রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

খুনি অধরা থাকে না, তবুও---
অনলাইন ডেস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) এতোটা আধুনিক যে, তারা যে কোনো খুনিকে অধরা রাখে না। সেজন্যে ক্লুলেস মার্ডারের রহস্যও উন্মোচন করতে পারছে এবং কম বা বেশি সময়ে খুনিকে ধরে আইনের আওতায় আনতে পারছে। সেজন্যে পূর্বের ন্যায় লাগাতার যত্রতত্র খুনের ঘটনা ঘটছে না। তবে খুন পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, সমাজে যতো প্রভাবশালী, কুখ্যাত খুনি থাকুক না কেন, তারা পূর্বের ন্যায় ফ্রি স্টাইলে এখন আর খুন করতে পারে না। এখন যেসব খুন হয় এবং এই খুনের সাথে যারা জড়িত থাকে, তারা ছোট স্বার্থে, সস্তা উত্তেজনায় পরিণামের কথা না ভেবেই খুন করে এবং ধরা পড়ে। উদাহরণস্বরূপ বলি, সম্প্রতি হাজীগঞ্জে পরকীয়া এক প্রেমিক তার প্রেমিকার প্রবাসী স্বামীকে খুন করে দেশের ভেতরেই অনেক দূরে পালিয়ে যায়। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে র‌্যাবের জালে তাকে ধরা পড়তেই হলো। কিছুদিন আগে চাঁদপুর শহরের রঘুনাথপুর এলাকায় এক রিকশাচালক খুন হলো শুধুমাত্র তার যন্ত্রচালিত রিকশাটির প্রতি খুনির লোভ হয়েছে বলে। সবাই ভেবেছে, এই খুনি বুঝি কক্ষণোই ধরা পড়বে না। কিন্তু না, পুলিশ তাকে ধরে ফেললোই। এভাবে খুনি অধরা থাকার বিষয়টি এখন বিরল হয়ে গেছে। সে সূত্রে আমাদের বিশ্বাস, হাজীগঞ্জে খুন হওয়া অটোবাইক চালক কিশোর আরমান হোসেনের খুনিও ধরা পড়বে এবং শোকাহত মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজন ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি অনুভূত হবেই।

জানা যায়, গত ৩০ অক্টোবর সোমবার মিশুক (অটোবাইক) নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আরমান হোসেন (১৫)। সে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ডস্থ মকিমাবাদ গ্রামের মেস্তুরি বাড়ির মোঃ আব্দুল মোতালেবের দ্বিতীয় ঘরের বড় ছেলে। সে অটোরিকশা চালিয়ে বাবা-মা ও ছোট দুই ভাইয়ের জীবিকা নির্বাহ করতো। গত সোমবার রাতে আরমান নিখোঁজ হয়। এরপর আশপাশের সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে বুধবার হাজীগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি (নং-৪৫) করেন তার বাবা। অবশেষে গত সোমবার বিকেলে দোয়ালিয়া গ্রামের হাজীগঞ্জ-ফিরোজপুর সড়কের পাশে বালুর স্তূপে মিলে আরমানের মরদেহ। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা আহমেদ জানান, স্থানীয়দের কাছে দুর্গন্ধের খবর পেয়ে আমি পুলিশে খবর দিই।

পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পংকজ কুমার দে ও হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বালুর স্তূপের নিচ থেকে গলিত মরদেহটি উদ্ধার করেন। আরমানের বাবা আব্দুল মোতালেব ও মা পাখি বেগমসহ পরিবারের অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে জুতা ও পরনের প্যান্ট দেখে আরমানের লাশ শনাক্ত করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়না তদন্তের জন্যে মরদেহ চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়। নিহতের বাবা জানান, আরমানকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা লাশটি বালুর নিচে চাপা দিয়ে তার অটোবাইকটি নিয়ে যায়। আমার নিরীহ ছেলেকে কে বা কারা হত্যা করেছে তা পুলিশ তদন্ত করে বের করুক। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, পারিবারিকভাবে কারো সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমরা জানি না। ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার চাই। হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কিশোর আরমানকে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

বাস্তবতা হলো এই যে, বর্তমানে কোনো খুনের রহস্য উন্মোচনের জন্যে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের জন্যে পুলিশকে হাত-পা ঘুটিয়ে অপেক্ষা করতে হয় না। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার চলমান যুগে খুনের রহস্য ময়না তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আয়ত্তে এসে যায়। অটোবাইক চালক কিশোর আরমানের খুনের রহস্য সেভাবেই আয়ত্তে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের সোজাসাপটা হিসেবে আরমান তার অটোবাইকের জন্যেই খুন হতে পারে। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে খুনির উদ্দেশ্যে আমাদের বলতেই হবে, কোনো খুনিই অধরা থাকে না, তবুও কেনো এই খুনটি সংঘটিত করা হলো? বস্তুত খুনি কি শুধু কিশোর আরমানকে খুন করেছে? মোটেও নয়। খুনি প্রকৃতপক্ষে খুন করেছে আরমানের দরিদ্র পরিবারের ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্য ও সুখকে। এটাই বড়ো মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়