রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বিজয়ের টেকসই ও সার্থক প্রতিফলন চাই

অনলাইন ডেস্ক
বিজয়ের টেকসই ও সার্থক প্রতিফলন চাই

‘বিজয়’ যখনই মাস হয়ে ঢোকে ডিসেম্বরে জীবন তখন রোমাঞ্চে জেগে ওঠে নতুন করে। বাঙালির জীবনে ‘বিজয়’ আজ বাহান্ন অতিক্রম করে তিপান্ন বছরে পদার্পণ করেছে। তবুও প্রতিটি বিজয় দিবস মনে হয় নতুন আশা, নতুন ভাষা নিয়ে উপনীত হয় আমাদের দ্বারে। ‘বিজয়’ আমাদের প্রাণিত করে তোলে, ‘বিজয়’ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। দুহাজার বিশ-একুশের বিজয় ছিলো করোনাকে পরাভূত করার এবং অতিমারি মুক্তির অঙ্গীকার। দুহাজার বাইশের বিজয় আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মপ্রত্যয় ফিরিয়ে দেয়। দুহাজার তেইশের বিজয় দিবস আমাদের সামনে নির্বাচনের উৎসব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গণতন্ত্রের রক্ষা কবচরূপে। বিজয়ের এই দিনে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা এবং তিরিশ লক্ষ শহিদকে, যাঁরা সেদিন অকুতোভয়ে আত্মাহুতি দিয়ে মুক্ত করে গেছেন প্রিয় স্বদেশকে। একাত্তরের মহান বিজয় আমাদের ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা এনে দিলেও স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যবোধ আজও আমাদের মনে ও মননে তৈরি হয়নি। বিজয় আমাদেরকে লাল-সবুজের পতাকা এনে দিলেও বিজয় আজও আমাদের বিভেদকে দূর করতে পারেনি। কখনো বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে, কখনো ঘোষক-পাঠক বিতর্কে আবার কখনো মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ-প্রতিপক্ষ নিয়ে বাঙালি বজিয়ে রেখেছে আত্ম কলহ ও আত্ম বিভেদ। ফলে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার নিরেট ঐক্য বাঙালির কখনও ছিল না এবং ঐক্যের মানসিকতাও কেউ লালন করে না। অথচ ‘একতায় উত্থান বিভেদে পতন’ এই আপ্তবাক্যের সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত। অনৈক্যের কারণেই আমাদের জাতীয় উন্নতি এতোকাল সুদূর পরাহত ছিলো।

আমাদের জাতীয় জীবনে আজ অনেক বড় বড় উন্নয়ন মহাযজ্ঞ সম্পন্ন হলেও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে এই উন্নয়নের সুফল সরকার ও জনগণ কেউই ঘরে তুলতে পারছে না। উভয় পক্ষেরই আফসোস শোনা যায় চারদিকে। মূল্য বৃদ্ধি ও মজুদদারির সিন্ডিকেট যেন চীনের মহা প্রাচীরে ঘেরা। ইচ্ছে হলেই তারা জনগণের নিত্য প্রয়োজনকে জিম্মি করে একেক সময় একেক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে। এটা অনেকটাই অ্যামিবা জীবাণুর অলীক পদ তৈরির মতো অপ্রতিরোধ্য। আজ ডিম তো কালকে আলু; পরশু তেল তো তরশু চিনি; এভাবেই মূল্য বাড়িয়ে চলেছে সিন্ডিকেটবাজ ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া সমাজ। এই বিজয়ের দিনে আমরা এইসব লোভী ফড়িয়া ও সিন্ডিকেটের হাত থেকে নিস্তার চাই।

বিজয়ের তিপান্ন বছরেও আমরা আমাদের মূল্যবোধের স্থায়ী বা টেকসই উন্নয়ন ঘটাতে পারিনি। তৈরি করতে পারিনি নৈতিকতার শক্ত সামাজিক বলয়। আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়লেও সুস্থ ও দেশপ্রেম সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক মানস গড়ে ওঠেনি। আমরা সুযোগের অভাবে কেউ সৎ আর কেউবা সততার খোলসে বড় বড় অপরাধী হয়ে বসে আছি। দেশকে এগিয়ে নিতে যে অঙ্গীকার দরকার আজ আমাদের মধ্যে তার ঘাটতি আছে প্রচুর। আমরা সংস্কৃতির সাথে কারণে অকারণে ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করাই। ফলে ধর্মের নামে একদিকে দুর্নীতিকে যেমন প্রশ্রয় দিচ্ছি তেমনি অন্যদিকে প্রগতির পথকে করে তুলছি অবরুদ্ধ।

বিজয়ের বাহান্ন বছর পরে এসেও আমরা নিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় বিরোধীদের সমকাতারে আনার চেষ্টা করি। কথায় কথায় পান থেকে চুন খসলেই পাকিস্তানের সাথে তুলনা করতে থাকি। আমাদের দেশবিরোধী মনোভাব এখনও প্রকট অনেকের মনে। বিশেষত ক্রীড়ার ক্ষেত্রে এখনও পাকিস্তান অনেক বাংলাদেশীর প্রিয় দল। ভাবতে অবাক লাগে, যারা আমাদের প্রায় দুলক্ষ মা-বোনকে নষ্ট করেছে, যারা আমাদের বাপ-ভাইদের রক্তে স্নান করে অট্টহাসি হেসেছে, এখনও সুযোগ পেলেই অনেক বাঙালি নিজেদেরকে পাকিস্তানিদের ভাই বলে পরিচয় দিয়ে কৃতার্থ হয়। এই বিজয়ের দিনে মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকেরা ফিরে পাক আত্মমর্যাদা, ফিরে পাক জয় বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনা। বিজয় যেখানে শোষণ আর সাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে অর্জিত হয়েছিলো একাত্তরে, আজ সেই চেতনাই ভূলুণ্ঠিত হয়েছে দুহাজার তেইশে। আমরা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজয়ের সত্যিকারের চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, সত্যিকারের বিজয়-চেতনা দেশপ্রেমকে যেমন জাগ্রত করে দেয়, তেমনি বিজয়ের চেতনায় আজ আমরা সাম্প্রদায়িকতা হতেও মুক্ত হতে চাই। কারণ সাম্প্রদায়িকতা আমাদের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পরিপন্থী। আমরা দুর্নীতিমুক্ত, সিন্ডিকেটমুক্ত মানবিক বাংলাদেশের শুভযাত্রা দেখতে চাই আজকের মহান বিজয়ের প্রাক্কালে। যে যেখানে আছে সেখানেই বিজয়ের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে উঠুক।

জয় বাংলা, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক, বিজয় সার্থক ও টেকসই হয়ে উঠুক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়