প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২১, ০০:০০
যে কোনো দেশের মোট আয়তন যতোটুকু, তার ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এমনটি থাকলেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি দেশ যথার্থ ভূমিকা রাখার উপযোগিতা লাভ করে। এটাই যখন অবধারিত সত্য, তখন আমাদের বাংলাদেশের মোট আয়তনের মাত্র ১৬ ভাগ বনভূমির অস্তিত্ব থাকাটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। তাই বাংলাদেশকে সুস্থ, স্বাভাবিক এবং বাসোপযোগী করে রাখতে হলে বনায়নের কোনো বিকল্প নেই। এই বনায়ন হচ্ছে বন ব্যতীত অন্যভাবে ব্যবহৃত জমিতে বৃক্ষরোপণ প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া সম্পাদন বা বাস্তবায়নে কাজ করে সরকারের বন বিভাগ। এছাড়া বিদ্যমান বন সংরক্ষণেও বন বিভাগ প্রধান ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের সকল জেলা পর্যায়ে বন বিভাগের অবস্থা কেমন সেটা অনুধাবনের জন্যে চাঁদপুর জেলার দিকে তাকালেই যথেষ্ট। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় যে দুটি শীর্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার একটি হচ্ছে বন বিভাগকে নিয়ে। এর শিরোনাম হয়েছে ‘চাঁদপুর বন বিভাগে ফলদ বনজ অনেক চারা নেই, বজ্রপাত থেকে বাঁচার তাল গাছের চারাও নেই ॥ তিন উপজেলায় অফিসার নেই ৪ বছর’। এ সংবাদে ইউএনবির চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি দেলোয়ার আহমেদ সরেজমিন অভিজ্ঞতার আলোকে যা লিখেছেন, তা পাঠ করে যে কেউ দুঃখিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। অনেকে স্বগতোক্তিতে হয়তো বলেই ফেলেছেন, এমন যদি হয় বন বিভাগের অবস্থা, তাহলে সুষ্ঠুভাবে বনায়নের কী উপায় হবে?
সত্যি কথা বলতে কি, মুখে মুখে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে অনেকেই বনায়নের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে বনায়নের অবস্থা দুঃখজনক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বনায়নের কাজটি হয় লোক দেখানো ও ফটো সেশনের জন্যে। বনায়নের নামে রোপিত বৃক্ষের চারার যত্ন করার কাজটি সর্বোচ্চ প্রায় ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই হয় না। বনায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে বনায়নে উদ্বুদ্ধকরণে সরকারের যে বিভাগটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে সেটিই তো হচ্ছে বন বিভাগ। সে বন বিভাগ যদি জনবল সঙ্কটসহ নানা রূপ দৈন্যদশায় ভোগে, তাহলে বনায়নের কাজটি সুষ্ঠুভাবে না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
চাঁদপুর জেলা বন বিভাগে মাত্র কয়েক রকমের ফলদ ও বনজ গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো অতীব সাধারণ। বজ্রপাত থেকে রক্ষার জন্যে নেই তাল গাছের চারা, নেই বিভিন্ন জাতের আম, বরই, লিচু, কাজী পেয়ারা, নারিকেল, জলপাই, আমড়া, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, ডেউয়া, বেতুইন, নুইম্বা, কাউ, লইসহ আরো কিছু গাছের চারা। এখানে কেবল অর্জুন, আকাশমণি, বেলজিয়াম ও মেহগণি ব্যতীত রেইনট্রি, শিশু, সেগুন, চাম্বলসহ অনেক মূল্যবান বনজ গাছের চারা পাওয়া যায় না। আর কোনো ফুল গাছের চারা তো নেই-ই। ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, জনবল সঙ্কটে অফিসের কাজে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। জেলা অফিসের দায়িত্ব ছাড়াও তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলার। গত চার বছর যাবৎ এ উপজেলাগুলোতে বন কর্মকর্তা নেই।
চলছে বনায়নের উপযুক্ত মৌসুম। এ সময় বন বিভাগের সমস্যা-সঙ্কটের কথা জানলে হতাশার উদ্রেক হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা চাঁদপুর বন বিভাগের জনবল সঙ্কটসহ অন্যান্য সঙ্কট ও সমস্যা সমাধানে বন মন্ত্রণালয় তথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।