প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
গুণীজনরা যেভাবে হারিয়ে যান--

চাঁদপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবক, বিএমএ চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি ও চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ডাঃ মোঃ একিউ রুহুল আমিনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো গত বৃহস্পতিবার। ২০১৯ সালের এইদিনে তিনি ঢাকাস্থ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। পরদিন মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কাজী পাগলা গ্রামে শ্বশুর-শাশুড়ির কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, মরহুম ডাঃ মোঃ একিউ রুহুল আমিন চাঁদপুরের সকল মহলে গ্রহণযোগ্য অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে খুবই সমাদৃত ছিলেন।
|আরো খবর
ডাঃ মোঃ একিউ রুহুল আমিনের পৈত্রিক বাড়ি কুমিল্লায়। তাঁর বাবা রেলওয়েতে চাকুরির সুবাদে পোস্টিং ছিলো চাঁদপুরে। সেজন্যে চাঁদপুর বড় স্টেশনস্থ রেল কোয়ার্টারে তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। তিনি মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাজীবন শেষ করেন আক্কাছ আলী রেলওয়ে একাডেমী ও গণি মডেল হাই স্কুলে। তারপর চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বরিশাল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন এবং সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। কিন্তু চাঁদপুরের মানুষের চিকিৎসাসেবায় অধিকতর অবদান রাখতে সরকারি চাকুরি ছেড়ে পিতার প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা ফার্মেসিতে চেম্বার খোলেন এবং জেনারেল প্র্যাকটিশনার হিসেবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেন। জায়গা কিনে সুদৃশ্য ভবন-সম্বলিত বাড়ি করেন চাঁদপুর শহরের নাজিরপাড়াতে। সমাজসেবায় অবদান রাখতে যোগদান করেন চাঁদপুর রোটারী ক্লাবে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর এই ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রথিতযশা চিকিৎসক ডাঃ নুরুর রহমানের অনুপ্রেরণায় চাঁদপুর শহরের কবি নজরুল সড়কে রোটারী ভবন প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্লাবের মাধ্যমে রোটারী ইন্টারন্যাশনালের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের প্রয়োজনে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন।
তিনি পেশাগত ক্ষেত্রে সুখ্যাতি ও ব্যাপক পরিচিতির কারণে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালু করতে গিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং চাঁদপুর অঞ্চল-১-এর সভাপতি পদে অরাজনৈতিক ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে ডাঃ মোঃ একিউ রুহুল আমিনকে নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি জেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির সভাপতি পদেও অধিষ্ঠিত হন। এছাড়া বহু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হয়ে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেন।
চাঁদপুরের একজন সুধী ব্যক্তিত্ব যে ছিলেন ডাঃ মোঃ একিউ রুহুল আমিন, সেটি প্রমাণ ধরতে দীর্ঘ বর্ণনা দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ‘আজকে মরলে কালকে দুদিন, পরের দিন কেউ কাঁদবে না’ এমন গানের মতোই ডাঃ রুহুল আমিনের জন্যে এখন কেউ আর কাঁদা দূরে থাক, ন্যূনতম স্মরণও করে না। তিনি কেনো, চাঁদপুরে তাঁর সমতুল্য কিংবা তাঁর চেয়ে বেশি খ্যাতিমান অনেক গুণীজনই ক্রমশ কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছেন। আত্মীয়-অনাত্মীয় কেউ তাঁদের স্মরণে কিছুতো করেই না, নাম উচ্চারণেও কৃপণতা প্রদর্শন করেন। এমন বাস্তবতায় চাঁদপুর কণ্ঠ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চাঁদপুরের গুণীজনদের তাঁদের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ করছে ন্যূনতম সংবাদ প্রকাশ করে। এটি করতে পরিবারের পক্ষ থেকে পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে সামান্য তাগিদ দেয়ার কাজটি খুবই নগণ্য, যেটি দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।