প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে

চাঁদপুর পৌর বাসস্ট্যান্ডে আধিপত্য ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় একপক্ষ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারীর বাড়িতে (করিম পাটওয়ারী বাড়ি) হামলা করেছে। হামলার সময় দুলাল পাটওয়ারীর বাবা সাবেক গণপরিষদ সদস্য মরহুম আব্দুল করিম পাটোয়ারীর কবর ও মসজিদের লাইট ভাংচুর করা হয়। হামলায় দু প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন দুলাল পাটওয়ারীর ভাই কামাল পাটওয়ারী এবং শ্রমিক নেতা ফারুক দেওয়ান। হামলায় দুপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার পরদিন থেকে টানা ১০/১৫ দিন দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন সড়কযোগে চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যায়। ফলে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রূটে যে ক'টি বাস আসা-যাওয়া করে, তা দিয়ে এতো যাত্রীদের লোড নিয়ে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ঈদের পর থেকে টানা প্রায় ১৫ দিন প্রতিরাতে চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামমুখী যাত্রীদের ৩০ থেকে ৩৫টি বাস প্রয়োজন হয়। এই অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২/৩শ’ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যেক ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীর এই চাপ সামাল দিতে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের বাস ছাড়াও চাঁদপুর-ঢাকা ও চাঁদপুর-কুমিল্লা রুটের বাসের ওপর নির্ভর করতে হয়। ভিন্ন রুটের বাস চট্টগ্রাম রুটে সার্ভিস দেয়ার সুবাদে একটি মোটা অংকের টাকা বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক নেতা ও চট্টগ্রাম রুটের স্থানীয় কাউন্টার মালিকরা নিয়ে যায়। আর পুলিশের কেউ কেউ নেয় এই টাকা। এটাকে চাঁদাবাজিই বলা হয়। এছাড়া বছরব্যাপী চলে চাঁদাবাজি, যেটিকে স্থানীয়ভাবে জিবির টাকা বলে থাকে। এই জিবির টাকা দীর্ঘদিন ধরে ভাগাভাগি হয়ে থাকে।
শ্রমিকের ঘামকে পুঁজি করে যাত্রীদের পকেট কেটে যে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয়, সে টাকা যায় স্থানীয় প্রভাবশালী মালিকপক্ষ এবং প্রভাবশালী শ্রমিক নেতাদের পকেটে। এই চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে শ্রমিক নেতা ফারুক দেওয়ান ও মালিকপক্ষ কামাল পাটওয়ারীর সাথে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের বলে জানান সাধারণ শ্রমিকরা। এই চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৪ এপ্রিল রাতে কামাল পাটওয়ারীর সাথে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফারুক দেওয়ানের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় উভয় পক্ষের লোকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলেও ওইদিন পুলিশের উপস্থিতির কারণে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে।
জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির বাড়িতে হামলার ঘটনায় স্থানীয় এমপি সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া দুলাল পাটওয়ারী বাড়ির মসজিদ ও কবরস্থানে হামলার ঘটনায় শুক্রবার জুমার নামাজশেষে মানববন্ধন হয়েছে। আমরাও এমন ঘটনার নিন্দা জানাই। এ ঘটনার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে না গিয়ে আমরা চাঁদপুর পৌর বাস স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি নিরসনে এবং ঈদ-পরবর্তী অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের হয়রানি রোধে কঠোর পদক্ষেপ চাই। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের নিকট ট্রানজিট রুট হিসেবে চাঁদপুরের অনিবার্যতা অনেক কমেছে, আর ঈদকেন্দ্রিক চাঁদপুর পৌর বাসস্ট্যান্ডে হয়রানি বন্ধ না করা গেলে চাঁদপুর তার বাকি অনিবার্যতাটুকুও হারাবে। অভিযোগ রয়েছে, এই বাস স্ট্যান্ডে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিকতা, জবাবদিহিতা সর্বোপরি স্বচ্ছতার ব্যাপক অভাব রয়েছে। সে কারণে নিরীহ মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে কানাঘুষা, মুখরোচক কথা ও চাপা ক্ষোভ রয়েছে। এসব নিরসনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও চাঁদপুর পৌর পরিষদের সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার। এছাড়া বাস স্ট্যান্ডে তিনটি বংশের লোকজনের প্রভাব-আধিপত্য দূরীকরণের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার।