বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

আঃ রহিমের মতো আরো অনেকে জাগাবে বিস্ময়......

অনলাইন ডেস্ক
আঃ রহিমের মতো আরো অনেকে জাগাবে বিস্ময়......

দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তি মতে, তার সাবেক এক পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। অতএব, তার অন্যান্য আমলা-কামলা, চামচা, মন্ত্রী, আত্মীয় স্বজন, তার দলের নেতা-কর্মীদের অনেকে কেবল শত শত নয়, হাজার হাজার কোটি টাকার যে মালিক হয়েছেন সেটা ফিরিস্তি দিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। চাঁদপুর জেলায় তার এক নেতা দলীয় পদ বিক্রি, নিয়োগ ও মনোনয়ন বাণিজ্য সহ বহুবিধ অপকর্ম করে যে কতো টাকার মালিক বনেছেন সেটা তিনি নিজেও জানেন না। সেই টাকার জোরেই তিনি এখন নিরাপদে আছেন, কেটে গেছে তার অনেক বালা-মুসিবত, যদিও তার শত শত নেতা-কর্মী আছেন মহাবিপদে। কয়েক বছর আগে শেখ হাসিনার দলের সেক্রেটারী ওবায়দুল কাদেরের ভাই নোয়াখালীর এক পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জা আঞ্চলিক ভাষায় শাসক দলের নেতা-কর্মীদের অবস্থা যেভাবে তুলে ধরেছেন, তাতে ছিলো বিস্ফোরণ ও সত্যিকারের সতর্কীকরণ বার্তা। এই বিস্ফোরণের আওয়াজ দেশ-বিদেশের লোকজন টের পেলেও গণভবনের তৎকালীন বাসিন্দা শেখ হাসিনা টের না পাওয়ার অভিনয় করেছেন। তিনি সতর্কীকরণ বার্তাকে কাঙ্গালীয় বোধ করে পাত্তা দেন নি, যেহেতু কর্তৃত্ববাদী/ স্বৈরাচারী মানসিকতা, বিশেষ করে আমিত্বের অহংবোধে তিনি ছিলেন অস্বাভাবিকভাবে আচ্ছন্ন। অবশেষে যেভাবে পচা শামুকে পা কাটলেন, 'পোলাপানের মুতে' আছাড় খেয়ে নয়, একেবারে যেভাবে ভেসে গেলেন, তাতে কোনো কিছুই আর লুকানোর ব্যবস্থা করে যেতে পারলেন না। আজ তার সীমাহীন ক্ষমতা ও তার শাসনযন্ত্রের অপব্যবহারে শত শত নয়, হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ কোটি টাকা দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে। তার আমলে কী না হয়েছে! পিয়ন, ড্রাইভার শত শত কোটি টাকার মালিক বনেছে, আর বাগানের মালিরা পিছিয়ে থাকবে কেন? চাঁদপুরে খুঁজে পাওয়া গেলো এমন এক মালি, যাকে সংবাদের বিশেষ উপজীব্য করেছে গণমাধ্যম। সে ধারায় চাঁদপুর কণ্ঠেও তাকে নিয়ে পরিবেশিত হয়েছে সংবাদ। গতকাল প্রকাশিত সে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে 'চাঁদপুর জেলা পরিষদের মালি রহিমের আলিশান বাড়ি ॥ প্রকল্পের টাকা লোপাট'।

