মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

খালগুলো পুনঃখনন ও সংস্কারে ব্যবস্থা নিন

অনলাইন ডেস্ক
খালগুলো পুনঃখনন ও সংস্কারে ব্যবস্থা নিন

আমাদের দেশে সমৃদ্ধ নৌযোগাযোগে খালগুলো ছিলো উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। বড়ো ও ছোট নদীর সংযোগ রক্ষাকারী খালগুলো দিয়ে নৌকাযোগে দেশের অভ্যন্তরে যত্রতত্র যাওয়া যেতো। এ খালগুলোর পানিতে কতো কাজ করতো মানুষ। গোসল, ধোয়ামোছা, মাছধরা, পানি সেচ দ্বারা চাষাবাদ, বৃষ্টির পানির নিষ্কাশন, পয়ঃনিষ্কাশন সহ আরো কতো কী! এটা বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে সবচে' বেশি উপলব্ধি করেছিলেন সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতায় আসা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেজন্যে তিনি তাঁর মেয়াদকালে খাল খনন, পুনঃখনন ও সংস্কারকে বিপ্লবে পরিণত করেছিলেন। এটা বেশ সাড়াও জাগিয়েছিল। আশির দশকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে এই সাড়া জাগানো কাজটিতে গুরুত্বারোপ না করে সড়ক উন্নয়নে বেশি মনোযোগী হন। এতে মানুষের জীবনে গতি আসলেও কালভার্টে ও অনুচ্চ ব্রিজে খালের মাধ্যমে নৌপথ রক্ষা না হওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয় সহ নানা বিপত্তি দেখা দেয়। এরশাদের এই ধারাবাহিকতা নব্বই পরবর্তী প্রতিটি সরকারই রক্ষা করেছে এবং সর্বশেষ শেষ হাসিনার সরকার সারাদেশে বালু সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিয়ে শুধু খাল নয়, পুকুর, ডোবা, দিঘি সহ সকল ধরনের জলাশয়ের সর্বনাশ করেছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন সর্বনাশের একটি নমুনা নিয়ে শীর্ষ সংবাদ হয়েছে। এই সংবাদের শিরোনাম হয়েছে 'খাল ভরাট : ১১ বছর ধরে জলাবদ্ধতা ॥ হুমকিতে চাষাবাদ'।

সংবাদটিতে তুলে ধরা হয়েছে বিস্তারিত। আজকের সম্পাদকীয় নিবন্ধটির কলেবর বৃদ্ধি পেলেও সংবাদটি পাঠকদের সামনে প্রায় পুরোটাই তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছি। সংবাদটির সূচনা দীর্ঘ হলেও প্রতিবেদকের আবেগ ঝরেছে তাতে। তিনি লিখেছেন, বর্ষাকালে এক সময় যে খাল দিয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের নৌকা চলাচল করতো, যে খালটিতে একসময় নদী থেকে জোয়ার-ভাটার পানি আসতো, বর্ষার পানির সঙ্গে পলি এসে বাড়তো জমির উর্বরতা, যে খাল দিয়েই সরতো আশপাশের এলাকার অতিরিক্ত পানি, যে খালটির ওপর নির্ভর করে প্রতি বছর তিন ফসলের আবাদ করতেন খালের পাশের কৃষকগণ, সে খালটি আজ খালের প্রকৃত অবয়বে নেই। চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর (সাবেক সাখুয়া ইউনিয়ন)-এর সিআইপি বাঁধবেষ্টিত পশ্চিম রামদাসদী গ্রামে অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা খাল। এটি সরকারি খাল নামেই পরিচিত। শতবর্ষী খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিল। খালটি মৃতপ্রায় এক যুগ ধরে । খালনির্ভর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ পানির যোগান হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা সরকারি খালটি রামদাসদী মৌজায় জেএল নং ৯৪ আরএস দাগ ২৭৭ সহ আশেপাশের অনেক দাগের মধ্যে অবস্থিত । মেঘনা নদীর সাথে সংযুক্ত খালটি ড্রেজার দ্বারা বালু ভরাট করার কারণে খালের (উত্তর-দক্ষিণ) সামনের একাংশে মিজান রাজের বাড়ি থেকে মেঘনা নদীর পাড় পর্যন্ত দুশ মিটারে পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে । আর বাকি অংশ নাব্যতা হারানোয় পানিপ্রবাহ হচ্ছে চরম বাধাগ্রস্ত এবং নদীর সাথে পানি প্রবাহ না থাকায় খালের বাকি অংশে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা থেকে যায় । ফলে খালের দূষিত পানি জলজ স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্যে ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের আট নং ওর্য়াডের পশ্চিম রামদাসদীতে মেঘনা নদীর পাড়ে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ২০১৩ সালে রামদাসদী আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় । কিন্তু প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তরে নির্ধারিত জায়গায় ড্রেজার দ্বারা বালু ভরাট করার সময় খালের পূর্ব পাশে কোনো সুরক্ষা বাঁধ (গাইড ওয়াল) তৈরি না করে খালটির একাংশ প্রকল্প ঠিকাদার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আঁতাত করে জোরপূর্বক রাতের আঁধারে ভরাট করে ফেলেন । এতে খালের সঙ্গে মেঘনা নদীর যে যোগাযোগ ছিল তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এখানে পূর্বে যে খাল ছিল তা এখন বোঝার উপায় নেই । এমনকি তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপুর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তৎকালীন ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ৫ আগস্ট গণপিটুনিতে নিহত সেলিম খান (বালু সেলিম) অবৈধভাবে খালের সামনের অংশে বাঁধ তৈরি করে ফেলেন, যা এখন পরিত্যক্ত । এ ছাড়া ভরাটকৃত খাল খনন না করায় অত্র এলাকায় জন্মেছে আগাছা ও গাছগাছালি।

