প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগান

আমরা যে কোনো নূতনকে গ্রহণে গড়িমসি করি, ইতস্তত করি, টালবাহানা করি, দ্বিধান্বিত হই, অহেতুক বিলম্ব করি। এর মাঝেও কেউ না কেউ সাহস করে নূতনকে গ্রহণ করে, নূতনের আবাহনে উজ্জীবিত হয়, নূতনের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। এমনই একজন চাষী আব্দুর রহমান। তাকে নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে একটি সংক্ষিপ্ত বিশেষ প্রতিবেদন। শিরোনাম হয়েছে ‘চাঁদপুরে রঙ্গিন বাঁধাকপি চাষে অপার সম্ভাবনা’।
সংবাদটিতে চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, চাঁদপুরের মাটিতে রঙ্গিন বাঁধাকপি চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কপি চাষীসহ কৃষি অফিস নিশ্চিত করেছে। চলতি মৌসুমে মাত্র ১০ গ্রাম বীজে কমপক্ষে ১২শ’ চারা পেয়েছে এক কৃষক। তবে বীজের দাম সহনীয় রাখা হলে আর সহজলভ্য হলে অন্যরা রঙ্গিন বাঁধা কপি চাষে আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। রঙিন বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং খনিজ পদার্থ, যা অন্যান্য কপির তুলনায় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।
সরজমিনে দেখা যায়, হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের চাষী আঃ রহমান ৬ শতক জমিতে ১০ গ্রাম রঙ্গিন বাঁধাকপির বীজ বপন করেন। ৭০-৭৫ দিনে কপিগুলো পরিপক্ব হয়ে বিক্রয়ের উপযোগী হয়। এ জাতের কপি দেখতে সুন্দর। হালকা মিষ্টি। সালাদ হিসেবেও খাওয়ার উপযোগী। পুষ্টিমানও অধিক। সবুজ বাঁধাকপির স্বাভাবিক যত্নে ফলন বেশ হয়। এটি স্বাভাবিক পরিবেশে কয়েকদিন সংরক্ষণ করা যায়। বাজারে ক্রেতার কাছে রঙিন বাঁধাকপির চাহিদা অনেক বেশি। তাই উৎসুক লোকজন সাধারণ কপির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দরে রঙিন জাতের কপি কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকরাও এ জাতের কপি চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। চাষী আঃ রহমান জানান, বৃষ্টিটুকু না হলে রঙ্গিন কপি চাষে আমি শতভাগ সফলতা পেতাম। বীজের দাম আরেকটু কম হলে ভালো হতো। কৃষি অফিসারের মাধ্যমে ৬৫০ টাকা দিয়ে কুমিল্লা থেকে ১০ গ্রাম রঙ্গিন বাঁধাকপির বীজ এনেছি। তাই প্রথমবারের মতো রঙিন বাঁধাকপির চাষ করেছি। বোঝা গেলো ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে প্রতিটি কপি ৫০-৬০ টাকা দরে পাবো বলে আশা করছি, যা সাধারণ কপির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। লোকজন রঙিন জাতের কপি কিনতে বেশ আগ্রহী। অল্প টাকা খরচ করে আমি বেশ লাভ পাবো বলে আশা করছি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে এ জাতের কপির চাষ করবো।
বাকিলা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহ পরান বলেন, উপজেলায় প্রথমবারের মতো রঙিন বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। প্রথমবার চাষ করেই সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ১০ গ্রাম বীজে প্রায় ১২শ’ চারা পেয়েছি। এর মধ্যে ২শ’ চারা বিক্রি করার পরে বাকিগুলো জমিতে রয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রথম দিকের বৃষ্টি না হলে অসম্ভব রকম ফলন আসতো। বৃৃষ্টির পরে জমিতে যে পরিমাণ বাঁধাকপি রয়েছে, আশা করি কৃষক তা বিক্রিতে কয়েক গুণ বেশি লাভবান হবে। হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিলরুবা খানম জানান, স্বাভাবিকভাবে আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রাথমিকভাবে রঙ্গিন বাঁধাকপি উৎপাদনে সফলতা দেখতে পাচ্ছি। রঙ্গিন বাঁধাকপি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, লাভ বেশি, বিক্রি বেশি। এজন্যে কৃষকগণ রঙ্গিন বাঁধাকপি চাষে আগ্রহী হলে তারাই বেশি লাভবান হবে।
হাজীগঞ্জে নূতন বা ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে সবজি চাষের ব্যাপারে চাষীদের সুনাম রয়েছে। রঙ্গিন বাঁধাকপি চাষেও হাজীগঞ্জের চাষীরা সুনাম রপ্ত করতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এ ক্ষেত্রে চাষী আঃ রহমান দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক--সেটা আমরা চাই। কারণ তিনি নূতনকে গ্রহণ করেছেন সাহস ও উদ্যমে। রঙ্গিন বাঁধাকপি চাষের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বা ধরে রাখতে হলে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (সাবেক ব্লক সুপারভাইজার)কে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আশা করি এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিংবা তার ঊর্ধ্বতনরা মনিটরিং করবেন, চাষীসহ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন, প্রণোদনা দেবেন এবং সার্বক্ষণিক পরামর্শে উজ্জীবিত রাখবেন। আমরা চাই, রঙ্গিন বাঁধাকপিই কেবল নয়, কৃষিতে নিত্যনতুন যে কোনো সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কৃষি বিভাগ আন্তরিক ও সদা তৎপর থাকবে।