সংবাদটিতে যা লিখা হয়েছে তা পড়লে পাঠকমাত্রই চোখ তুলবেন কপালে। একটু জেনে নেই সে সংবাদটি।সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর জেলা পরিষদে ফুল বাগানের একজন সামান্য মালির চাকরি করে আব্দুর রহিম বেপারী করেছেন এক আলিশান বাড়ি, যা দেখে হতবাক এলাকাবাসী। যেনো আলাউদ্দিনের চেরাগ পাওয়ার মতো আঙ্গুল ফুলে বটগাছ বনে গেছেন। চাঁদপুর সদর উপজেলার ৩নং কল্যাণপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের পাঁচটি প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে সেই টাকা জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ারসহ বাগানের মালি ভাগ-বাঁটোয়ারা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কল্যান্দী গ্রামে জেলা পরিষদের প্রকল্পের মাধ্যমে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়নি। অথচ সেখানে প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে সেই টাকা লোপাট করার ঘটনায় স্থানীয় জাকির মিজি নামে এক ব্যক্তি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত টিম গঠন করে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। জেলা পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান মানিক, সার্ভেয়ার নাসির উদ্দিন, উচ্চমান সহকারী সায়েম পাটোয়ারীর সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিমের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্পের কাজ না করানোর সত্যতা পান। কল্যান্দী গ্রামের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে চারটি প্রকল্পের আবেদন করেন জেলা পরিষদের বাগানের মালি আব্দুর রহিম বেপারী। তার নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে প্রকল্পের কাজ না করে জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ারসহ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে একটি কাজও করা হয়নি বলে দেখতে পান। এ সময় জেলা পরিষদের মালি আঃ রহিম বেপারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নিজ বাড়ি করার জন্যে ইঞ্জিনিয়ারের সহযোগিতায় প্রকল্প দেখিয়ে টাকা এনে বাড়ির নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। তবে এই ওয়ার্ডের বাকি প্রকল্পের কাজ ও টাকার ভাগাভাগি বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।এদিকে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়, আব্দুর রহিমের বাড়ির নির্মাণ ও তার পাশে গাইডওয়াল নির্মাণের জন্যে কোনো ধরনের প্রকল্প জেলা পরিষদ থেকে দেয়া হয়নি। কল্যান্দী গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের ৫টি প্রকল্পের টাকার ভাগ পেয়ে জেলা পরিষদের মালি আব্দুর রহিম নিয়ম বহির্ভূতভাবে তার বাড়ির কাজটি করিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান মানিক জানান, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্পের কাজ না করার সত্যতা মিলেছে। তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পর এর সাথে যদি কেউ জড়িত থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। অভিযোগকারী জাকির মিজি জানান, জেলা পরিষদের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে কল্যান্দী ৪নং ওয়ার্ডে বেপারী বাড়ির সামনের পুকুরে গাইডওয়াল নির্মাণ, খোকন বেপারীর বাড়ির সামনে জনস্বার্থে টয়লেট নির্মাণ, দক্ষিণ কল্যান্দী রোডের পাশে ঘাটলা নির্মাণ, রহিম বেপারীর বাড়ির মক্তবের সামনে জনস্বার্থে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন, ৪নং ওয়ার্ডে পুকুর পাড়ে গাইডওয়াল নির্মাণ করার কথা ছিলো। কিন্তু প্রকল্পের কোনো কাজ না করিয়ে জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ারসহ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি জানান তিনি। এদিকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের সব ক’টি ইউনিটে এভাবেই প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে ইঞ্জিনিয়ারসহ টাকা ভাগাভাগি করার অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কোনো প্রকল্পের কাজ না করে ইঞ্জিনিয়ার সহ ঠিকাদার ও প্রভাবশালীদের টাকা ভাগাভাগি করে নেয়ার ঘটনা আমাদের দেশে কম-বেশি পুরানো। এক্ষেত্রে সরকারের ওপরের লেভেলে থেকে সহযোগিতাকারীদের অন্যতম হচ্ছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালনকারী ও সর্বশেষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের কুলাঙ্গার মোঃ শাহ কামাল। তিনি ভুয়া ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রণয়নের অন্যতম হোতা। পাপ তো বাপকেও ছাড়ে না। সে জন্যে তিনি এখন আটক। শেষ রক্ষা হয়নি তার। তার মতো উচ্চ পদস্থ আমলাদের ইন্ধনে ও প্রশ্রয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার ও কিছু কর্মকর্তা ড্রাইভার, পিয়ন, মালি সহ যে কোনো পর্যায়ের কর্মচারীকে ব্যবহার করে ভুয়া ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের নামে কাজ না করেই ভাগাভাগি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। চাঁদপুর জেলা পরিষদের একজন ইলেকট্রিশিয়ান চাকুরির পাশাপাশি করেন কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ এবং সে কাজে পরিচিতজনদের কাছ থেকে লাভ দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে, যে অভিযোগের প্রতিকার পেতে ঋণদাতাদেরকে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে হয়রানি করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এমতাবস্থায় সে প্রতিষ্ঠানের মালি আঃ রহিম বেপারী ভুয়া প্রকল্পের নামে নিজের আলিশান বাড়ি করা তো ছোটখাট ব্যাপার। এরচেয়ে বড়ো ব্যাপার যে ভবিষ্যতে বেরুবে সে ব্যাপারে পর্যবেক্ষক ও সচেতন মহল আশাবাদী। চাঁদপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা বিভাগের এক ফিল্ড সুপারভাইজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে করেছেন দুটি বাড়ি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দেয়ার নির্দেশটি যদি শতভাগ কার্যকর হয়, তাহলে নিম্নবেতনভুক মালি আঃ রহিম বেপারীর মতো চাঁদপুরে ও সারাদেশে আরো অনেকে বিস্ময় জাগাতে পারবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়