প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
এই কৃষকের মতো বিস্ময়যাত্রা আরো অনেকের হোক
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের মাসিক বিভাগীয় পাতা 'কৃষিকণ্ঠে' ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে হুবহু ছাপার লোভ সামলাতে পারলাম না। এতে লিখা হয়েছে, কাঁচা রাস্তার ধারে আবর্জনার স্তূপ। ঠা ঠা রোদে ছায়া নেই। আপনমনে ময়লা জঙ্গল সাফ করে চলেছেন এক প্রৌঢ় কৃষক। কিন্তু কী করবেন? গাছ লাগাবেন তিনি। লোকে শুনে চলে যায়। বাধা দেয় না, সাহায্যও করে না। একা হাতে রাস্তার দুধারে ৪০০ পেঁপে গাছ লাগালেন সেই কৃষক। রাতারাতি ভাগ্য বদলালো তার। পেঁপে বেচেই দিন ফিরলো আলতাফ হোসেনের। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় ঘটেছে এই নীরব বিস্ময়ের ঘটনা। উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের জমিদার নগর থেকে বলরাম বাজার যাওয়ার রাস্তার দুই ধারে পেঁপে গাছ লাগিয়েছেন আলতাফ। এসব পেঁপে বিক্রি করছেন। তার ভাষ্যে, প্রথম ধাপে প্রতি গাছ থেকে ৫ থেকে ৭ কেজি করে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১০ মণের বেশি পেঁপে উত্তোলন করেছেন। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁপে তিনি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। খাঁ খাঁ রাস্তা এখন সবুজে সবুজময়। যতদূর চোখ যায়, শুধু গাছ। গাছে গাছে পাখি। পাকা পেঁপের গন্ধ আসে মাঝেমধ্যে। আলতাফ হোসেনের এ রকম উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেকেই।
আমরাও সাধুবাদ জানাই। আমাদের দেশে কোনো মরুভূমি নেই। দেশের সর্বত্র এমন পরিবেশ যে, মাটির গুণাগুণ বুঝে খালি জায়গায় কোনো গাছ লাগালেই সেটি বড়ো হতে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ান্তরে দিতে থাকে ফল, ফুল, পাতা, ছায়া; আর কিছু না হোক বাতাসে সরবরাহ করে মূল্যবান অক্সিজেন, আর গ্রহণ করে ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড।
আজকাল খালি জায়গা খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন ধরনের সড়কের দুপাশ একসময় পুরোটাই খালি থাকলেও এখন জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক, উপজেলা সংযোগ সড়কসহ আরো কিছু সড়কে সরকারের বন বিভাগের মাধ্যমে বনায়ন, সামাজিক বনায়ন হচ্ছে। আর বাদবাকি সড়কের দুপাশ খালিই পড়ে থাকে। এমন একটি গ্রামীণ সড়কে দিনাজপুরের প্রৌঢ় কৃষক আলতাফ হোসেন জঙ্গল পরিষ্কার করে লাগিয়েছেন ৪০০ পেঁপে গাছ। গাছগুলো ফলবতী হবার পর প্রতি সপ্তাহে পাইকারি দরে পেঁপে বিক্রি করে কমপক্ষে সাত থেকে আট হাজার টাকা আয় করছেন। এটা কম কিসে!
কথা হলো, বাড়ির নিকটে রাস্তার পাশের খালি জায়গা আলতাফ হোসেনের মতো কতোজন কৃষক কাজে লাগায়? কতোজন করে বিস্ময়যাত্রা? আমরা মনে করি, ভূমিহীন কৃষকমাত্রই আলতাফ হোসেনের মতো মানসিকতা সম্পন্ন হওয়া উচিত। এতে অসাধারণ ফসল ফলবে, সংশ্লিষ্ট কৃষকের আর্থিক সংকট ঘুচে যাবে, সচ্ছলতার কম-বেশি দেখা মিলবে, সর্বোপরি পরিবেশ সুন্দর হবে।