প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
আইন হাতে তুলে নিয়ে তবে তারা পালালো কেন ?
কেউ যদি খুন, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই করে হাতেনাতে ধরা পড়ে, তারপরও তাকে গণপিটুনি দেয়া আইনত সিদ্ধ নয়। তবুও মানুষ অসংযত উত্তেজনা-আবেগে এমন অপরাধীকে গণপিটুনি দেয়, যেটাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বড় দোষ হিসেবে না দেখে এড়িয়ে যায়। কিন্তু কোনো অপরাধের জন্যে হাতেনাতে ধরা না পড়ার পরও যদি কাউকে গণপিটুনি বা পিটুনি দেয়া হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই অনেক বড় অন্যায় ও অমানবিক কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এটাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেনো, সাধারণ বিবেকবান মানুষও আপত্তিকর কাজ বলে গণ্য করে।
|আরো খবর
এমন একটি আপত্তিকর কাজই ঘটেছে গত ২৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রুস্তমপুর গ্রামে আমিন উদ্দিনের বাড়িতে। এ বাড়ির বৃদ্ধ আবদুল মান্নানের সাত ছেলে দু মেয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান তাসলিমা বেগমকে স্বর্ণালঙ্কার চুরির অপবাদ দিয়ে প্রতিবেশীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। যেটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার)-এর নজরে আসে এবং তিনি নির্যাতিতা এই নারীর পাশে দাঁড়াতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এ নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘চুরির অপবাদে স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে বেধড়ক পিটুনি ॥ নির্যাতিতার পাশে পুলিশ সুপার’। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, আট বছর আগে তাসলিমা বেগমের বিয়ে হয়। তবে তার এ বিয়ে টিকেনি। স্বামী পরিত্যক্তা হবার পর বাবার বাড়িতেই থাকছেন। ক’মাস আগে প্রতিবেশী মোস্তফা মিয়ার ছেলে কাউসার আলমের স্ত্রীর গলার একটি স্বর্ণের চেইন হারিয়ে যায় এবং কিছুদিন আগে সেটি খুঁজেও পায়। অথচ এই স্বর্ণালঙ্কার হারিয়ে যাবার পেছনে তাসলিমা বেগমের হাত আছে অর্থাৎ তিনি চুরি করেছেন বলে তার ওপর অপবাদ দেয়া হয়। আর সেজন্যে তাকে তার ঘর থেকে ডেকে নিয়ে কাউসার আলমের ছোট দু ভাই ইয়াছিন ও মোফাচ্ছের এবং তাদের মা শামসুন্নাহার কাঠের গুঁড়ি দিয়ে বেধড়ক পিটান। তাকে উদ্ধারে ক’জন এগিয়ে গেলে তারাও পিটুনি খান। শুক্রবার রাতে গুরুতর আহতাবস্থায় তাসলিমাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পিটুনিতে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
তাসলিমাকে বেধড়ক পিটুনির ভিডিও ফুটেজ রোববার দুপুরে নজরে আসে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের। তাঁর নির্দেশে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ অ্যাকশনে যাবার আগেই গা ঢাকা দিয়েছে তাসলিমাকে বেধড়ক পিটুনির হোতারা। কথা হলো, তাদের পালাতে হলো কেন? -নিশ্চয়ই তারা অপরাধ করেছে।
হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণালঙ্কার খুঁজে না পেয়ে যদি তাসলিমাকে তার প্রতিবেশীরা চুরির অপবাদ দিয়ে পেটাতেন, তাহলে সেটা সাধারণ্যে ন্যূনতম হলেও গ্রহণযোগ্যতা পেতো। তাসলিমাকে চুরির জন্যে সন্দেহভাজন হিসেবে ভেবে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সালিস, জনপ্রতিনিধি (ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার) কিংবা বড় জোর থানা সমীপে অভিযোগ দেয়া যেতো। কিন্তু হৃত স্বর্ণালঙ্কার পুনরুদ্ধারের পর তাসলিমাকে চুরির অপবাদ দিয়ে (যিনি কিনা স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে অসহায়ত্বে ভুগছেন) পেটানোর কাজটা যতোটা না অন্যায় হয়েছে, তারচে’ বেশি অমানবিক হয়েছে। কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না। আমরা এ অমানবিক কর্মকাণ্ডে ঘৃণা প্রকাশ এবং হোতাদের শাস্তি দাবি করছি।