শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

মা ইলিশ রক্ষায় যেমন কথা তেমন কাজ হোক

অনলাইন ডেস্ক
মা ইলিশ রক্ষায় যেমন কথা তেমন কাজ হোক

পদ্মা-মেঘনায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে ২ অক্টোবর চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে (১৩ অক্টোবর-৩ নভেম্বর) ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে এই অভিযান বাস্তবায়নে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন চাঁদপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব, কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার ফজলুল হক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকত, নৌ-পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ, সমাজসেবা কর্মকর্তা (রেজিঃ) মনিরুল ইসলাম, মৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপারী প্রমুখ। সভার শুরুতে চাঁদপুরে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবারের অভিযান কঠোরভাবে পরিচালনা করা হবে এবং আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করবো। অভিযান চলাকালে কোনো জেলেকে নদীতে নামতে দিবো না। যদি কেউ আইন অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এই সময়টাতে যতোগুলো বরফ কল আছে তা বন্ধ থাকবে। লোকাল যে বাজারগুলোতে অবৈধ ইলিশ বিক্রি হয় সে বাজারগুলো আমরা মনিটরিং করবো। শুধুমাত্র বিক্রেতা নয়, রাস্তায় যদি ক্রেতাদের কাছ থেকেও ইলিশ পাওয়া যায়, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। টাস্কফোর্সের সাথে সাথে সেনাবাহিনী টিমও অবৈধভাবে ইলিশ বিক্রির ঘাটগুলোতে যেনো যায় সেজন্যে অনুরোধ করবো। ২৪ ঘণ্টাই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। জেলা প্রশাসক বলেন, কোনো জেলে, কোনো দুষ্কৃতকারী প্রশাসনকে তুচ্ছ করবে তা সম্ভব নয়। যদি করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। জনপ্রতিনিধিরা বা অন্য কেউ সহায়তা করুক বা না করুক, আমরা মা ইলিশ রক্ষা অভিযান বাস্তবায়ন করবো। যে সকল নদীর শাখা মুখ রয়েছে, সেসব স্থানে কঠোর নজরদারি করতে হবে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, দাদন ব্যবসায়ী, বরফ কল ব্যবসায়ী, মৎস্য ব্যবসায়ীদের সাথে একটু মতবিনিময় করার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও জেলেদের সাথে মতবিনিময় করবো। অভিযানকালীন চারটি জেলার সমন্বয়ে কাজ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে হবে। পুলিশ সুপার ও নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্যে এবার ‘মা ইলিশ রক্ষা অভিযান-২০২৪’ বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান। উপজেলাভিত্তিক সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করার জন্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়।

এবার মা ইলিশ রক্ষা অভিযান বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ের প্রস্তুতিমূলক সভাটি এগারো দিন আগে হয়েছে, যেটা ইতিবাচক। এ সভার পর থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে যদি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কার্যক্রম পরিলক্ষিত না হয়, তাহলে প্রস্তুতির ঘাটতি থেকে যাবে। অসাধু জেলেরা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশের কিছু অসাধু ব্যক্তির সাথে যোগসাজশ করে অতীতে জাটকা রক্ষায় দু মাসের অভয়াশ্রম এবং ২২দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালে যেসব কর্মকাণ্ড করেছে, এবারও যদি সেরকম কিছু করার সুযোগ খোঁজে, তাহলে মা ইলিশ রক্ষায় প্রস্তুতিমূলক সভায় ব্যক্ত জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতা ও দৃঢ়তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। পদ্মা-মেঘনার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেখানে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা ও বিপণন ওপেন সিক্রেটভাবে চলে। সেখানে অভিযান চালাতে গেলে জেলে ও এলাকাবাসীরা সংঘবদ্ধ সশস্ত্র হামলা চালায়। এসব সম্পর্কে জানতে সাংবাদিকদের সাথে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটির মতবিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর সর্বোপরি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সভা, সমাবেশ, মাইকে প্রচার, ভাঁজপত্র (লিফলেট), হ্যান্ডবিল ইত্যাদির ব্যাপক বিতরণের আবশ্যকতা রয়েছে। কেননা প্রচারের জন্যে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশই যথেষ্ট নয়। কারণ, এই পত্রিকাগুলো চরাঞ্চলসহ দুর্গম অঞ্চলগুলোর জেলে ও সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছে না। এক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক আইডি সহ অন্যান্য আইডি থেকে ভয়েস রেকর্ড ও সতর্কতামূলক কিছু বার্তার প্রচার অনেক কাজ দিতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিক নেতারা যে অবৈধ ইলিশ নিধনকারীদের কোনোভাবেই আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন না, সে অঙ্গীকার আদায়ে তাদের সাথে টাস্কফোর্স কমিটি কথা বলতে পারে এবং নেতাদের ভয়েস রেকর্ডও প্রচার করতে পারে। আমরা উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। আমরা চাই, মা ইলিশ রক্ষায় প্রস্তুতিমূলক সভায় তিনি যা যা বলেছেন, তা যেন অধিকাংশই কার্যকর হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়