প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
মানা বাধ্যতামূলক, কিন্তু না মানার শাস্তি পেয়েছে ক’জন?

কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বেপরোয়া হয়ে থাকেন, যারা অনেক কিছু মানেন না এবং না মানার জন্যে শাস্তিও উপভোগ করেন না। এমন একজন হচ্ছেন ফরিদগঞ্জের বিরামপুর শহীদ জাবেদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এবার বিজয় দিবসে তিনি ধরা খেয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। যে কারণে সংবাদের উপজীব্য হয়েছেন। চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে ‘ফরিদগঞ্জে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামের স্কুলেই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান হয়নি’।
সংবাদটিতে চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের বীর সেনানী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জাবেদের নামে প্রতিষ্ঠিত ফরিদগঞ্জ বিরামপুর শহীদ জাবেদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস পালত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা সরকারি প্রজ্ঞাপনে সুনির্দিষ্টভাবে বিজয় দিবস পালনের কথা বলা হলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ করেন নি। সরেজমিনে উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে গিয়ে শনিবার ১৬ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ক’জন শিক্ষক ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায় নি। অথচ পার্শ্ববর্তী বেশ ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া ও ক্রীড়ানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম দায়সারাভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। মহান বিজয় দিবসসহ সকল দিবসে বিধি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা সভা, খেলাধুলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার নিয়ম থাকলেও তিনি কখনোই তা করেন না। আজকের এই বিশেষ দিনে শিক্ষকদের রুম ছাড়া আর সকল রুম তালাবদ্ধ। প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম শেষ পর্যন্ত আসেন নি। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, বিজয় দিবস নিয়ে কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। সকালে বিদ্যালয়ে এসেছেন, পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষককে তার মুঠোফোনে কল করলেও বন্ধ পেয়েছেন। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান না করা দুঃখজনক। পরে অবশ্য ১১টা ১০ মিনিটে তিনি তার মুঠোফোনে কল করে তড়িঘড়ি করে একটি খেলা আয়োজনের কথা বলেন। সেই মোতাবেক তিনি আশেপাশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করেছেন।
বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য সুমন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে বিজয় দিবসের দিনে কোনো অনুষ্ঠান হয় না, তা মেনে নেয়া যায় না। অনুষ্ঠান আয়োজন বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কোনোরূপ সভারও আয়োজন করেন নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তার মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজয় দিবস সহ সকল রাষ্ট্রীয় দিবসের অনুষ্ঠান করা বাধ্যতামূলক। বিরামপুর শহীদ জাবেদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজয় দিবেসর অনুষ্ঠান না হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেখার অপেক্ষা, বিরামপুর শহীদ জাবেদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কী ব্যবস্থা নেন? কথা হলো, শুধু কি এই স্কুলে, না এরকম আরো অনেক স্কুলে বিজয় দিবস পালিত হয়নি? যদি চাঁদপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে কোন্ কোন্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজয় দিবস পালিত হয়েছে, আর কোন্ কোন্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হয়নি এ সংক্রান্ত প্রমাণসাপেক্ষ প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক লিখিতভাবে চান, তাহলে সে প্রতিবেদনটি কি তারা দুজন দিতে পারবেন? আমরা নিশ্চিত, তারা দিতে পারবেন না। কারণ, তাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশই বিজয় দিবসে ক'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কী কী কর্মসূচি পালিত হয়েছে, সেটি তদারকি বা মনিটরিংয়ের কড়া নির্দেশের আওতায় ছিলেন না। ফলে তাদের অধিকাংশজন খোশ মেজাজে ছুটি কাটিয়েছেন। এভাবে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস সহ রাষ্ট্রীয় দিবসগুলোর দিন কিছু কর্মকর্তা ছুটি কাটানোটাকেই গতানুগতিকতায় পর্যবসিত করেন। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছু রাষ্ট্রীয় দিবস পালনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সঠিকভাবে ও গুরুত্বের সাথে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানান দেয়ার তাগিদটুকু তারা অনুভব করেন না। ফলে প্রজ্ঞাপন না মানায় কারো বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানে খড়গ হস্ত হবার ব্যাপারে এমন কর্মকর্তা ও তাদের ঊর্ধ্বতনরা শৈথিল্য প্রদর্শন করেন কিংবা আইওয়াশমূলক কিছু করেন। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের অনুসন্ধান জোরালো করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।