময় কাটায়, মাদক গ্রহণ করে অসংলগ্ন আচরণ করে, বেহায়াপনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়-আরো কতো কী! আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা বিভিন্ন উৎসবে অন্যের আনন্দ দেখে কষ্ট পায়, হতাশা অনুভব করে, নীরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়। অথচ ধর্মীয় উৎসবসহ সকল উৎসব ও বিশেষ দিবসে সীমিত আনন্দের পাশাপাশি স্বষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, কারো প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ, সেবামূলক কর্মসূচি পালন, আনন্দবঞ্চিত বা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণসহ নানা সুন্দর আয়োজনে উক্ত উৎসব ও বিশেষ দিবসগুলো উদ্যাপনের যথার্থতা প্রতিপন্ন হয়। এমনটি সকলে অনুধাবন করে না বলে আনন্দ উদ্যাপনের আতিশয্যে তথা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়।
গত ১ জুলাই ছিলো নূতন রোটারী বর্ষ ২০২১-২২-এর প্রথম দিন। এটি আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংগঠন রোটারী ইন্টারন্যাশনালের আওতাধীন সারা বিশ্বের হাজার হাজার রোটারী ক্লাবগুলোর জন্যে অত্যন্ত আনন্দঘন দিন। এ দিনটি উদ্যাপনে আনন্দ র্যালী বের করা, বৃক্ষরোপণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের গতানুগতিক কর্মসূচি পালনের চিত্র এক সময় দেখা যেতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোটারী বর্ষের প্রথম দিন উদ্যাপনে উক্ত গতানুগতিকতা পরিহারের প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এবার নূতন রোটারী বর্ষের প্রথম দিন চাঁদপুর রোটারী ক্লাব এমন ইতিবাচকতা প্রদর্শন করেছে। করোনা মহামারীতে লকডাউন চলার কারণে জনসমাগম এড়াতে সত্যিকারের মানবসেবামূলক কিছু কাজ করেছে, যা অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক।
গত ১ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার নূতন রোটারী বর্ষ (২০২১-২০২২)-এর প্রথম দিনে চাঁদপুর রোটারী ক্লাব ২ জন দরিদ্র ব্যক্তির কর্মসংস্থানে ২টি রিকশা ভ্যান, প্যারালাইজ্ড বৃদ্ধ ব্যক্তির জন্যে ১টি হুইল চেয়ার এবং একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে প্রয়োজনীয় পুঁজি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ওইদিন সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরের কবি নজরুল সড়কস্থ চাঁদপুর রোটারী ভবন প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের অনারারী মেম্বার জিল্লুর রহমান জুয়েল। তাঁর সাথে ছিলেন প্যানেল মেয়র অ্যাডঃ হেলাল হোসাইন, কাউন্সিলর ইউনুছ শোয়েব, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের নবাগত সভাপতি শাহেদুল হক মোর্শেদ ও সেক্রেটারী অ্যাডঃ পলাশ মজুমদার, ক্লাবের সাবেক সভাপতি, সাবেক সচিব ও সদস্যবৃন্দ।
আমরা মনে করি, যে কোনো উৎসব, বিশেষ দিবস উদ্যাপনে আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, ছোট-বড় সেবামূলক কর্মসূচি পালন, আনন্দ ভাগাভাগি করার প্রয়াসেই নিহিত থাকে প্রকৃত সার্থকতা। এছাড়া উৎসব বা বিশেষ দিবসকে স্মরণীয়, অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করার জন্যে চমকপ্রদ জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করা যেতে পারে। আনন্দের নামে উন্মত্ততা, বিশৃঙ্খলাসহ যাবতীয় নেতিবাচক ও প্রদর্শনেচ্ছামূলক কর্মসূচি পরিহারে উৎসব বা বিশেষ দিবসকেন্দ্রিক গতানুগতিকতা বর্জিত হতে পারে বলেও আমরা মনে করি।