স্থানীয় সমাজসেবক বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, শতবর্ষী খালটি খননের মাধ্যমে সংশিষ্ট এলাকার জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসন করতে হবে। এতে একই সঙ্গে ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষা পাবে। তিনি সিএস ম্যাপ অনুযায়ী জরুরিভাবে যাতে খাল খনন ও সংরক্ষণ করা হয় সেই দাবি জানিয়েছেন । এ ছাড়াও খালের মুখে যে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে তার অপসারণ চেয়েছেন। খালটির ওপর নির্ভরতার প্রসঙ্গ তুলতেই স্থানীয় পশ্চিম রামদাসদী গ্রামের কৃষক মোতালেব গাজী, উত্তম মজুমদার সহ আরো অনেকে বলেন, যুগ যুগ ধরে কৃষিকাজ করছি। জমিতে তিন পর্যায়ে আলু, শাকসবজি, ধান, পাট এবং জ্বালানি হিসেবে ধইঞ্চা ইত্যাদি চাষ করতাম । অত্র এলাকায় ফসল উৎপাদনে খালটি আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির সময় আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে বালু আবাদি জমিতে প্রবেশ করে এবং সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে । বছরের অধিকাংশ সময় ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা রয়ে যায়। গত কয়েক বছর আর তিন ফসল করা যাচ্ছে না। এমনকি শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে বীজতলা তৈরি করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ২০-২৫ ফুট চওড়া খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ কিলোমিটার । দোকানঘর বাজারের সাথে সংযুক্ত চাঁদপুর-হাইমচর সিআইপি বেড়িবাঁধের পশ্চিমণ্ডদক্ষিণ একাংশ ও দোকানঘর রামদাসদী আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়ে রহিম হাওলাদার বাড়ি, বানিয়া বাড়ি, মনা মেম্বার বাড়ি, বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল কর বাড়ি, আবদুল্লাহ মিজি বাড়ি, ইন্দ্র মোহন মজুমদার বাড়ি, আবুল জমাদার বাড়ি, খালেক মেম্বার বাড়ি, রহমান পাটওয়ারী বাড়ি, কালু পাটওয়ারী বাড়ি, মিজান খান বাড়ি হয়ে শতবর্ষী খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে মিশেছে। অত্র এলাকাবাসী এবং কৃষকগণ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা সরকারি খালটি রক্ষায় দ্রুত পুনঃ খননপূর্বক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা সরকারি খাল পুনঃখননের দাবির সাথে আমরাও একাত্ম। তবে শুধু এই খাল নয়, সারাদেশের এমন আরো যেসব খাল রয়েছে, সেসব খাল পুনঃখনন, পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের অনিবার্যতা রয়েছে বলে মনে করছি। এসব যদি না করা হয়, তাহলে দখলদারিত্বে একসময় দেশের কোনো কোনো এলাকায় খালের নিশানা থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। যেখানে নদীর ফোরশোর ল্যান্ড দখলবাজ ভূমিদস্যুদের কাছে নিরাপদ নয়, সেখানে খালের কী অবস্থা সেটা দেখতে বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই। খোদ চাঁদপুর শহরের অন্যতম লাইফলাইন বলে খ্যাত শ্রীরামদী-বিষ্ণুদী (এসবি) খালের দিকে তাকালেই অনুমান করতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়