প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রাবাজারের অন্তহীন সমস্যা নিয়ে লিখেছেন চাঁদপুর কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার সোহাঈদ খান জিয়া। বাজারের প্রতিটি গলির ফুটপাত কাঁচামালের দোকান, বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মালামালের দোকানের দখলে রয়েছে। ফুটপাত নোংরা আবর্জনায় সয়লাব হয়ে পড়ে থাকে। ফলে ক্রেতা সাধারণ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষজন চলাচলের সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে বাজারে চলাচলের রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ময়লা আবর্জনার মধ্যে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে থাকে। বাজারের কয়েকটি গলিতে ছাউনির মতো পলিথিন টানিয়ে রেখে বাজারের সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। প্রায় সময় বাজারের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পিকআপভ্যান ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে মানুষজনের চলাচলে বিঘ্নসহ মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি করা হয়। বাজারের প্রত্যেকটি গলিতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসিয়ে বেচাকেনা করা হয়। এর মধ্যে কাঁচা মালামাল, পাইকারী ব্যবসায়ীদের চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনের লরিসহ ছোট ছোট যানবাহন বাজারে প্রবেশ করে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। আর এসব কারণে বাজারে আগত নারী ক্রেতাসহ মুমূর্ষু রোগী ও পথচারী জনসাধারণের চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের মালামাল বিভিন্ন গাড়ি থেকে লোড আনলোড করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় গলির মাঝে গাড়ি রেখে মালামাল গাড়ি থেকে দোকানে নেয়া হয়। বাজারে মাছ ও মাংস বিক্রির নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। মাংস ব্যবসায়ীরা বাজারের ইজারাদারদের সাথে যোগসাজশ করে যখন যেখানে মন চায় সেখানেই বসে মাংস বিক্রি করে। মাছ বেচাকেনার স্থান একেবারেই অপ্রতুল। বাজারের পানি নিষ্কাশনে ড্রেন থাকলেও পরিষ্কার না করার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই বিভিন্ন জায়গায় পানি আটকে থাকে। যার ফলে বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হয়। একটি প্রসিদ্ধ বাজার হওয়া সত্ত্বেও এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন নেই। মশা-মাছি উড়ে খাদ্য সামগ্রীর উপর গিয়ে বসে। তরকারির দোকানগুলো গলির উপর বসার কারণে একটি রিকশা বাজারের ভেতরে প্রবেশ করতে কষ্ট হয়। বাজারের মধ্যে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করে আগুন নেভাতে পারবে না। এতে দোকানপাট অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব করে দিবে। বাজারটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ আসে বাজার করার জন্যে। কিন্তু বাজারের নোংরা পরিবেশ ও চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় অনেক ক্রেতা মুখ ফিরিয়ে নেয়। বাজারে একটি টয়লেট নেই। বাজার ইজারাদার অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খাজনা আদায় করে থাকে। বাজারে কোনো পাহারাদার না থাকায় ব্যবসায়ীরা রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে গিয়ে থাকেন আতঙ্কে--কখন দোকান চুরি হয়ে যায়। বাজারটি একটি প্রসিদ্ধ বাজার হওয়ার পরও বাজারটিতে নেই কমিটি। বাজার কমিটি ছাড়া চলে আসছে প্রায় ১৪/১৫ বছর ধরে। বাজারটি নানা সমস্যার মধ্যে চলে আসলেও সমস্যা সমাধানে কাউকে আসতে দেখা যায় না।এ ব্যাপারে বাজারে আগত ক’জন ক্রেতা জানান, আগে বাজারে রিক্সা নিয়ে অনায়াসে প্রবেশ করা যেতো। এখন ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ার কারণে হেঁটে চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন ব্যবসায়ী বলেন, আগে আমরা মালামাল নিয়ে সরাসরি গাড়িতে করে দোকানের সামনে নিয়ে আসতাম। এখন ফুটপাত দখল করে ফেলায় মালামাল ক্যারিং করে দোকানে আনতে হয়। ফুটপাত দখল হওয়ার কারণে অনেক ক্রেতা আসতে চায় না। বাজারের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।
একটি উপজেলার বাজারগুলো ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। অতএব, বাজারের সামগ্রিক বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনেরই। কিন্তু সেটা এই প্রশাসন যেভাবে দেখার কথা, সেভাবে পুরোপুরি দেখতে পারে না। বহু সভা, বহু দিবস পালন, বহু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ বহু রকমের ব্যস্ততায় ইউএনওসহ অন্যান্য কর্মকর্তা থাকেন ভীষণ ব্যস্ত। এই রুটিন ব্যস্ততা কাটিয়ে কর্মকর্তাগণ উপজেলা সদর থেকে কম-বেশি দূরের বাজারসহ অনেক কিছুর সমস্যা প্রত্যক্ষ করা, অনুধাবন করা, সেই সমস্যা নিয়ে ভাবা ও সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার বিষয়ে খুব বেশি মনোযোগী হবার সময় বের করতে পারেন না। এমতাবস্থায় উপজেলা প্রশাসনের যে নির্দিষ্ট বিভাগ বাজার দেখভালের কথা, সে বিভাগের কর্মচারীরা সেটা দেখতে গিয়ে তাদের অধিকাংশজন ইজারাদার ও অনিয়মের আশ্রয়গ্রহণকারী ব্যবসায়ীসহ সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সাথে আপসকামিতায় লিপ্ত হয়, প্রকাশ্য-গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। অবস্থা এমন দাঁড়ায়--সমস্যা জিইয়ে থাকলে লাভ(!), সমস্যা সমাধানে অলাভ। এমন বাস্তবতায় ফরিদগঞ্জের প্রসিদ্ধ চান্দ্রা বাজারের অন্তহীন সমস্যা লাঘবের পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সাধন তো দূরের কথা, ব্যবসায়ী বা বাজার পরিচালনা কমিটি করে দিয়ে স্বস্তি লাভের প্রয়াস নিতে উপজেলা প্রশাসনের নির্দিষ্ট কর্তাব্যক্তিকে দেখা যায় না বললেই চলে। এমন চিত্র শুধু ফরিদগঞ্জ উপজেলায় নয়, অন্য অনেক উপজেলার অনেক বাজারের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এই চিত্র পাল্টাবার নির্দেশনা দেবে কে?